এই বাড়িতেই জন্ম নিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এখানেই কেটেছে তাঁর শৈশব। যৌবন এবং পরবর্তীকালেও অনেকটা সময় তিনি এই বাড়িতে থেকেছেন। কখনও শিলাইদহ, কখনও শান্তিনিকেতনে বাস করেছেন, কখনও বা ঘুরে-বেরিয়েছেন দেশে-বিদেশে। কিন্তু বাড়িকে ভুলতে পারেননি। বিশ্বকবির মহাপ্রয়াণ হয় এখানেই।
ঠাকুরবাড়ির আনাচে কানাচে লেগে আছে রবীন্দ্রনাথের স্পর্শ
কলকাতার জোড়াসাঁকোয় অবস্থিত ঠাকুর পরিবারের বাড়িটি এক সময়ে ছিল আধুনিক বাংলার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। যাকে সাধারণভাবে ‘বঙ্গীয় নবজাগরণ’ বা ‘Bengal Renaissance’ বলা হয়, তার গুরুত্বপূর্ণ পীঠস্থান এটি। ১৭৮৪ সালে নীলমণি ঠাকুর এই জমি গৃহদেবতা লক্ষ্মীজনার্দন জিউয়ের নামে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে লাভ করেছিলেন বৈষ্ণবচরণ শেঠের থেকে। তিনি এখানে গড়ে তোলেন ইমারত। অবশ্য তাঁর নাতি প্রিন্স দ্বারকানাথের আমল থেকেই বাড়ির গৌরবময় অধ্যায় শুরু হয়। ঠাকুরবাড়ির রথী-মহারথীদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।
বাড়িটি এক সময়ে ছিল আধুনিক বাংলার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান কেন্দ্র
জোড়াসাঁকোর জমিতে দ্বারকানাথ তৈরি করেছিলেন ‘ভদ্রাসন বাড়ি’, যেখানে ১৮৬১ সালে রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করেন। সেটি এখন ‘মহর্ষি ভবন’ নামে পরিচিত। ১৮২৩ সালে পাশ্চাত্যের অতিথিদের জন্য দ্বারকানাথ ‘বৈঠকখানা বাড়ি’ নামে আরেকটি ভবন তৈরি করেছিলেন। গিরীন্দ্রনাথ তাতে পরিবার নিয়ে বাস করতেন। গগনেন্দ্রনাথ এবং অবনীন্দ্রনাথ সেখানে থাকতেন, শিল্পচর্চা করতেন। পরে ভেঙে ফেলা হয় ভবনটি। ১৮৯৭ সালে ‘মহর্ষি ভবন’-এর পশ্চিমে ‘বিচিত্রা ভবন’ তৈরি করিয়েছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ।
নীলমণি ঠাকুর জোড়াসাঁকোর জমি দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে লাভ করেছিলেন
স্বাধীনতার পর জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িকে অধিগ্রহণ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রবীন্দ্রনাথের শতবর্ষ উপলক্ষ্যে যাত্রা শুরু করে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬২ সালে স্থাপিত হয় রবীন্দ্রভারতী মিউজিয়াম। গোটা ঠাকুরবাড়ি জুড়েই সংগ্রহশালা গড়ে ওঠে।
মিউজিয়ামে দর্শকদের জন্য রয়েছে দ্বারকানাথ, দেবেন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথ প্রমুখের ব্যবহৃত নানা সামগ্রী। শিল্পকলা নিয়ে দুটি গ্যালারি আছে। রবীন্দ্রনাথের জীবন ও কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত কয়েকটি গ্যালারিও মুগ্ধ করবে। এছাড়াও দেশে দেশে রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণের স্মৃতি বহন করছে জাপান গ্যালারি, চায়না গ্যালারি, ইউএস গ্যালারি এবং হাঙ্গেরি গ্যালারি। ব্রাহ্ম সমাজেরও ইতিহাসের পরিচয় এই বাড়িতে পাওয়া যায়। প্রতি বছর এখানে ঘটা করে উদযাপিত হয় বর্ষবরণ, পঁচিশে বৈশাখ এবং বাইশে শ্রাবণ।
ঠাকুরবাড়ির রথী-মহারথীদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে
সোমবার এবং সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সংগ্রহশালা খোলা থাকে। প্রবেশমূল্য ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য ১০ টাকা, প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ২০ টাকা। সার্কের অন্তুর্ভুক্ত দেশের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ২০ টাকা, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৩০ টাকা। বিশেষভাবে সক্ষম দর্শক, পথশিশু এবং পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের প্রবেশমূল্য লাগে না। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শোয়ের প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা।
কোথায় কোথায় যাবেন:
ঠাকুরবাড়ির কাছেই রয়েছে কুমোরটুলি, নাখোদা মসজিদ, আর্মেনিয়ান গির্জা, মার্বেল প্যালেসের মতো বেশ কয়েকটি দর্শনীয় জায়গা।
কীভাবে যাবেন:
কলকাতার যে কোনো অংশ থেকে সহজেই ঠাকুরবাড়ি যাওয়া যায়। মেট্রোয় যেতে চাইলে গিরিশ পার্ক স্টেশনে নামতে হবে। তারপর পায়ে হেঁটে ঠাকুরবাড়ি পৌঁছতে হবে। মহানগরের সব প্রান্ত থেকেই ট্যাক্সি ভাড়া করে ঠাকুরবাড়ি যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন:
কালীঘাটে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের কালীঘাট পিলগ্রিমেজ ফেসিলিটেশন সেন্টার।এছাড়াও কলকাতায় প্রচুর হোটেল এবং রিসর্ট আছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct