উত্তর পূর্ব দিল্লির একটি ভাড়া ঘরে বিবি ও দুটো শিশু সন্তানকে নিয়ে থাকত অটো রিকশাচালক মুহম্মদ রফি৷ তাদের জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়৷ সূত্র: @ karwanemohabbat (ভালবাসার কাফেলা)।গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের উদ্ধারে হেল্প লাইন চালু করতে কাঁরোয়া এ মহব্বত আহ্বান জানায়৷ সেই ডাকে ৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী যুবক ও যুবতী সাড়া দেয়৷ তাদের দেওয়া ধারাবাহিক সিভিল সোসাইটি রিপোর্টের এটি দ্বিতীয় অংশ৷ গত ফেব্রুয়ারিতে ঘটা দিল্লি দাঙ্গার অস্থায়ী ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র থেকে প্রেরিত তথ্য তুলে ধরে বিশিষ্ট সমাজকর্মী হর্ষ মান্দার ইংরেজি নিউজ পোর্টাল স্ক্রল ডট ইন- এ লিখেছেন এই প্রতিবেদন। তার সেই লেখাটি ভাষান্তর করেছেন সৈয়দ আসরার আহমেদ।
আমি প্রথমেই সেই দুর্ধর্ষ উদ্ধারকারী দলের রিপোর্ট দিয়ে শুরু করব যার অধিকাংশ তরুণ তরুণীর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল৷ যারা আমাদের দফতরে দিবারাত্রী না ঘুমিয়ে লাগাতার ৭২ ঘণ্টা কাজ করেছিল৷তাদের না ছিল কোনও অভিজ্ঞতা কিংবা পরিকাঠামোগত শক্তি, ছিল কেবলমাত্র হৃদবৃত্তি যা সরকারের অবহেলায় শূন্যতা পূরণের জন্য ছিল যথেষ্ট৷ তারা অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম তৈরি করেছিল৷ বিভিন্ন সমাজকল্যাণ সংস্থার মাধ্যমে তাদের হেল্পলাইন নম্বর জানতে পেরে দুর্দশাগ্রস্তরা একের পর এক সাহায্যের আবেদন জানাতে শুরু করে৷
দিল্লি দাঙ্গায় বিধ্বস্ত দোকানপাট
তারা স্মৃতিচারণ করে বলে ২৫ ফেব্রুয়ারির রাত্রীর প্রথম ভাগ সবচেয়ে খারাপ সময় ছিল৷ " পুলিশের উর্ধ্বস্তন কর্মকর্তারা তখন কোনও ডাকে সাড়া দেয় নি! ফলে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষগুলোকে ফোন করে তাদের খুঁটিনাটি নেওয়া ছাড়া কোনও বিকল্প ছিল না৷ ১০০ নম্বরে ফোন করে অবিলম্বে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী লস্করদের পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা? সেটা হাস্যকর কেবলমাত্র CRN নম্বর টুকে নেওয়া ও মৌখিক প্রতিশ্রুতি ব্যতীত কিছুই কার্যকর করেনি ( যা নিদেনপক্ষে ডিজিট্যাল চিহ্নিতকরণমাত্র)…. ৷ যেহেতু ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোন সুনির্দ্দিষ্ট আশ্বাস না পাওয়ায় আদালতের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনও বিকল্প ছিল না৷ অবশেষে,বিচারপতি মুরলিধরের আদেশের পরে আমরা পুলিশের উর্ধ্বস্তন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে উদ্ধার কার্য পরিচালনার সুযোগ পায়৷ মধ্যরাত থেকে ২৬ তারিখ দিন পর্যন্ত আমরা ৬০০-৮০০ এর অধিক সংখ্যক বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করতে সক্ষম হই৷"
দাঙ্গা কবলিত স্থান থেকে সংগৃহীত তাদের দেওয়া কিছু তথ্য:
"আমরা রাত ৯ টা ১৫ মিনিটে শিব বিহার এলাকার একটি পরিবার থেকে একটা ফোন পেয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলি৷ সেই রাতে উত্তর পূর্ব দিল্লি থেকে পাওয়া অনেক দাঙ্গাপীড়িতদের ম্যাসেজের এটি একটি৷ দাঙ্গাবাজরা গলিতে ঢুকে পড়ায় অনেকে তাদের ঘরে বন্দী হয়ে পড়ে৷ অনেকে দেখতে পেয়েছিল তাদের প্রতিবেশিদের ঘরে আগুন লাগানো হয়েছে৷
কামরান জানায়,তাদের ঘরে ৯ জন শিশুসহ ২০ জন গৃহবন্দি হয়ে পড়ে৷ সে ভীত সন্ত্রস্ত গলায় উচ্চকিত কণ্ঠে কথা বলছিল৷ তাদের উদ্ধারের জন্য তাদের সঙ্গে পরবর্তী ৮ ঘন্টা বা ততোধিক সময় লাগাতার যোগাযোগ রাখতে হচ্ছিল৷ যাতে করে তারা কোন স্থানে আছে তা জেনে পুলিশের সঙ্গে উদ্ধারকারি দলের সমন্বয় সাধন করা সম্ভবপর হয়৷ হাজার বার আবেদন নিবেদন সত্বেও অনড় অচল পুলিশ মধ্যরাতে দিল্লি হাইকোর্ট নাটকীয়ভাবে একটি আবেদন শোনার পর রায়দানে নড়েচড়ে ওঠে৷
দিল্লি দাঙ্গায় দুর্গতদের সহায়তায় ব্যস্ত স্বেচ্ছাসেবীরা
অথচ আশ্চর্যের বিষয় ছয়-সাতজন পুলিশকর্মী তাদের নিরাপত্তায় দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল সেসময় পুলিশের সামনে দাঙ্গাকারীরা আক্রমণ চালানোর চেষ্টা করেছিল কেন না তারা সংখ্যায় বেশি ছিল৷ আমরা শুনেছি যে সেই অবস্থিায় পুলিশ দলটিকে পশ্চাদপসরণ করতে হয়েছিল৷ পরে তারা আরও পুলিশ পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে৷ সেই অতিরিক্ত বাহিনী না আসা পর্যন্ত তারা একটি শামশানঘাটের কাছে লুকিয়ে ছিল। অবশেষে, সকাল ৫টা ৩৪ মিনিটে আমরা কামরানের কাছ থেকে জানতে পারি যে তারা পুলিশের সাহায্যে নিরাপদ স্থানে পৌঁছেছে।
এদিকে, ওরা আনুমানিক ৫-৬শো উদ্ভ্রান্ত বাস্তুচ্যূত মানুষের দলে গিয়ে পড়েছিল। কামরান অক্ষতভাবে চমন পার্কের নিরাপদ স্থানে পৌঁছে স্বস্তি ও অবিশ্বাসে কেঁদে ফেলেছিলেন।
দিল্লির সন্নিকটে শিববিহারের দৃশ্য:
(সৌজন্যে- @karwanemohabbat)
“পরের দিন ২৬ তারিখে সকাল ৮টা ৫৫মিনিটে আফরিনের সাথে কথা বলি৷ তিনি পেরেশান ছিলেন তাই ক্ষীণস্বরে কথা বলেন। দুটি পরিবার দূর্বৃত্তদের ভাঙচুর করা দোকানের ঠিক উপরে লুকিয়ে ছিল। তারা ২৪ এবং ২৫ দু দিন দু রাত চলাফেরা করেনি, টুঁ শব্দটিও করে নি৷৷তারা লাইটের স্যুইচ অন করে নি৷ খালি পেটে ছিল যাতে গুন্ডারা বুঝতে না পারে। তার বাবা সেই দু'দিন ধরে পুলিশকে বারবার ফোন করেছিলেন, কিন্তু ফল হয় নি।
“২৬ তারিখে সকালে যখন আমরা তাঁর সাথে কথা বলি, তখন তিনি সন্দিহান হয়ে এই ভেবে আতঙ্কিত হচ্ছিলেন যে, বাইরের লোকেরা তাদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে অবিলম্বে সরিয়ে নিতে চায়। আমরা সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ১০০ ডায়াল করি সৌভাগ্যক্রমে তৎক্ষণাৎ ডি.সি.পি এর সাথে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কথা বলার সুযোগ লাভ করি। স্মর্তব্য,আদালতে আগের রাতেই শুনানি হয়েছিল ফলে আমরা ডিসিপির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ করেছিলাম৷এরফলে উদ্ধার কাজে তিনি আমাদের সহযোগিতা করেছিলেন। সেদিন সকাল ৯টা ৪৮ মিনিটে বিপন্ন ১৬ জন আদম সন্তানকে উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছিল। ৫ মার্চ আমরা তাদের শেষবারের মতো দেখা করতে গিয়েছিলাম সেদিন তারা কেবলমাত্র তাদের ফ্ল্যাটটা দেখতে গিয়েছিল৷ তারা কিন্তু সেই রাতে ভয়ে নিজেদের ফ্ল্যাটে থাকে নি বরং চাঁদবাগে তাদের আত্মীয়ের বাসায় রাত্রীবাস করে। "
তপনের অভিজ্ঞতা
“তপন এবং আরও পাঁচ অভিবাসী শ্রমিক মোস্তফাবাদে আটকে ছিল। তারা একটি ছোট কারখানায় কাজ করত। তারা এবং তাদের মুসলিম বাড়িওয়ালা তাদের সুরক্ষার জন্য ভয় পেয়েছিল। তারা এলাকার মানুষ নয়৷ এরা সাধারণত ক্ষণস্থায়ী৷ ফলে তারা দুর্বল। তারা নিরাপদে নিকটস্থ থানায় পৌঁছেছে কিনা তা নিশ্চিত করতে ৬ ঘন্টা লাগাতার অনুসরণ করতে হয়৷।
(সংক্ষেপিত)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct