আজীবন দেশের জন্য কাজ করেও অধরা থেকে গিয়েছে শহিদ-এর পরিচয়। কারণ, ভারতের রবীন্দ্র কৌশিক ছিলেন আসলে একজন গুপ্তচর। চরবৃত্তির ক্ষেত্রে যে কয়েকজনের নাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তাদের মধ্যে রবীন্দ্র কৌশিক অন্যতম। অনেকের মতে, বিপক্ষের ঘাঁটিতে গিয়ে তার মতো কাজ আর কোনও ভারতীয় আন্ডারকভার এজেন্ট করতে পারেননি। রবীন্দ্রকে প্রস্তাব দেওয়া হয় পাকিস্তানে গিয়ে ‘র'-এর আন্ডারকভার এজেন্ট হয়ে কাজ করার। দু'বছর ধরে দিল্লিতে কঠোর অনুশীলন পর্ব চলে তার। কিন্তু অধিকাংশ আন্ডারকভার এজেন্টদের মতো তাকেও সরকারিভাবে মেনে নেওয়া হয়নি। উর্দুর পাশাপাশি রবীন্দ্রকে শেখানো হয় ইসলামিক সংস্কৃতির খুঁটিনাটি। রাজস্থান-পাঞ্জাব সীমান্ত শহর গঙ্গানগরের ছেলে হওয়ায় এমনিতেই তিনি পাঞ্জাবিতে চোস্ত ছিলেন। তাকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যাতে পাকিস্তানের জনজীবনে মিশে যেতে পারেন। ১৯৭৫ সালে ২৩ বছরের তরুণ রবীন্দ্র দুবাই, আবুধাবি হয়ে পৌঁছান পাকিস্তানে।। তার নতুন পরিচয় হয় নবি আহমেদ শাকির। নষ্ট করে ফেলা হয় তার ভারতীয় পরিচয়ের যাবতীয় নথি। পরবর্তীতে রবীন্দ্র ওরফে আহমেদ করাচি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি সম্পূর্ণ করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত হন কমিশনড অফিসার হিসেবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি মেজর পদে উন্নীত হয়েছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক দরজির মেয়ে আমানতকে বিয়ে করেছিলেন রবীন্দ্র। তাদের একটি সন্তানও হয়েছিল। জানা যায়, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত রবীন্দ্র কৌশিক বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভারতে পাঠিয়েছিলেন। তার পাঠানো তথ্য দেশের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে তার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ব্ল্যাক টাইগার'। যদিও আরও একটি এজেন্টের নির্বুদ্ধিতার মাশুল দিয়েছিলেন রবীন্দ্র। আশির দশকের গোড়ায় ইনায়ৎ মসিহা নামে আরেক আন্ডারকভার এজেন্টকে পাঠিয়েছিল ‘র'। পরিকল্পনা ছিল, তিনি রবীন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে কাজে সাহায্য করবেন। কিন্তু ইনায়তের নির্বুদ্ধিতায় সব গোপনীয়তার আবরণ খসে যায়। প্রথমে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের কাছে ধরা পড়েন ইনায়ত। তারপর তিনি নাকি প্রকাশ করে দেন রবীন্দ্র কৌশিকের আসল পরিচয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct