আপনজন ডেস্ক: অনলাইন ইংরেজি নিউজ পোর্টাল ‘দ্য ওয়্যার’ ফের ফাঁস করে দিল দিল্লি পুলিশের বৈষম্যমূলক ভূমিকা। দ্য ওয়্যার সূত্র জানিয়েছে, বৃহত্তর দিল্লিতে আফতাব আলম নামে এক ব্যক্তি নিহত হন রোববার। তার পুত্র মুহাম্মদ সাবির এদিন রাতে তার বাবা আফতাব আলমের মোবাইল থেকে একটা ফোন কল পেয়েছিলেন। কিন্তু তার বাবা একটা কথাও বলতে পারেননি। পরবর্তী প্রায় ৪০ মিনিট ধরে সেই মোবাইলে কথাবার্তা হয়। সেসব শোনার পর ২০ বছর বয়সি সাবির জানতে পারেন তার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আফতাব আলমের দেহ গভীর রাতে উদ্ধার হয় তার নিজের একটি গাড়িতে বাঁধা অবস্থায়।
আফতাব আলমের মোবাইলে যে কথাবার্তা হয়েছিল তা দ্য ওয়্যার হাতে পেয়েছে বলে জানান ওই পোর্টালের সাংবাদিক। সেই অডিও ফাইল সূত্রে দ্য ওয়্যার জানিয়েছে, আফতাব আলমকে হত্যার সময় ঘাতকদের বলতে শোনা যায় ‘জয় শ্রীরাম বোল, বোল জয় শ্রীরাম’। এই নিউজ পোর্টাল জানিয়েছে, সাবির যখন দেখেন তার বাবার কোনও কথা পাওয়া যাচ্ছে না, বরং অন্যদের কথা পাওয়া যাচ্ছে তখন নিজের ফোনের কল রেকর্ডিং শুরু করে দেন। সেই রেকর্ডিং করা অডিও ফাইল উল্লেখ করে দ্য ওয়্যার জানিয়েছে, রাত ৮.৩৯ মিনিট নাগাদ একজনকে বলতে শোনা যায় ‘জয় শ্রীরাম বোল, বোল জয় শ্রীরাম’।
এই ঘটনা তবরেজ আনসারিকে হত্যার ঘটনা উসকে দিয়েছে। এই ভাবে জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করতে দেখা গিয়েছিল গোরক্ষকদের। এই ঘটনায় সেই হুঙ্কারের প্রতিধ্বনি ফুটে ওঠে। সাবির জানায়, কিছুক্ষণ তিনি কোনও কথাবার্তা শুনতে পাননি। তার এগারো মিনিট পর রাত ৭,৪১ মিনিটে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘শ্বাস রুখ গয়া’ (দম বন্ধ হয়ে গেছে)।
সাবির তার বাবার দেহ উদ্ধার করে কাছাকাছি বলরামপুর থানায় নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু থানা ওই ঘটনাকে মব লিঞ্চিং বা পিটিয়ে হত্যা কিংবা বিদ্বেষের শিকার বলে গণ্য করতে চায়নি। ঘটনার তদন্ত শুরু করবে বলে জানায় পুলিশ। পুলিশের কথা শুনে সাবিরে খেদোক্তি, মুসলিম হিসেব বোধহয় বেঁচে থাকার অধিকার তাদের নেই।
সাবির জানিয়েছেন, তার বাবা বুলন্দ শহরে তাদের এক বৃদ্ধ খরিদ্দারকে ছাড়তে গেছিলেন। রাত সাতটা নাগাদ সেখান থেকে বাড়ির পথে ফিরতে থাকেন্। পথে ফাস্ট ট্যাগ রিচার্জ করার জন্য তাকে বলেন। রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ তাকে ফের ফোন করেন। এরপর সম্ভবত কিছু লোকের মাঝখানে পড়েন। আর তখন মনে হয় ফোনটা পকেটেই ছিল।
সাবির আরও জানান, প্রায় ৪০ মিনিট ধরে মোবাইলের কল রেকর্ড করেন যতক্ষণ না সুইচড অফ হয়। তখন ময়ূর বিহার থানায় গিয়ে সাহায্য চান তিনি। ওই থাকার সাব ইন্সপেক্টর সঞ্জয় তাকে সাহায্য করেন। সিম কার্ডের লোকেশন দেখে জানান, শেষ লোকেশন বলরামপুর থানা এলাকায়। সেখানে পুলিশ তার বাবাকে মৃত অবস্থায় উদদ্ধার করে। যদিও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সাবির জানিয়েছেন, তার বাবার জিভে বাজে ভাবে আঘাত করা হয়েছিল। কান দিয়ে রক্ত ঝরছিল। তার মুখে বড় ক্ষতের চিহ্ন ছিল। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল এটা পিটিয়ে হত্যা। তবে, বলরামপুর থানার পুলিশ এই ঘটনাকে লিঞ্চিং না বলায় হতাশ সাবির।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct