যে শহরে হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে বড় হয়, সে শহরের নাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া। যে শহরে মাদ্রাসার আলেম ও ছাত্রদের ভয়ে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা তাড়িয়ে বেড়ায় না, সে শহরের নাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
এই শহরে ‘মৃত্তিকা রানীর’ বাসায় বসে ক্রিকেট খেলা দেখে বহু মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, সুরবালা দিদির মেয়ের বিয়ের টাকাও নাকি জোগাড় করেছিল এই শহরের মাদ্রসার ছাত্ররাই । পাশের শহর হবিগঞ্জ, সেখানে বহু মাদ্রাসা আছে যেখানের দেয়াল ঘেঁষে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস। বহু যুগ ধরে মাগরিবের আজান আর উলুধ্বনি একসঙ্গে হয়, কোনও দিন সমস্যা হয়নি। ফজরের ঘন্টা দুয়েক আগে মাদ্রাসার ছেলেরা গায়ের জোর দিয়ে কোরআন শরীফ পড়ে কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের কারো ঘুম ভাঙে না, সমস্যা হয় না। এটাই বেঁচে থাকা। এইটাই অসাম্প্রদায়িকতা।
পবিত্র কাবা শরীফে ঠাকুর বসানোর প্রতিবাদে মন্দির ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদের বিচার হতে পারে এবং বিচার হওয়া উচিত। অনেকে দাবি করছেন মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকরা মন্দির ভাংচুর করেছেন। যদিও এখন অবদি কোন প্রমাণ কেউ দিতে পারেননি। বরং, এলাকার মুসলমান ছেলেরা হামলা থেকে হিন্দুদের রক্ষা করেছে বলে জানান ঐ গ্রামের দত্তবাড়ির ‘নীলিমা দত্ত’। গত ১ নভেম্বর বিবিসি’র সরেজমিন প্রতিবেদনে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন।
তবুও মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকদের দায়ী করে তাদের সাম্প্রদায়িক বলছেন বাংলাদেশের একটা গোষ্ঠী, অনেকে আবার সরাসরি একটা রাজনৈতিক দলকেই দায়ী করছেন। এই মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকদের আমি প্রথমেই সাম্প্রদায়িক বলতে রাজি না। কারণ, সাম্প্রদায়িকতার বীজ বাংলাদেশে ধর্মীয় আলেমরা আনেননি, সে বীজ বপন করেছেন আমার দেশের প্রধান সারির রাজনৈতিক দলগুলো । তারা ধর্ম নিয়ে প্রথমে ব্যবসা করেছেন, তারপর সু-কৌশলে ধর্মকে ব্যবহার করেছেন। এই সাম্প্রদায়িক গালি দিয়ে আর যাই হোক, অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত হয় না। এই গালি দিলে আপনি রাজনৈতিক দলগুলোকে দিন। যারা দিনের পর দিন সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখিয়ে নির্বাচনের আগে টুপি পড়ে নামাজে যায়, যারা তসবি হাতে ভোট ভিক্ষা করে, যারা গোলাপ-সুগন্ধি মেখে হেফাজতের জন্য দরদ দেখায়, যারা ইসলামের নাম দিয়ে নাশকতা চালায়, যারা ইসলামের নামে বাংলাদেশে বোমা মারে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে সাম্প্রদায়িক আছে বলে, রাজধানী থেকে সাম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠীরা প্রতিবাদ করেন। খবর দিতে পারবেন, বাংলাদেশের কোথাও মন্দির ভাঙায় মাদ্রাসার ছেলেরা ছিল, নাকি শাসকদলীয়? রাষ্ট্রের চরম অবহেলিত এই সম্প্রদায়কে সাম্প্রদায়িক বলে মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার অস্বীকার করছেন না তো.......???
বাংলাদেশের সাংবাদিক সিডর সুমন এর ফেসবুক ওয়াল থেকে