ব্লক সভাপতির জন্মদিন বলে কথা। তাই লকডাউনের মাঝেও মহামারি আইনকে কাঁচকলা দেখিয়ে জন্মদিনের আসরে বন্ধুবান্ধব, অনুগামী ও পারিষদদের নিয়ে উপস্থিত থাকলেন ব্লক সভাপতি। নিয়ম ভাঙার এখানেই শেষ নয়। টেবিলের ওপর দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সমেত দিদিকে বলো ফেস্টুন বিছিয়ে তার ওপরে রাখা কেক হাসিমুখে কাটলেন তিনি নিজেই। আর এতেই দল ও দলের সুপ্রিমোকে অবমাননার অভিযোগ উঠেছে হবিবপুর ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রভাস চৌধুরীর (বট) বিরুদ্ধে। দলের ব্লক সভাপতি হয়ে লকডাউন বিধিভঙ্গের পাশাপাশি কীভাবে দলনেত্রীর ছবি ও পোস্টারের অবমাননা করলেন তিনি তা নিয়ে নিন্দার ঝড় বয়ে গেছে দলের অন্দরেই।২ ০ অগাস্ট বৃহস্পতিবার চুয়ান্নতম জন্মদিন ছিল মালদার হবিবপুর ব্লকের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি প্রভাস চৌধুরীর। এলাকায় তিনি বটো নামেই বেশি পরিচিত। রাজ্য সরকারের ঘোষণা মোতাবেক গোটা বাংলা জুড়ে ওই দিন পূর্ণ লকডাউন থাকলেও জন্মদিনের আয়োজনে খামতি ছিল না বটোবাবুর। তার জন্মদিনের ছবিও তার অনুগামীরা স্যোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেন। আর তারপর থেকেই বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করেছে ব্লক সভাপতির কার্যকলাপকে ঘিরে। ছবিতে দেখা গেছে, দশ বারো জন অনুগামীদের উপস্থিতিতে হাসিমুখে কেক কাটছেন। মুখে মাস্ক ছিল না প্রভাস বাবু ও কয়েকজন অনুগামীর। আবার অনেকের মাস্ক গলায় নেমে এসেছিল। স্যোশাল ডিসট্যান্সিং-এর কোনও বালাই ছিল না। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে যখন রাজ্য সরকার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। যখন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য করজোড়ে অনুরোধ করছেন। তখন সেই শাসক দলেরই একজন ব্লক সভাপতি সরকার ঘোষিত পূর্ণ লকডাউনের দিনে কীভাবে সরকারি আইন তথা দলনেত্রীর নির্দেশকে অমান্য করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের কাছে যেমন ভুল বার্তা যাবে তেমনই দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে বলেও জোর সমালোচনা শুরু হয়েছে। দলের ব্লক সভাপতিই যদি নিয়ম ও সরকারি নির্দেশিকা না মানেন, তবে দলের অনুগামীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ তো নিয়ম ভাঙবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। লকডাউনে এমন কাজকর্মের পাশাপাশি প্রভাসবাবু দলনেত্রী ও দলের অবমাননা করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে দলের অন্দরেই। জন্মদিনের কেক কীভাবে মমতা ব্যানার্জির ছবি দেওয়া দিদিকে বলো কর্মসূচির পোস্টারের ওপর রেখে কাটলেন তা বোধগম্য হচ্ছে না কারও। একজন বর্ষীয়ান নেতা হয়েও এই সামান্য বোধটুকু কীভাবে তার নজর এড়াল তা নিয়ে সমালোচনা করেছেন দলের কর্মীরাই । অনেকে আবার অভিযোগ করেছেন, সব জেনেবুঝেই তিনি এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পদে থাকলেও ব্লকে সংগঠনকে তেমনভাবে সাজাতে তিনি ব্যর্থ বলে সমালোচিত হয়েছেন তিনি। এমনকি তার সময়েই পঞ্চায়েত, লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে হবিবপুর ব্লকে দলের শোচনীয় ফল হয়েছে। ব্লক সভাপতির এ হেন কাজকর্মে তাই অন্য ছায়া দেখছেন অনেকেই। যদিও প্রভাসবাবু জানিয়েছেন, " দলের অনুগামীরা জন্মদিনের আয়োজন করেছিল।বিষয়টি আমার নজরে আসেনি।" এই নিয়ে দলের জেলা মুখপাত্র শুভময় বসুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি জানান, " এই বিষয়ে আমি কিছু বলব না।" তবে সংবাদমাধ্যমের সামনে কেউ মুখ খুলতে না চাইলেও, প্রভাসবাবুর এমন দল ও সরকার বিরোধী আচরণে যে আখেরে তৃণমূল কংগ্রেসই কলঙ্কিত হচ্ছে তা মানছেন সকলেই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct