মায়ের ইচ্ছায় বিয়ে ভেঙে আবার স্কুলে ফিরল স্কুলছুট এক ছাত্রী। মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের ঘটনা। ছাত্রী হালিমা খাতুন ক্লাস নাইনে ভর্তি হয়েছে। বুধবার যথারীতি পরীক্ষাও দিয়েছে হালিমা। আগামী দিনে স্কুলের হস্টেলে থেকেই পড়াশুনো করবে হালিমা। স্কুলের পক্ষ থেকে ছাত্রীর পাশুনোর সমস্ত খরচ বহন করা হবে। এই সিদ্ধান্তে খুশি জেদী হালিমাও।
মথুরাপুরের পিছিয়েপড়া গ্রাম সদিয়াল। এখানেই থাকেন মধ্য পঞ্চাশের করিম মোল্লা। পেশায় ক্ষেতমজুর। মাসে মেরেকেটে আয় হাজার তিনেক টাকার মতো। তাঁর ৪ মেয়ে ও ২ ছেলে। হালিমা বোনেদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট। পড়ত কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলে। কিন্তু বছরখানেক আগে অসুখে পড়ে সে। তারপর অসুখ সারলেও আর স্কুলে আসত না সে। তখনই বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লাগে বাবা। জয়নগর এলাকা থেকে এক পাত্রপক্ষ এসে হালিমাকে পছন্দ করে যায়। পাত্রপক্ষ বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে।
হালিমা এদিন বলে,‘ বাবা আমার বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লাগে। কিন্তু আমি কোনমতে রাজি ছিলাম না। আমার মাও আমার পক্ষ নেয়। তারপর দু’জন মিলে পুরনো স্কুলের হেডস্যারের কাছে চলে যাই। সঙ্গে সঙ্গে আবার ভর্তি হয়ে গেছি। এদিন পরীক্ষাও দিলাম। আমি পড়া চালিয়ে যেতে চাই।’ হালিমার মা মরিয়ম বিবি বলেন,‘ আমার আগের ৩ মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম ছোট বয়সে। কম বয়সে মাও হয় সেই মেয়েরা। তাদের দেখেই আমি শিক্ষা নিয়েছি। তাই স্বামীর মুখের ওপর না বলে দিয়েছি। এখন মেয়ের পড়াশুনোর জন্য সাহায্য চাইছি।’ মেয়ে ও স্ত্রীর প্রতিবাদী মনোভাব দেখে করিম মোল্লা ভুল স্বীকার করে নিয়ে বলেন,‘মেয়েটা দেখতে সুন্দর বলে অনেকেই বিরক্ত করত। তারপর অভাবের সংসার। তাই বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। মেয়ে আবার স্কুলে পড়বে শুনে ভাল লাগছে।’ প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি বলেন,‘ আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে প্রচুর নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করেছি। নাবালিকা বিয়ে বন্ধে স্কুলের স্বয়ংসিদ্ধা গ্রুপ আশেপাশের গ্রামে প্রচার করেছিল। এই ঘটনা তারই সুফল। ওই ছাত্রীর সব খরচ স্কুল বহন করবে।’
কৃতজ্ঞতা: কলম