আপনজন ডেস্ক: দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজে তবলীগি জামাতের সম্মেলনে অংশ নিতে প্রায় ৩৫০০জন বিদেশি তবলীগি এসেছিলেন। তাদের অনেকেই এখন জেলবন্দি। বোম্বে হাইকোর্টে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিলেও নিম্ন আদালতের রায়ে তাদের দেশে ফেরা অনিশ্চিত। তাদের জেলবন্দি জীবন ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ইংরেজি নিউজ পোর্টাল 'দ্য ওয়্যার' এর সাংবাদিক সুকন্যা শান্তা লিখেছেন এক বিশেষ রিপোর্ট। সেই রিপোর্টের কিছু অংশ তুলে ধরা হল।
প্রায় মাস কয়েক পর হয়ে গেল তবু বহু বিদেশি তবলীগ জামাতের কর্মীদের এখনো ঘরে ফেরা হল না। আইনে বেড়াজালে আটকে জেলের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। আর কোর্টে মামলা দীর্ঘায়িত হওয়ায় তারা এখন দুশ্চিন্তায় ভুগছেন, কবে তারা দেশে ফিরবেন।
৩৫টি দেশের প্রায় ৩৫০০ জন বিদেশি দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজে তবলিগী জামাতের সম্মেলনে অংশ নিতে এসেছিলেন। তাদের অনেকেই এখন বিভিন্ন রাজ্যে ভিসা আইন লঙ্ঘনের দায়ে জেলবন্দি। বহু বিদেশি তাবলীগি আদালতের নির্দেশে মুক্তি পেলেও এখনো বহু বিদেশি আটকে রয়েছেন কোর্টের রায় না বেরনয়। তারা জানিয়েছেন জেলের মধ্যে কি দুর্দশার শিকার হতে হয়েছিল।
এই রকম এক দম্পতি ২৭ বছর বয়সী ইউরসি আমিনা। মহারাষ্ট্রের বাইকুল্লা মহিলা জেলে তার ১১ দিন কাটানোর স্মৃতি ভুলতে পারছেন না। কারণ তাকে কি নিদারুনভাবেই না ১১ দিন পার করতে হয়েছিল।
ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক ইউরসি আমিনা ও তার স্বামী রিজাল অর্ডিয়ানসা গত ২৯ ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির নিজামউদ্দিন মারকাজে তাবলীগি সম্মেলনে হাজির হতে এসেছিলেন। তারা এসেছিলেন এক চিল্লা বা ৪০ দিনের সফরে।
কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় তারা আটকে পড়েছেন। আর তাদেরকে ঘিরে এভাবে সাম্প্রদায়িক ব্যাপার হয়ে উঠবে তা তারা ভাবতে পারেননি। অন্য ৩৫০০ জন বিদেশি তবলীগীদের মতো তাদেরকেও জেলে থাকতে হয়।
এ ব্যাপারে ইউরসি বলেন, তখন রমজান মাস। রোজা বা উপবাস চলছে। হঠাৎ একদিন সব পরিবর্তন হয়ে গেল। আমাদেরকে জেলে পাঠানো হল। আর সবচেয়ে অমানবিক ব্যাপার হল প্রার্থনা করার জন্য কাপড় চাইলে তারা গা দেয়নি।বাধ্য হয়ে পলিথিন ব্যাগ মাথায় দিয়ে প্রার্থনা করতে হয়।
ইউরসি এখন চার মাসের গর্ভবতী। তাই চিন্তিত এই সন্তান সম্ভবা কে নিয়ে কি হবে। ইন্দোনেশিয়ায় রেখে আসা তিন বাচ্চার সঙ্গে ভিডিও কলিং ছাড়া গতি নেই। তাদের প্রচুর খাওয়ার কষ্ট হয়েছিল। অবশেষে তাদের দায়িত্বে থাকা ভারতীয় শাহনেওয়াজ মোমিন ইউ টিউব দেখে তাদের দেশীয় রান্না করে খাওয়ান।
ইউরসীদের মতই ছয়জন ইন্দোনেশীয় দম্পতি মুম্বাই পৌঁছান ৭ মার্চ।
বোম্বে হাইকোর্ট সম্প্রতি এক রায়ে বলেছে, তবলীগি জামাত কর্মীদের বালির পাঁঠা করা হয়েছে। তাই তাদের উপর থেকে সব এফআইআর তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল বিচারপতি নালাওয়াড়ে ও বিচারপতি এম ভি সেউলিকারের গঠিত বোম্বে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু তার পরেও তবলীগীরা আটকে রয়েছেন নিম্ন আদালতের রায় না বেরনয়। কারন বহু ক্ষেত্রে ভিসা আইন লঙ্ঘন ছাড়াও হত্যা করার প্রবণতার মামলা দায়ের যারা হয়েছে। কিন্তু খুব স্লথ গতি নিম্ন আদালতের। তাই এই সব সব বিদেশিরা কবে নিম্ন আদালতের রায়ের পর দেশে ফিরতে পারবেন তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct