তাজমুল করিম
বাংলায় বিবাহ বিচ্ছেদ, ইংরেজীতে ডিভোর্স অার অারবীতে তালাক। সবই এক মানে তবুও শুধু তালাকটাই খারাপ! বিবাহ বিচ্ছেদ কিংবা ডিভোর্সটাই ভাল। যেহেতু একটি সম্প্রদায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ কে তালাক বলা হয়। তা তালাকটা কেন খারাপ? না যেহেতু তালাকের মাধ্যমে খুব সহজেই ডিভোর্সটা হয়ে যায়। তা এতো সহজেই যখন তালাকের মাধ্যমে মুসলমাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায় তবু মুসলমানদের ডিভোর্সের পরিসংখ্যান এখনো ১ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারলো না! অার যাদের ডিভোর্সের সিস্টেম লৌহসম কঠিন তবুও তাদের ডিভোর্সের পরিসংখ্যান ৪ শতাংশের কাছাকাছি! তবুও তারা তালাক পদ্ধতি তুলে দেওয়ার জন্য পশ্চাতের কাপড় মাথায় তুলে চেঁচাচ্ছে।
অাবার কিছুজন বলছে হিন্দুদের সতীদাহ যদি উঠতে পারে তাহলে তালাক কেন উঠবে না? এদের মস্তিষ্কের সুস্থতা নিয়ে অামি খুবই চিন্তিত। সতীদাহ প্রথাতে একটা জীবিত মেয়ের প্রান যায়। তার সাথে তালাক পদ্ধতির কোন তুলনা হয়? সতীদাহ প্রথা যখন বহাল ছিল তখন এর হাত থেকে বাঁচতে কত হিন্দু মহিলা যে মুসলমান হয়ে নিজেদের রক্ষা করেছিল তার কোন হিসেব নেই। অার অপর দিকে তালাক প্রথার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে কটা মুসলিম মহিলা হিন্দু ছেলেদের পা ধরে কেঁদেছে বলতে পারেন? কজন ইসলাম ছেড়ে হিন্দু ডিভোর্স অাইনে নিজেকে সঁপে দিয়েছে? কিংবা কতজন মহিলা তালাকের কারণে হিন্দু ধর্ম গ্রহন করেছে? অাছে উত্তর? জানি নেই অার থাকবেও না। হুম তালাকের কারনে নুন্যতম কিছু মহিলা ভুক্তভুগী হয় অার্থিক দিক থেকে এটা খুবই বেদনাদায়ক। তবুও তাদেরকে অন্তত প্রানে মরতে হয়নি। অার যাদের ডিভোর্স হবে কি হবে না এটা কোর্ট যখন ১০ বছর ধরেও সমাধান করতে পারে না, তখন বহু পুরুষ অার একটা বিয়ে করার জন্য স্ত্রীকে পথের কাঁটা ভেবে পৃথীবি থেকে চিরবিদায় দিয়েছে। অন্তত ডিভোর্সের কারণে মুসলিম মেয়েদের এই ভাবে প্রান দিতে হবে না।
অপর দিকে হিন্দু ধর্মে বিধবা বিবাহ চালু হলেও বাস্তবে সেটার সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু অধিকাংশ মুসলিম বিধবা কিংবা ডিভোর্সী মহিলাদের বিয়ে হয়ে যায়। তাহলে কিসের এত দরদ মুসলিম মহিলাদের জন্য যাদের বিচ্ছেদের সংখ্যা দুশো মহিলা পিছু ১টা! অন্যদিকে মুসলিম মহিলাদের যে ৫০ শতাংশের বেশী পড়াশোনা করতে পারেনা অার্থিক অভাবে সেখানে কোনরকম দরদ কি অাছে? হোক না কয়েকটা মুসলিম ওমেনস স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি। যদি না পারেন তাহলে চুপ করুন। নিজের বউ, মা, বোনেদের অধিকার নিয়ে ভাবুন। নামেই উত্তরাধিকার অাইনে মহিলাদের সমান অধিকার দিয়েছেন। কটা মহিলা পেয়েছে এ অধিকার? যাদের একটাই কন্যা বা শুধু কন্যা তাদের কথা বাদ দিলাম। কিন্তু যাদের ছেলে মেয়ে উভয় অাছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা ছেলের নামে উইল করে। ফলে বঞ্চিত হয় কন্যা। অার মুসলিম উত্তরাধিকার অাইনে চাইলেও বঞ্চিত করা যায় না। উইল করলেও সম্পত্তির তিন ভাগের ১ ভাগ করা যায়। বাকিটা সন্তানরা এমনিতেই পাবে। এ অাইন ১৪০০ বছরের পুরানো হতে পারে তবুও অনেক বাস্তব। অাইন থাকবে অথচ বঞ্চিতও করা যাবে এমন বস্তাপচা অাইন মুসলমানদের কোন প্রয়োজন নেই।
অাসলে যারা চেঁচাচ্ছে তাদের জ্বালাটা সাধারণ মানুষ না বুঝলেও অাইনের ছাত্র হিসাবে অামি বুঝি। কোর্টে হিন্দু ডিভোর্স কেস মুসলিমদের তুলনায় কয়েকগুন বেশী। অার মুসলিম ডিভোর্স কেস খুব সহজেই সমাধান হয়ে যায়। যারা চেঁচাচ্ছে তাদের নিজ সম্প্রদায়ের অনেকে জ্বালায় জ্বলছে তবুও ডিভোর্স দিতে পারছেনা। উল্টে খোরপোস দিতে হচ্ছে বউকে। বউ পরকীয়াতে লিপ্ত তবু জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কে কিছুতেই প্রমান করা যাচ্ছে না। তবু খোরপোশ দিতে হচ্ছে। নিজেদের যদি কখনো ডিভোর্সের সম্ভবনা দেখা দেয় তাহলে একই জ্বালায় জ্বলতে হবে। মুসলিম পুরুষরা সব কিছু এতো ইজিলি করে নেবে? ওদের ছেলে কিংবা মেয়ে কেউ ডিভোর্সের কারণে বছরের পর বছর যন্ত্রনা ভোগ করবে না। ওরা জটিলতায় ভুগবেনা! এটা কি মেনে নেওয়া যায়! তাই এসো ইউনিফর্ম সিভিল কোড করি। অর্থাৎ সকলে যেন একই জ্বালাতে জ্বলতে পারে সেটার ব্যবস্তা করি! কারণ সাম্যবাদ বলে একটা কথা অাছে না! তাই জ্বলনও সমান সমান হওয়া দরকার। অাফটার অল গণতন্ত্র বলে কথা!