নীপু গোলদার: সহনশীলতা মানে সহ্য করা, সহ্য আমরা কম,বেশি সবাই করে থাকি। সহনশীলতা শব্দ টা বলতে গেলেই, “সহনশীলতা” শব্দটার মধ্যেই যেন লুকিয়ে আছে সহ্য করার শক্তি।
আর এই সহনশীলতার কথা বলতে গেলেই প্রথমেই মা শব্দটা এসে যায়। “মা “শব্দটা খুব ছোট একটা শব্দ। মা শব্দটা এসে যায় এই কারণেই যে, মায়ের মতো সহ্য শক্তি আর কারো হয় না। মায়ের সহ্য শক্তি অসীম। যার কোন সীমা পরিসীমা নেই। মা তার সন্তান জন্ম থেকে অনেক কিছু সহ্য করে থাকে। যখন সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে, তখন থেকেই তাঁর দেহে নানা রকম কষ্ট সহ্য করতে হয়। যে কষ্টটা কেউ কোনদিন উপলব্ধি করতে পারে না। এটা এক ধরনের সহনশীলতা।
আবার সন্তান যখন পৃথিবীর আলো দেখে, তখন তার, সমস্ত দায়-দায়িত্ব ভরণপোষণ সমস্ত কিছুই মা ও বাবা সহ্য করে নেয়, এটাও সহনশীলতা।
সহনশীলতার কথা বলতে গেলে, মায়ের অনেক ঘটনা চোখে পড়ে আমাদের। মা বাচ্চাদের খাইয়ে নিজে একটু খেতে বসেছে, অমনি তখনই ছোট্ট ছেলেটা, বিছানায় বমি করে ফেলল।মা তখন মুখের খাবার ফেলে সেটাকে পরিষ্কার করতে লাগলো, এটা এক ধরনের সহনশীলতা। আবার দেখা যায়, মা নিজে না খেয়ে, তার মুখের খাবার সন্তানদের খাইয়ে দেয়। নিজে উপবাস থেকে সন্তানদের খাইয়ে শান্তি পায় একমাত্র মা। এটাও এক ধরনের সহনশীলতা। এটাতো আমি মায়ের সহনশীলতার কথা বললাম।
অন্যদিকে একজন স্ত্রীর সহনশীলতা হল, তার স্বামীর সমস্ত কিছু, অন্যায়, অপমান মুখ বুঝে সহ্য করা। এটা ও এক ধরনের সহনশীলতা।
কোন মেয়ে যখন সদ্য বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি আসে, তখন তাকে বলা হয় ,এটা তোমার সংসার। তুমি বুঝে নাও ,কথাটা ছোট হলেও, এর সারাংশ সারাজীবন মেটানো সম্ভব হয়না ।এটাও এক ধরনের সহনশীলতা।
ঘরের বউ ঘরের কাজ করবে, এটা স্বাভাবিক ।কিন্তু এই ঘরের কাজ করতে , করতে কোন স্ত্রী ক্লান্ত হয়ে পড়লে, তখন তাকে নানা রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আর এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতে, সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে ।এটাও এক ধরনের সহনশীলতা। তবে এই ঘটনা যে, সব সময় সবক্ষেত্রে ঘটবে তা নয়, এর ব্যতিক্রম দেখা যায়। অনেক বউ আছে, যারা বিয়ে করে এসে, শ্বশুরবাড়িতে কি করতে হয় ,কি করতে হয় না, তাই জানে না। কাজতো তারা করেই না, উপরন্ত পরিবারের মানুষদের শুধু অপমান আর তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধিয়ে চলেছে।আর অধিকারের দোহাই দেখিয়ে শ্বশুরবাড়িতে পড়ে থাকে। তাদের কখনো আমরা, সহনশীল স্ত্রী কিংবা বউ কোনটাই বলতে পারিনা। কারণ তার মধ্যে কোন যোগ্যতাই নেই, ভালো বউ কিংবা ভালো স্ত্রী হওয়ার। অতএব সে কখনোই সহনশীল ও হতে পারে না। সহনশীল হতে গেলে, তাকে ধৈর্যশীল হতে হবে। তাইতো আমরা বলে থাকি, “যে সয়, সে রয়”।
এটা একটা প্রবাদ বাক্য, আর এই প্রবাদ বাক্যের মধ্যেই, যেন জীবনের মূলমন্ত্র সবাইকে জানিয়ে দিয়েছ।
আমাদের সমাজে নানান ধরনের মানুষের বাস। তাই ধর্মও নানান ধরনের। আর এই ধর্ম নিয়ে আমরা দেখতে পাই, অনেক রকম লড়াই। আর এই লড়াই চলাকালীন মানুষকে অনেক বিপর্যয় মুখে পড়তে হয়। মানুষ এত লড়াই প্রতিনিয়ত দেখে চলেছে, যে তাদের সহ্য করার ক্ষমতা ও বাড়িয়ে তুলেছে। এটাও এক ধরনের সহনশীলতা।
