আপনার স্মার্টফোনের সাহায্যে আপনাকে সারাক্ষণ ট্র্যাক করা হচ্ছে। আপনার সমস্ত মেসেজ স্ক্যান করা হচ্ছে। আপনার দেয়া তথ্য তুলে দেয়া হচ্ছে তৃতীয় কোন কোম্পানির হাতে।
আপনার জানা বা অজানাই যখন কোন অ্যাপ ডাউনলোড করছেন বা কোন ওয়েসসাইটে গিয়ে সাইন ইন করছেন, তখন আপনি এই টেক কোম্পানিগুলোর অজানা ফাঁদে পা দিচ্ছেন।
বিবিসির গবেষণায় দেখা গেছে যে, তথ্য প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানির প্রাইভেসি পলিসি এবং শর্তাবলী এমন ভাষায় লেখা, যা পুরোপুরি বোঝা সাধারণ মানুষের বোধগম্য মধ্যে নই, বুঝতে দরকার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা। এসব শর্তাবলী গুলো ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার তথ্য যে কতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটা দেখলে চমকে উঠতে পারেন!
১.আপনার অনুমতি ছাড়াই আপনাকে অনুসরণ করা হচ্ছে
জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের মাধ্যমে আপনার লোকেশন বা অবস্থান সম্পর্কে জানার জন্য অনেক অ্যাপ আপনার অনুমতি চায়। আপনি চাইলে এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। কিন্তু আপনি অনুমতি না দেয়ার পরও কিন্তু অনেক অ্যাপ আপনার অবস্থানের ওপর নজরদারি চালাতে পারে।
যেমন ধরা যাক ফেসবুক। স্মার্টফোনের জিপিএস ছাড়াই কিন্তু এই অ্যাপটি আপনার অবস্থান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। ফেসবুকে আপনি যেসব ‘চেক ইন’ দিচ্ছেন, বা যেসব ‘ইভেন্টে’ যোগ দিচ্ছেন, তা থেকে এবং আপনার আইপি এডড্রেস দেখে তারা অনুসরণ করে আপনাকে।
২. আপনার তথ্য সহযোগী কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করছে
আপনি যখন নির্দিষ্ট কোনও অ্যাপ্লিকেশনের শর্ত মেনে তা ব্যবহার করতে রাজী হন, আপনি কেবল সেই কোম্পানির হাতে আপনার তথ্য তুলে দিচ্ছেন না। তারা এই তথ্য আবার শেয়ার করছে তাদের সহযোগী কোম্পানি বা অ্যাপের সঙ্গে।
যেমন, ডেটিং অ্যাপ ‘টিনডার’ তার সদস্যদের সংগ্রহ করা নানা তথ্য একই ধরনের অন্যসব ডেটিং সাইটের সাথে বিনিময় করে।
যেমন ‘লিংকডিন’-কে যখন ২০১৬ সালে মাইক্রোসফট কিনে নিলো, তখন থেকে এর গোপনীয়তার নীতিতে যুক্ত করা হলো যে মাইক্রোসফটের অন্য পরিসেবা থেকেও তথ্য ব্যবহার করা হবে।
৩. ... এবং আপনাকে বাধ্য করা হচ্ছে তৃতীয় পক্ষের শর্ত মানতে
‘অ্যামাজন’ বলছে যে, ব্যবহারকারীদের তথ্য তারা তৃতীয় পক্ষ বা থার্ড পার্টির সাথে বিনিময় করতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলিতে গত মে মাস হতে একটি নতুন আইন, ‘জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশন’ কার্যকর হয়েছে। কিন্তু সেই আইনেও কোম্পানিগুলোকে এসব তৃতীয় পক্ষের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়নি।
আবার যেমন ‘উইকিপিডিয়া’ তাদের গ্রাহকদের কোনও তথ্য অন্য কোনও কোম্পানির সাথে শেয়ার করে না।
৪. ফেসবুক আপনার মুছে ফেলা সার্চ অপশনের তথ্যও রাখছে
‘ফেসবুক’ ব্যবহারকারীদের সুযোগ রয়েছে তাদের অনুসন্ধানের তথ্য মুছে ফেলার। কিন্তু ফেসবুক সেসব তথ্য তাৎক্ষণিক ভাবে নষ্ট করছে না। অন্তত ছয় মাস ব্যবহারকারীর অনুসন্ধান বিষয়ক তথ্য তারা রেখে দেয়।
৫. লিংকডিন আপনার ব্যক্তিগত মেসেজগুলোও স্ক্যান করে
আপনি যদি মনে করে থাকেন যে আপনার ব্যক্তিগত মেসেজগুলো আসলেই ‘ব্যক্তিগত’, তবে আরেকবার ভাবুন।
‘লিংকডিন’ তাদের প্রাইভেসি পলিসি অনুসারে স্বয়ংক্রিয় মেসেজ স্ক্যানিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে।
৬. আর আপনার বয়স যদি ১৮-এর কম হয়, তবে আপনার বাবা-মাকে এসব আপনাকে সাথে নিয়েই পড়তে হবে
'অ্যাপল' বলছে যে অপ্রাপ্ত বয়স্কদেরকে এসব শর্তাবলী পড়তে হবে তাদের বাবা-মা কে সাথে নিয়েই ।
কিন্তু বিবিসির গবেষণায় দেখা যায়, প্রাপ্ত বয়স্করা যদি এসব প্রাইভেসি পলিসি বা নানা শর্ত পড়তে চান, তাদের গড়ে অন্তত ৪০ মিনিট সময় লাগবে। তাহলে একজন ১৩ বছর বয়সীর কি অবস্থা হবে ভাবুন তো!
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct