বাংলা ইসলামী সাহিত্যের অগ্রপথিক ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলনের অগ্রদূত, দূরদর্শী ইসলামী চিন্তাবিদ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী ব্যক্তিত্ব মাসিক মদীনা সম্পাদক হযরত আল্লামা মাওলানা মুহিউদ্দীন খান সাহেব গত ২৫ জুন, ২০১৬ ইন্তেকাল করেছেন।
ষাট বছরব্যাপী তাঁর কর্মজীবন ও অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। অনুপ্রেরণা যোগাবে মানুষকে যুগের পর যুগ। ৮১ বছর বয়সে তাঁর ইন্তেকাল হয়। ১৯৫৫ ও ১৯৫৬ সনে তিনি মাদ্রাসা-ই-আলীয়া ঢাকা থেকে কামিল হাদিস ও কামিল ফেকাহ পাস করেন।
হযরত মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (রহ.) ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এক বিশাল ইসলামী ব্যক্তিত্ব। জ্ঞান সাধনা, ইসলামী শিক্ষা বিস্তার, জনসেবা, ইসলামী রাজনীতি, সাহিত্য ও সাংবাদিকতা, আধ্যাত্মিক সাধনাসহ সর্ব ময়দানে তিনি কাজ করেছেন, অবদান রেখেছেন। তাঁকে একজন পূর্ণাঙ্গ ব্যক্তিত্ব বলা চলে।ৎ উপমহাদেশের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় আলেমকে তিনি পেয়েছিলেন উস্তাদ হিসেবে। তাঁরা হলেন শায়খুল ইসলাম আল্লামা জাফর আহমদ উসমানী (রহ.), হযরত আল্লামা মুফতী সৈয়দ আমিনুল এহসান মুজাদ্দেদী (রহ.), বিখ্যাত সাহিত্যিক হযরত আল্লামা আবদুর রহমান কাশগরী (রহ.) প্রমুখ। তাঁর আধ্যাত্মিক মুরশিদ ছিলেন হাফেজুল হাদীস আল্লামা আবদুল্লাহ দরখাস্তী (রহ.), আল্লামা সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী (রহ.) ও শায়খুল হাদীস আল্লামা আবদুল মোমিন হবিগঞ্জী। আল্লামা মুফতী আমিমুল এহছান মুজাদ্দেদী (রহ.)-এর কাছ থেকেও তিনি হাদীস, তাফসীর ও ফেকাহ শাস্ত্রের সাথে আধ্যাত্মিক ময়দানের শিক্ষা লাভ করেন। তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন ইসলামের প্রচার-প্রসারের জন্য। বাংলা ভাষায় পবিত্র কুরআন শরীফের তাফসীর তিনি জাতিকে উপহার দেন। ৮ খণ্ডে সমাপ্ত বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘মাআরেফুল কুরআন’ নামক উর্দু তাফসীরের তিনি অনুবাদ করেন যা ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত হয়। সৌদি আরব থেকে এটি সংক্ষিপ্ত আকারে ১ খণ্ডে প্রকাশিত হয়। আল্লামা বদরে আলম মিরেঠী (রহ.) কর্তৃক লিখিত হাদিস সংকলন ‘তরজুমানুসসুন্নাহ’র অনুবাদও তিনি করেন। মুসলিম শরীফ থেকে সংকলিত নির্বাচিত হাদিসের একটি উর্দু অনুবাদও তিনি বাংলায় তরজুমা করেন। যা প্রথমে মাসিক মদীনায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়। হযরত মাওলানা মুহিউদ্দীন খান (রহ.) বাংলা ভাষায় সবচেয়ে বেশী সীরাত গ্রন্থ অনুবাদ করেন। বাংলাদেশী আলেমদের মধ্যে এ বিষয়ে তিনি অগ্রপথিক। আল্লামা শিবলী নোমানী (রহ.) ও আল্লামা সৈয়দ সুলাইমান নদভী (রহ.) লিখিত বিখ্যাত সীরাত গ্রন্থ ‘সীরাতুন্নবী’ এর অনুবাদ করেন তিনি। শায়খুল হাদীস আল্লামা যাকারিয়া কান্দলভী (রহ.) লিখিত শামায়েলে তিরমিযীর উর্দু অনুবাদ ও ব্যাখ্যার বাংলা অনুবাদ করেন তিনি। মাসিক মদীনায় তিনি ৫০ হাজারের বেশী প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। ফেকাহ্, হাদীস, তাফসীর, সীরাত, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ের প্রশ্নের উত্তরগুলো ‘সমকালীন জিজ্ঞাসার জবাব’ নামেও প্রকাশিত হয়। ‘এহইয়ায়ে উলুমুদ্দীন’ সহ হযরত ইমাম গাজ্জালীর (রহ.) বেশ কয়েকটি গ্রন্থও তিনি অনুবাদ করেন। আলেম সমাজের ইতিহাস সংক্রান্ত একটি বড় বইও তিনি প্রকাশ করেন। এ পর্যন্ত দুই শতাধিক মৌলিক ও অনুবাদগ্রন্থ তিনি পাঠকদের উপহার দেন।
আরবী জানা ও বুঝার জন্য আরবী-বাংলা ও বাংলা আরবী অভিধানের গুরুত্ব অনেক বেশী। তাই তিনি ‘আল কাউসার’ নামক অভিধান রচনা, সম্পাদনা ও প্রকাশ করে এ শূন্যতা পূরণ করেন। এলমে তাছাওউফের উপর কয়েকটি মৌলিক গ্রন্থও তিনি প্রকাশ করেন। শত শত নয় হাজার হাজার লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক, সাংবাদিক প্রবন্ধকার তার চেষ্টা, পরামর্শ ও পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠে। লাখ লাখ পাঠক তৈরীর পেছনেও তাঁর রয়েছে বিরাট ভূমিকা। আল্লামা শিবলী নুমানী (রহ.) লিখিত ‘আল-ফারুক’ নামক বিখ্যাত গ্রন্থটি তিনি যুব বয়সে অনুবাদ করেন যা এমদাদিয়া লাইব্রেরী, চকবাজার, ঢাকা থেকে প্রকাশিত হয়। হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) ও তাবলীগ জামাত সম্পর্কে তাঁর একটি বই রয়েছে। ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আজীবন চেষ্টা চালান।বিশেষ করে মাসিক মদীনা সম্পাদনার মধ্যে দিয় উপমহাদেশে তিনি এক উজ্জ্বল স্বাক্ষর হয়ে থাকবেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct