আপনজন ডেস্ক: এনএসএ আইনে গ্রেফতার হওয়া চিকিৎসক ডা. কাফিল খান এলাহাবাদ কোর্টের রায়ে জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন দিনকয়েক আগে। কিন্তু তারপরও তিনি স্বস্তিতে নেই। যোগী আদিত্যনাথ শাসিত উত্তরপএদশে তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করায় কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন ভুগছেন চরম আর্থনৈতিক সঙ্কটে।
উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের বিআরডি হাসপাতালে শতাধিক শিশুকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে হিরো হয়ে ওঠার পর থেকেই চিকিৎসক ডা. কাফিল খান উত্তরপ্রদেশ সরকারের রোষানলে পড়েছেন। তাকে চাকরি থেকে সাময়িক সাসপেন্ড করায় তিনি বেতন পাচ্ছেন না। অন্যদিকে প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করতে পারছেন না। তার উপর হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট মামলা চালাতে গিয়ে সর্বস্ব খোয়াতে হয়েছে। প্রথমে তার গাড়ি বেচে দিতে হয়েছে। এমনকী তার যাক্তার স্ত্রীর যাবতীয় গহনা মামলা আর পরিবারের খরচ যোগাতে বেচে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে কাফিল খান জানান।
এই পরিস্থিতিতে তিনি জয়পুরে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, হয় উত্তরপ্রদেশ সরকার তাকে চাকরি থেকে পুরোপুরি বরখাস্ত করুক। তাহলে তিনি প্রাইভেট প্র্যাকটিশ করে সংসার চালাতে পারবেন। সামাতিক কাজেও লাগতে পারবেন। অসমে গিয়ে বন্যা দুর্গতদের চিকিৎসা করতে পারবেন।
কাফিল খানের সেই দুরবস্থার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছেন তার এক শুভানুধ্যায়ী দীপ মুখার্জি। তিনি ট্যুইটারে কাফিল খানের এক ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, তিন বছর ধরে তিনি হয়রানির শিকার হওয়ায় তার পরিবার চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর হাসপাতালে অক্সিজেনের এভাবে শিশুমৃত্যুর মিছিল থামিয়ে হিরো হয়ে উঠেছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. কাফিল খান। তবু তাকে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে ও শিশু মৃত্যুর খবর চাউর করে যোগী সরকারের দুর্নাম করার দায়ে গ্রেফতার হতে হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও যোগী সরকারের রোষ থেকে রেহাই পাননি কাফিল খান। গত ডিসেম্বরে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিলেন কাফিল খান। যোগী আদিত্যনাথ সরকার তার মধ্যে দেশদ্রোহের গন্ধ পায়। তাই তাকে ২৯ জানুয়ারি মুম্বাই থেকে গ্রেফতার করে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ। তার বিরুদ্ধে প্রথমে সিএএ বিরোধী সভায় উস্কানি মূলক ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ এনে গ্রেফতার করা হয়। এবার তাকে ফের জাতীয় সুরক্ষা আইন বা এনএসএ যে গ্রেফতার করে পাঠানো হল মথুরা জেলে। সেখানেই এখন বন্দি রয়েছেন কাফিল খান। দেশজুড়ে বিশিষ্টজনরা তাকে মুক্তি দেওয়ার আর্জি জানালেও উত্তরপ্রদেশ সরকার তাতে আমল দেয়নি।
Speaking with the media in Jaipur, Dr. Kafeel Khan says that his family has been harassed since the past three years, now financially broken @IndianExpress pic.twitter.com/kitJAWVm4D — Deep Mukherjee (@manwithaquill) September 3, 2020
তবে, ১০ ফেব্রুয়ারি আলিগড়ের সিজিএম কাফিল খানের জামিনের নির্দেশ দিলেও আলিগড়ের জেলাশাসকের নির্দেশে ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে এনএসএ আইনে গ্রেফতার করা হয়। এই গ্রেফতারির বিরুদ্ধে কাফিল খানের মা নুজঝাত পারভিন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বি আর গবাইয়ের গঠিত বেঞ্চ বিষয়টি এলহাবাদ হাইকোর্টই হল বিচারের উপযুক্ত জায়গা বলে আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা করেন কাফিল খানের মা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে এলাহাবাদ হাইকোর্ট মঙ্গলবার তার রায়ে এনএনএস আইনে ডা. কাফিল খানকে গ্রেফতার অবৈধ ঘোষণা করে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct