শ্রীনগর: নিরাপত্তা বাহিনীর ছোড়া পেলেট বন্দুকের গুলিতে কাশ্মীরি কিশোরী ইনশা মালিকের (১৪) দুটি চোখই নষ্ট হয়ে গেছে। টানা তিন মাস হাসপাতালে কাটানোর পর সম্প্রতি বাড়ি ফিরেছেন তিনি। কিশোরী মেয়েটির স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু তার সে স্বপ্ন আজ ধুলোয় মিশে গেছে হায়েনাদের নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডে।
দক্ষিণ কাশ্মীরের সোপিয়ান জেলার সবুজে ঘেরা গ্রামে তাদের ঘরের এক কোণে বসে ছিল ইনশা।
ইনশা তার মাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘মা এখন দিন না রাত?’ তার এমন কথায় তার চারপাশে থাকা আত্মীয়, প্রতিবেশি কেউই চোখের জল ধরে রাখতে পারেনি।
গ্রেটার কাশ্মীর সংবাদপত্রের প্রতিবেদককে ইনশা বলেন, ‘আমি আমাদের রান্নাঘরে বসে অধ্যয়নরত ছিলাম। গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে আমি (১০ জুলাই) কাঁদতে থাকি। কি ঘটেছে তা দেখার জন্য আমি জানালা খোলা মাত্রই রাস্তায় থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আমার দিকে গুলি বর্ষণ শুরু করে।’
তিনি বলেন, ‘আমি অজ্ঞান হয়ে নিচে পড়ে যাই। তারপরে ঘটেছিল কি জানি না। পরে যখন আমার জ্ঞান ফিরে আসে তখন প্রায় কোনো কিছুই দেখতে পাইনি। শুধু অন্ধকার ছাড়া অন্য কিছু দেখিনি।’
‘এলাকার অসহায় মানুষদের সাহায্য করার জন্য আমি একজন ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা (নিরাপত্তা বাহিনী) গুলি ছুড়ে আমার সব স্বপ্নকে চুরমার করে দিয়েছে। আমি যখন কিছুই দেখতে পাচ্ছি না তখন কিভাবে আমি এখন ডাক্তার হবো? কিন্তু তবুও আমি আশা করছি যে, আমি একজন ডাক্তার হতে পারব।’
তিনি জানান, সে আবারো তার স্কুল, শিক্ষক ও সহপাঠীদের দেখতে চায়।
‘আমি অন্তত একবার আমার শ্রেণিকক্ষ, সহপাঠী, বন্ধু ও শিক্ষকদের দেখতে চাই। কিন্তু আমি জানি না কেমন করে তাদের দেখতে সক্ষম হবো।’ বলেছিলেন তিনি।
‘যারা আমার দিকে গুলি ছোড়ে আমাকে অন্ধ করেছে আমি তাদের অভিশাপ দিচ্ছি এবং আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাদের অভিশাপ করে যাব।’এ কথা বলে ইনশা জোরে জোরে কাঁদতে থাকেন।
ইনশার মা আফরোজা জানান, সে সব কিছুতেই এখন অন্যের উপর নির্ভরশীল। তিনি বলেন, ‘আমরা তাকে একা রেখে বাইরে কোথাও যেতে পারি না। সব কিছুর জন্য তার সাহায্য দরকার। তার আরোগ্য লাভের কোনো আশাও এখন আমাদের নেই।’
ইনশার বাবা মুশতাক আহমদ বলেন, ‘আমরা সব আশাই হারিয়ে ফেলেছি এবং এখন যদি ইনশা আবার দেখতে পায় তবে, সেটা শুধু একটি অলৌকিক ঘটনা হবে।’
‘আমি আমার মেয়েকে নামকরা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু কিছুই তাকে সাহায্য করতে পারেনি।’ বলেছিলেন আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘নিউ দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের সব নামকরা ডাক্তাররা আমার মেয়েকে পরীক্ষা করেছে কিন্তু তারা বলে দিয়েছেন ইনশা আর কোন কিছুই দেখতে পারবে না। আমি ডাক্তারদের বলেছিলাম যে, আমি আমার চোখ দান করব যাতে আমার ইনশা পুনরায় দেখতে পারে কিন্তু তারা (ডাক্তাররা) বলেছেন এটা আর সম্ভব হবে না।’
শ্রীনগরের শ্রী মহারাজা হরি সিং হাসপাতাল থেকে আমি তাকে নয়া দিল্লির এআইআইএমএস হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানকার ট্রমা সেন্টারে প্রায় দুই মাস থাকতে হয়েছে এবং এ সময়ে তার মাথায় তিনটি সার্জারি অপারেশন করা হয়। কিন্তু এটা তার পুনরুদ্ধারে সাহায্য করতে পারেনি। পরবর্তীতে আমরা তাকে মুম্বাই নিয়ে যাই যেখানে তার বাম চোখে অপারেশন করা হয়। কিন্তু সেখানকার ডাক্তাররা বলেছেন আর কোনো আশা নেই।’ বলেছেন মুশতাক আহমেদ।
‘আমরা জানি সে আর দেখতে পারবে না। কিন্তু যারা তাকে অন্ধ করে তার জীবনকে ধ্বংস করে দিয়েছে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দাবি করছি।’ তিনি বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার আয়ের একমাত্র উৎস ছোট একটি ফলের বাগান রয়েছে। আমি আমার মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরানোর জন্য তা বিক্রি করতে প্রস্তুত আছি।’
শোপিয়ান জেলার নিউ গ্রীনল্যান্ড স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ইনশা মালিক। হিযবুত কমান্ডার বুরহান ওয়ানিকে হত্যার দু’দিন পর গত ১০ জুলাই সংঘর্ষের সময় তাদের বাড়ির দিকে পেলেট বন্দুকের গুলি ছোড়ে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এতে তার উভয় চোখই নষ্ট হয়ে গেছে এবং মাথায়ও প্রচণ্ড আঘাত পান।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct