চিনা সেনাদের হাতে ২০ ভারতীয় সেনার মৃত্যুর পর ভারত বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছে না। তাই গালওয়ানে বিশেষ অভিযানের জন্য পুরোপুরি তৈরি ভারতীয় সেনা। রোববার রাত পর্যন্ত সেনা সূত্রের যা খবর, তাতে পূর্ব লাদাখে ভারতের প্রত্যাঘাতের সম্ভাবনা বাড়ছে। এ নিয়ে সরকারিভাবে কিছু বলা হয়নি ঠিকই, কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকায় সমরসজ্জা এবং নয়াদিল্লির তৎপরতা গালওয়ানে বিশেষ অভিযানের দিকেই ইঙ্গিত করছে বলে মনে করছেন অনেক সামরিক বিশেষজ্ঞ।
গালওয়ান, প্যাংগং হ্রদ, গোগরা উষ্ণ প্রস্রবণের মতো এলাকায় চীনা ফৌজের সক্রিয়তা বেড়েছে। আশঙ্কা, এ রকম চলতে থাকলে কয়েক দিনের মধ্যেই ভারতীয় ভূখণ্ডের আট কিলোমিটারের মধ্যে থাকা কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্ট্র্যাটেজিক লোকেশন হাতছাড়া হতে পারে সেনাবাহিনীর। অতএব, নিয়ন্ত্রিত অভিযানের দিকেই ভারত যেতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
দেশের তিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের পর গালওয়ানে সেনা তৎপরতার যা গতিপ্রকৃতি, তাতেও অনেকে অভিযানের ইঙ্গিত দেখছেন। মূলত চারটি বড় পদক্ষেপ করা হয়েছে। প্রথমত, জলে-স্থলে-আকাশপথে কঠোরতম নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট তিন বাহিনীকে। দ্বিতীয়ত, কোনোরকম গোলমালের সম্ভাবনা দেখলেই যাতে জওয়ানরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারেন, সে জন্য বলপ্রয়োগের পূর্ণ কর্তৃত্ব এবং স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে বাহিনীকে। অর্থাৎ, এ বার আর নয়াদিল্লি থেকে অনুমতি আসার অপেক্ষা করতে হবে না। তৃতীয় তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্তটি হল যুদ্ধাস্ত্র কেনার জন্য সেনাবাহিনীর হাতে অর্থক্ষমতা দেওয়া। চতুর্থত এবং এই মুহূর্তে সম্ভবত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, অভিযানের জন্য তৈরি করে ফেলা হয়েছে বিশেষ ঘাতক প্ল্যাটুনকে।
উল্লেখ্য, রাশিয়া সফরে যাওয়ার আগে রোববার চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং তিন বাহিনীর প্রধানের সাথে বৈঠক করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সেখানেই জানিয়ে দেয়া হয়, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চীন যে আগ্রাসন দেখাচ্ছে, তাতে ‘রুলস অফ এনগেজমেন্ট’ বদলাতে বাধ্য হচ্ছে ভারতের মতো শান্তিপূর্ণ দেশ। ভারত-চীন মুখোমুখি সংঘর্ষের ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি শনিবারই দেয়া
হয়েছিল। তেমন বেগতিক বুঝলে জবাব দেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা যে বাহিনীর রয়েছে, রোববার তা-ও স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে বৈঠকে। তার পর থেকে সীমান্তে যুদ্ধ সামগ্রী নিয়ে পুরোদমে প্রস্তুত দেশের সেনারা।