করোনা মহামারির আকার নেওয়ায় দেশে লকডাউনের মেয়াদ তৃতীয়বারের মতো বাড়ল। ২৫ মার্চ প্রথম লকডাউন জারি করা হয়। প্রথম দফার লকডাউন শেষ হয় ১৪ এপ্রিল। ১৫ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত দ্বিতীয় দফার লকডাউন বাড়ানো হয়েছিল। তৃতীয় দফায় তা বাড়িয়ে ১৭ মে পর্যন্ত বহাল রাখা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন কিছু নির্দেশিকা যোগ হয়েছে। ছাড় দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে। তাবের, এবার খানিকটা পরিকল্পিত গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে।
আজ শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তথ্য অনুসারে, ১ মে বিকাল পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৩৬৫ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে ১ হাজার ৭৫৫ জনকে। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৭১ জনের। ফলে দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫২ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৬৫ জন। এই মৃত্যু বেড়ে চলায় এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এক নির্দেশ জারি করে বলেছে, সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের সামগ্রিক পর্যালোচনা করেই তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। এই পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে চিহ্নিত করা রেড, অরেঞ্জ ও গ্রিন জোনের কোথায় কতটা ঝুঁকি রয়েছে, কীভাবে চলতে হবে, কী করতে হবে, কীসে কীসে নিষেধাজ্ঞা, সেই অনুযায়ী কী ব্যবস্থা করতে হবে সেই সংক্রান্ত একটা গাইডলাইনও প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া লকডাউন চলাকালীন অরেঞ্জ ও গ্রিন জোনে কী কী বিষয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে তার উল্লেখও রয়েছে এই গাইডলাইনে। এই নতুন গাইডলাইনে বলা হয়েছে, মানুষের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে জরুরি কাজ ছাড়া কেউ যেন সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত রাস্তায় না বের হন। স্থানীয় প্রশাসনকে এই সময় দরকার হলে কারফিউ জারি রাখার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ৬৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষ, গর্ভবতী মহিলা ও ১০ বছরের কম বয়সের যেনও কেউ দরকার ছাড়া বাড়ির বাইরে না বের হন, সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, দেশে কীভাবে রেড, অরেঞ্জ ও গ্রিন জোন চিহ্নিত করা হবে সেই পদ্ধতি ৩০ এপ্রিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক প্রকাশ করেছে। যেসব জেলায় এখনও পর্যন্ত কোনও করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়নি অথবা গত ২১ দিন ধরে কোনও সংক্রমণের খবর নেই, সেই জেলাগুলোকে গ্রিন জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। রেড জোন চিহ্নিত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা, আক্রান্তের ডাবলিং রেট, নমুনা পরীক্ষার পরিমাণ, পর্যবেক্ষণের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আর যে জেলাগুলি রেড ও গ্রিন জোন নয়, সেগুলিকে অরেঞ্জ জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
তবে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, প্রতি সপ্তাহে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সঙ্গে এই রেড, অরেঞ্জ ও গ্রিন জোন নিয়ে আলোচনা করবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। রাজ্যগুলি যদি মনে করে কেন্দ্রের চিহ্নিতিকরণের পরেও রেড অথবা অরেঞ্জ জোনের সংখ্যা বাড়াতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রের দ্বারা চিহ্নিত রেড ও অরেঞ্জ জোনের সংখ্যা কখনও কমানো যাবে না। সংক্রমিত জোনের আওতায় থাকা এলাকাগুলিতে বাড়ি বাড়ি পর্যবেক্ষণ ও কড়া হাতে লকডাউন পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই এলাকার প্রতিটি মানুষের ফোনে যাতে আরোগ্য সেতু অ্যাপ ইনস্টল থাকে সেদিকে নজর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘গ্রিন' ও ‘অরেঞ্জ' জোনের ক্ষেত্রে কিছু শিথিলতা আনা হবে। তবে ভারতজুড়ে যে কোনও ‘জোন' নিরপেক্ষভাবে কিছু বিধিনিষেধ বহাল থাকবে। বিমান, রেল, মেট্রো পরিষেবা ও আন্তঃরাজ্য ভ্রমণ নিষিদ্ধই থাকবে। বন্ধ থাকবে স্কুল, কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষা/প্রশিক্ষণমূলক প্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে রেস্তোরাঁ, হোটেলও বন্ধ থাকবে। বড় জমায়েতের স্থান যথা সিনেমা হল, মল, জিম ও ক্রীড়া সংস্থাগুলিও বন্ধ রাখা হবে।
এছাড়া সরকার কোনও রকমের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক জমায়েতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। ধর্মীয় সমাবেশও নিষিদ্ধ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct