আপনজন ডেস্ক: সুপ্রিম কোর্টের রায়ে অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর হাসপাতালে অক্সিজেনের এভাবে শিশুমৃত্যুর মিছিল থামিয়ে হিরো হয়ে উঠেছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. কাফিল খান। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের পুলিশ প্রশাসনে উপর তার আস্থা নেই। তাই ফের না জেলে ঢুকিয়ে দেবে এই ভয়ে কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। জয়পুর এখন তার ঠিকানা হয়ে উঠেছে। কিন্তু বন্দি জীবন তার কেমন কেটেছে এ নিয়ে সম্প্রতি তার এক সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আউটলুক পত্রিকার সাংবাদিক জীবন প্রকাশ শর্মা। ওই সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক কথা জানিয়েছেন ডা. কাফিল খান। বলেছেন, জেলবন্দি থাকাকালীন উত্তরপ্রদেশের পুলিশ তাকে উলঙ্গ করেছিল। আর তারপর এমন মার মেরেছে যে বসতেই পারছিলেন না।
সাক্ষাৎকারে আরও জানিয়েছেন, গোরক্ষপুরের বিআরডি হাসপাতালে ৭০জন শিশুকে বাঁচিয়ে তিনি উত্তরপ্রদেশ সরকারের বলির পাঁঠা হয়েছেন। তাই তাকে এনকেউন্টারেও মেরে ফেরতে পারে যোগী রাজ্যের পুলিশ।
তিনি কি ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার এই প্রশ্নে কাফিল খান জানান, তিনি মুসলিম বলেই তার উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালিয়েছে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ। তিনি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুরবস্থা তুলে ধরেছিলেন বলেই তাকে ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে বলে জানান।
মথুরা জেলের মধ্যে তার দিন কেমন কেটেছে এ সম্বন্ধে কাফিল খান জানান, মথুরা জেলে পাঠানোর পর প্রথম তিনদিন একটা আলাদা সেলে রাখা হয়। সেখানে কোনও জল বা খাবারের ব্যবস্থা ছিল না।শুধুমাত্র দুটো রুটি খেতে দেওয়া হয়েছিল। ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত এমন চরম জায়গায় পৌঁছায় যে যন্ত্রণায় চিৎকার করতে হয়। ক্ষমতা ছিল দাঁড়িয়ে থাকার। তখন মনে হয়েছিল যেন ঘাস বা ইট খেয়ে নেই। কোর্ট পরিবারের সদস্যদের দেখা করার অনুমতি দেওয়ার পর জেনারেল ব্যারাকে পাঠানো হয়।ওই ব্যারাকে এমন করুণ পরিস্থিতি ছিল যে তা বর্ণনা করার মতো নয়। ৪০জন বন্দি থাকার ক্ষমতা থাকলেও রাকা হয় ১৫০ জনকে। তাদের জন্য একটাই মাত্র টয়লেট। অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি।
উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর হাসপাতালে অক্সিজেনের এভাবে শিশুমৃত্যুর মিছিল থামিয়ে হিরো হয়ে উঠেছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. কাফিল খান। তবু তাকে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে ও শিশু মৃত্যুর খবর চাউর করে যোগী সরকারের দুর্নাম করার দায়ে গ্রেফতার হতে হয়েছিল। অক্সিজেন সিলিন্ডার দুর্নীতি মামলায় ফাঁসিয়ে তাকে ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রথমে গ্রেফতার করা হয়। এরপর এলাহাবাদ হাইকোর্টের নিরেএদশে ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল ছাড়া পান।তারপর ফের গ্রেফতার করা হয় ২০১৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। ওই বছরেই ফের ৩ নভেম্বর ছাড়া পান।আর ১০ ফেব্রুয়ারি আলিগড়ের সিজিএম কাফিল খানের জামিনের নির্দেশ দিলেও আলিগড়ের জেলাশাসকের নির্দেশে ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে এনএসএ আইনে গ্রেফতার করা হয়।
কিন্তু তারপরেও যোগী সরকারের রোষ থেকে রেহাই পাননি কাফিল খান। গত ডিসেম্বরে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিলেন কাফিল খান। যোগী আদিত্যনাথ সরকার তার মধ্যে দেশদ্রোহের গন্ধ পায়। তাই তাকে ২৯ জানুয়ারি মুম্বাই থেকে গ্রেফতার করে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ। তার বিরুদ্ধে প্রথমে সিএএ বিরোধী সভায় উস্কানি মূলক ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ এনে গ্রেফতার করা হয়। এবার তাকে ফের জাতীয় সুরক্ষা আইন বা এনএসএ যে গ্রেফতার করে পাঠানো হল মথুরা জেলে। সেখানেই এখন বন্দি রয়েছেন কাফিল খান। দেশজুড়ে বিশিষ্টজনরা তাকে মুক্তি দেওয়ার আর্জি জানালেও উত্তরপ্রদেশ সরকার তাতে আমল দেয়নি।
তবে, আর ১০ ফেব্রুয়ারি আলিগড়ের সিজিএম কাফিল খানের জামিনের নির্দেশ দিলেও আলিগড়ের জেলাশাসকের নির্দেশে ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে এনএসএ আইনে গ্রেফতার করা হয়। এই গ্রেফতারির বিরুদ্ধে কাফিল খানের মা নুজঝাত পারভিন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বি আর গবাইয়ের গঠিত বেঞ্চ বিষয়টি এলহাবাদ হাইকোর্টই হল বিচারের উপযুক্ত জায়গা বলে আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা করেন কাফিল খানের মা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে এলাহাবাদ হাইকোর্ট মঙ্গলবার তার রায়ে এনএনএস আইনে ডা. কাফিল খানকে গ্রেফতার অবৈধ ঘোষণা করে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয়।