মানুষ যে শুধু মানুষের তৈরি করা বিপর্যয়কে সহ্য করে তা কিন্তু নয়। মানুষ সহ্য করে চলেছে, নানা রকম প্রাকৃতিক বিপর্যয়। যা দেশের মানুষের, সমস্ত ব্যাপারে ক্ষতি হয়। সেটা হতে পারে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক, কিংবা সাংস্কৃতিক। আর এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় কে সহ্য করে চলেছি আমরা। এটাও এক ধরনের সহনশীলতা।
শিক্ষকরা সহনশীলতার পরিচয় অধিক দিয়ে থাকে। সেটা আমরা বুঝতে পারি। একজন ছাত্রকে ভালো মানুষ তৈরি করার দায়িত্ব শিক্ষকের হাতেই থাকে। তাই শিক্ষকদের, ছাত্রদের কাছ থেকে, নানা ধরনের ব্যবহার এর সঙ্গে নিজেকে সহনশীল করে তোলে। এটাও এক ধরনের সহনশীলতা। মানুষের সহ্য করার ক্ষমতা না থাকলে, মানুষ জীবনে কখনো উন্নতি করতে পারবে না। এমনকি নিজেকে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। মানুষের জীবনের মূলমন্ত্র “সহ্যশক্তি” হওয়া উচিত। যে শক্তি মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায় ,যে শক্তি মানুষকে আলোর পথ দেখায়, যে শক্তি মানুষকে বাঁচতে শেখায়। তাই আমাদের সবাইকে ধৈর্যশীল ,সহনশীল হতে হবে ।তাহলে আমরা জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারব। সহনশীলতা মানুষকে দৃঢ় করে, সহনশীলতা মানুষকে ক্ষমা করার মত মন তৈরি করে।জীবনে সহনশীলতা না থাকলে মানুষ কখনো অন্যের জন্য কষ্ট সহ্য করতে চাইত না।
আমরা যখন দেখি, কোন সবল ব্যক্তি দুর্বলের উপর অন্যায় করে ,আর ওই দুর্বল ব্যক্তি সহ্য করে নেয়, তখন যদি সে বলে, আমি “সহনশীল”। সেক্ষেত্রে সে ব্যক্তি ,কখনোই” সহনশীল” হতে পারেনা। আর যদি ওই দুর্বল ব্যক্তি, তার থেকে দুর্বলতর ব্যক্তির অন্যায় কে ক্ষমা করে দেয়, তাহলেই সে একজন সহনশীল মানুষ হিসাবে পরিচয় লাভ করবে। সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের সকলের মধ্যে কম, বেশি থাকে ।আর যার মধ্যে সহ্য করার ক্ষমতা অধিক থাকে, তাকেই আমরা সহনশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত করব। সহনশীলতা মানুষকে চিনতে শেখায় ,একজন ভালো মানুষ হতে সাহায্য করে। কারণ একজন ভালো মানুষ না হলে, সে কোনোদিনই সহনশীল হতে পারবে না।
সহনশীল না হলে মানুষ কখনও এগোতে পারে না। কারণ কোন কিছু করতে গেলেই ,প্রথমে যেটা আসে সেটা হল বাধা। আর বাধা অতিক্রম করতে গেলে চাই, সহ্য শক্তি। মানুষ যখন এগোতে চায়, তখন অন্য দিকের মানুষের কাছ থেকে নানারকম অহেতুক কথাবার্তা সম্মুখীন হতে হয়। আর এই অহেতুক কথাগুলোকে অতিক্রম করার জন্য চাই সহ্য ক্ষমতা বা সহনশীলতা।
আমাদের জীবনে বাঁচতে গেলে কিছু মানুষদের মধ্যে অবশ্যই সহনশীলতার প্রয়োজন ।তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ,শিক্ষক ,ডাক্তার সমাজসেবক। একজন শিক্ষকই পারে, একজন প্রতিষ্ঠিত ভালো মানুষ তৈরি করতে। তেমনি একজন ডাক্তার আমাদের কাছে ভগবানের সমান। ঈশ্বর আমাদের জীবন দেয় ।তেমনি ডাক্তার আমাদেরকে, অসুস্থ হলে, নতুন জীবন দিয়ে বাঁচিয়ে তোলে। তাই তাদেরকে অবশ্যই সহনশীল হতে হবে।আর সমাজসেবক, সমাজের ভালো-মন্দের দায়িত্ব গ্রহণ করে ।তাই তাদের ও সহনশীল ব্যক্তি হতে হবে। তা না হলে, আমাদের সমাজ কখনো উন্নত হবে না, সাধারণ মানুষ কখনো ভালোভাবে বাঁচতে পারবেনা।
সহনশীলতার কথা বলতে গেলে, যতই বলি না কেন , কম থেকে যাবে। তবে একটা কথাই বলব ,আমাদের সহনশীল হতে হবে ।
মানুষের সঙ্গে মানিয়ে চলাই ,মানুষের জীবন। আর জীবনকে ভালোভাবে চালিত করার জন্য চাই ধৈর্য শক্তি। একজন ধৈর্যশীল ব্যক্তি হতে পারে, একজন “সহনশীল “ব্যক্তি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct