চোখের কোনা দিয়ে একনাগাড়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। অচল তাদের দেহ, কোনোক্রমে পা টেনে টেনে ফেলেছে। এদের অনেকেই চারদিন পাঁচ দিন ধরে কিছু খাইনি। চাতক পাখির ন্যায় কেবল সামনের অদৃশ্য পথের দিকে তাকাচ্ছে। আর কত শত মাইল হাঁটতে হবে আর কতদিন হাঁটতে পারবো। খাদ্য তো কাছে নেই, জলও নেই। কটা বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে বের হয়েছিলাম সে কবে শেষ হয়ে গেছে। একি!, আপনাদের যে পায়ের পাতা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশ্নের দিকে। তারা সজল নয়নে কেবল বলে, আর কতদিন পরে গ্রামে পৌঁছাবো। হ্যাঁ, আমি আমার দেশের শ্রমিক মজুর মুটে কুলিদের কথা বলছি। যারা জীবনের তাগিদে বছরের বিভিন্ন সময়ে পাড়ি দেয় এ রাজ্য থেকেও রাজ্যে। এদের উপার্জন ও অতি সামান্য। তার ওপর একান্নবর্তী পরিবারের দায়িত্ব আছে অনেকের উপর। সরকার হঠাৎ লকডাউন ঘোষণা করার ফলে এই ভিন রাজ্যে থাকা শ্রমিকরা আর বাড়ি ফিরতে পারেনি। তার ওপর কর্ম নেই, উপার্জন নেই এবং খাওয়ার ও থাকার পয়সা নেই।
অবশেষে তারা বাধ্য হল পায়ে হেঁটে এই ভীষণ পথ পাড়ি দিতে। এতো এক-আধ দিনের রাস্তা নয়। তাদের মধ্যে কেউ পনেরো দিন বা কুড়ি দিন ধরে পথ চলছে। তাদের মধ্যে কেউ বারোশো কেউ পনেরশো কেউবা দুই হাজার মাইল পথ পাড়ি দিচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার চড়া দামে সাইকেল কিনে তার ভরসায় যাত্রা পথ পাড়ি দিচ্ছে। অনেকে ট্রাকে করে বা তেলের গাড়িতে করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরছে নিজেদের বাড়ির পথে। আসতে আসতে পথের মাঝেই অনেকে নিজের জীবনের অন্তিম নিঃশ্বাস ত্যাগ করছে। বিগত কয়েকদিন ধরে সরকার দূরপাল্লার ট্রেনে করে তাদেরকে ঘরে ফেরার ব্যবস্থা করলেও, হয়তো সেটা তাদের জন্য যথেষ্ট পরিষেবা হচ্ছে না। আমাদের সমাজের বুদ্ধিজীবীদের বৃহৎ অংশের জোরালো দাবী যে সরকার যদি আমাদের দেশের মানুষরা।
যারা অন্য দেশে ছিল তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে পারে, তবে দেশের অভ্যন্তরের শ্রমিকদের প্রতি সরকার এত উদাসীন কেন?
কিন্তু যারা দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে আসছে তাদের আজ খুব সামান্য দাবি, তারা কেবল বলছে আমরা অনেকদিন ধরে কিছু খাইনি আর আমরা নিজের পরিবারের কাছে ফিরতে চাই।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct