সুফি কবি লালন ফকির নিয়ে বিতর্কের অন্ত নেই। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে মিলনের গান গেয়ে বিখ্যাত লালন ফকির। আজ তিনি সমাদৃত। মিন্টু তার ধর্ম পরিচয় নিয়ে এখনো ধন্দ রয়েছে। প্রশ্ন রয়েছে তিনি হয় দু না মুসলিম। কারন এ ব্যাপারে তার কোনো আসল পরিচয় গবেষকরা পাননি। যদিও লালন যেখানে তার প্রায় প্রতিটি গানে অসাম্প্রদায়িক হওয়ার বার্তা দিয়ে গেছেন, সেখানে তার ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলা একেবারেই অবাঞ্ছনীয়। তবুও মাঝে মাঝে কৌতূহল জাগে তার পালিত ধর্ম নিয়ে। ধারণা করা হয় মানব ধর্মে বিশ্বাসী এই জগতখ্যাত বাউল শিল্পীর জন্ম কোনো নিচু জাতের হিন্দু পরিবারে। তবে শৈশবে বাবা-মার মৃত্যুর পর এক তীর্থযাত্রী দলের সঙ্গে বেরিয়ে পড়েন তিনি। এ সময় বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে লালনকে পথে ফেলে অন্য যাত্রীরা চলে যায়।
তখন সিরাজ সাঁই নামের এক মুসলমান সাধক তাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে সেবা-শুশ্রূষা করে বাঁচিয়ে তোলেন। সেই থেকে সিরাজ সাঁইই লালনের প্রথম গুরু। তখন তিনি তারা গুরুর ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন কিনা সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে লালন হিন্দু না মুসলমান ছিলেন এ প্রশ্নে গবেষকদের মধ্যেও কম তর্ক-বিতর্ক হয়নি। এখনো সেটি চলমান। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লালন-জীবনীকার বসন্তকুমার পাল, গবেষক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, অন্নদাশঙ্কর রায় প্রমুখ বিশিষ্টজনেরা এই বাউল কবিকে হিন্দু পরিবারের সন্তান বলেই উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, কবি জসীমউদ্দীন, মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন প্রমুখ লেখকেরা লালনকে ‘ধর্মান্তরিত মুসলমান’ বলে মতামত দিয়েছেন।
তবে নিজের এক গানে তাকে নিয়ে এমন বিতর্কিত প্রশ্নের সহজ উত্তর তিনি দিয়ে গেছেন। জনপ্রিয় সেই গানটিতে লালন লিখেছেন, ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে/ লালন কয় জেতের কী রূপ দেখলাম না এই নজরে।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct