আপনজন ডেস্ক: প্রয়োজনীয় অতি বিরল বি নেগেটিভ রক্তের অভাবে বিপন্ন হয়ে পড়েছিলেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার সীমান্ত-শহর হিলির বাসিন্দা বিধবা এক গৃহবধূ শ্রীমতী মিলন সাহা। তার জীৱন বাঁচাতে লক-ডাউনের মধ্যে বালুরঘাট থেকে ১১০ কি.মি. দূরে রায়গঞ্জে ছুটে গিয়ে রক্তদান করে অনন্য নজির গড়লেন পেশায় এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক ও সমাজসেবী শ্রী বিভাস দাস।
গৃহবধূ শ্রীমতী মিলন সাহা কিছুদিন আগে পড়ে গিয়ে কোমরে ও হাতে মারাত্মক চোট পান। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে দেখা যায় তার কোমরের ও হাতের হাড় মারত্মকভাবে ভেঙে গেছে। কয়েকদিন স্থানীয় এবং জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকদের চিকিৎসায় কাঙ্খিত সাফল্য না মেলায় হতাশাগ্রস্ত তাঁর ছেলে ও মেয়ে তাঁকে নিয়ে রায়গঞ্জের স্বনামধন্য অস্থি শল্য চিকিৎসক অনিন্দ্যসুন্দর সরকার জানান, রোগীর কোমরে ও হাতে একাধিক অস্ত্রোপচার করা ছাড়া অন্য কোনও গতি নেই। কিন্তু অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীকে রক্ত দিতে হবে। তাঁর রক্তের গ্রুপ অতি বিরল বি নেগেটিভ। এরপরে রোগীর ছেলে এবং মেয়ে রক্তের সন্ধান করতে থাকেন। কিন্তু অতি বিরল বি নেগেটিভ রক্ত না পাওয়ায় রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে নানান জায়গায় ছোটাছুটি করে বিফল হওয়ার উপক্রম হয়। সে সময় এক সূত্রে সংবাদ পেয়ে সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ত্রিমোহিনীর এক প্রাথমিক শিক্ষক শ্রী গোপাল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গোপালবাবু তখন রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এবং মানুষের বিপদে আপদে সর্বদাই ঝাঁপিয়ে পড়ায় অভ্যস্ত বি নেগেটিভ রক্তধারী কুশমণ্ডি ব্লকের বেড়ল এফ.পি. স্কুলের প্রধানশিক্ষক বালুরঘাটনিবাসী বিভাস দাসের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেন। বিষয়টি জানিয়ে ওই রোগীর মেয়ে মৌমিতা সাহার ফোন নম্বর দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে সাহায্য করতে বলেন। জনসেবামূলক নানান কাজকর্মে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত বিভাস দাস সঙ্গে সঙ্গে মৌমিতাদেবীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে জানান যে, তিনি গত চৌঠা মে, ২০২০ তারিখে এক কর্কট রোগাক্রান্ত রোগীর জন্য দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা হাসপাতালে রক্তদান করেছেন, তাই তিন মাস অতিক্রান্ত না হওয়ায় রক্তদানের নিয়মানুসারে তিনি এই মুহূর্তে রক্তদানের জন্য উপযুক্ত নন। এই বার্তায় অন্য কোথাও এই বিরল গ্রুপের ইচ্ছুক রক্তদাতার সন্ধান না পেয়ে মাথায় আকাশ পড়ে বিপন্ন ওই রোগীর পরিবার-পরিজনেদের মাথায়। রোগীর পরিবারের অনুরোধে বিভাসবাবু জানান যে রক্ত-সংগ্রহ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক সামগ্রিক সঙ্কটময় পরিস্থিতি ও রোগীর জীবন বাঁচাবার জরুরী স্বার্থে স্পেশাল অনুমতি দিলে গত রক্তদানের তিন মাস পূর্ণ হবার সামান্য কয়েকদিন বাকি থাকলেও রক্ত দিতে তাঁর নিজস্ব কোনও আপত্তি নেই। যথারীতি জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ রমিত দে মহাশয়ের সঙ্গে তিনি নিজেই ফোনে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট সময়ের মাত্র কয়েকদিন আগেই রোগীর জীবন বিপন্নতা ও রক্তের দুষ্প্রাপ্যতা বিবেচনা করে রক্তদান করবার অনুমতি চাইলে ওই চিকিৎসক তাঁকে সুনির্দিষ্ট সময়সীমার আগে রক্ত দিতে কঠোরভাবে বারণ করে দেন। এই কথা জেনে ওই রোগীর পরিবারের লোকজন আবারও অন্যত্র রক্তদাতার সন্ধান করে ব্যর্থ হয়ে আবার বিভাসবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনমাস পূর্ণ হওয়ার পর বিভাসবাবু ঠিক পৌঁছে যান রায়গঞ্জের উপশম নার্সিংহোমে ভর্তি থাকা ওই রোগীর কেবিনে। অবশেষে হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন রোগীর পরিবার। রোগীর পরিজন যথারীতি তৎক্ষনাৎ বিভাসবাবুকে নিয়ে রায়গঞ্জ হাসপাতালের রক্ত-সঞ্চয় বিভাগে নিয়ে যান। বিভাসবাবু হাসিমুখে রক্তদান করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে সেই রক্ত হাসপাতালের রক্ত-সঞ্চয় বিভাগ থেকে উপশম নার্সিংহোমে পৌঁছানো পর্যন্ত রোগীর পরিবারের সঙ্গে থেকে তাঁদের আশ্বস্ত করে বালুরঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রক্ত হাতে পাবার পরেই সেইদিন বিকেলেই ডাঃ অনিন্দ্যসুন্দর সরকার রোগীর দেহে সফলভাবে দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার করেন। দীর্ঘ টানাপোড়েন ও দুশ্চিন্তাবসানে রোগীর পরিবারের মুখে ফুটে ওঠে স্বস্তির হাসি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct