যে পরিবার তার মেয়ের বিয়ের যৌতুক দিতে অপরাগ। কিংবা বহুবার পাত্রপক্ষের সামনে বসেও অপছন্দ হওয়ায় থেকে যাওয়া। এমন তরুণীদের টার্গেট করে তাদের প্রেমের ফাঁদে ভুলিয়ে মুগ্ধ করা ছিল মোহন কুমারের। তারপর সুযোগ পেলেই একদিন হবু স্ত্রীর হাতে তুলে দিতেন গর্ভনিরোধক ওষুধের রূপে পটাসিয়াম সায়ানাইড। আর এভাবে মোট ২০ জন তরুণীকে খুন করেছে গুণধর প্রেমিক। এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে কর্নাটকে। দক্ষিণ কর্নাটকের পাঁচ জেলার ৬ শহরে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় ২০ জন তরুণীর। সবার বয়স ২০ থেকে ৩০ মধ্যে। প্রত্যেকটা মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া শৌচাগারে। দেহগুলো উদ্ধার করতে হতো দরজা ভেঙে। কারণ শৌচাগারের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকতো। এই সব খুনের মধ্যে একটি বিষয়ে মিল খুঁজে পায় পুলিশ। তাহলো, নিহতদের সবার গায়ে ছিল বিয়ের সাজ। কিন্তু কারও গায়ে ছিল না কোনও গয়না। আটটি মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল মহীশূরের লস্কর মোহাল্লা বাসস্ট্যান্ডে। এছাড়া পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার হয়েছিল বেঙ্গালুরুর ব্যস্ত বাসস্ট্যান্ডের শৌচাগার থেকে। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে এই মৃত্যুগুলোকে একসঙ্গে গাঁথার চেষ্টা করেনি ১০টি থানার পুলিশ। অজ্ঞাত কারণে পুলিশের চোখে এগুলো ছিল ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ধরা পড়ে।প্রতিটি ক্ষেত্রেই ফরেনসিক টেস্ট বলে, মৃত্যু হয়েছে সায়ানাইডের বিষক্রিয়ায়। এর মাঝে টনক নড়ে উনিশতম রহস্য মূত্যুর সময়ে। বছর বাইশের তরুণী জনৈক অনিতার পরিবার থেকে পুলিশে অভিযোগ করা হয়, ভিন্ন সম্প্রদায়ের এক যুবকের সঙ্গে তিনি পালিয়ে গিয়েছে। তাকে খুঁজে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে স্থানীয় থানার সামনে বিক্ষোভে সামিল হয় অন্তত দেড়শ জন। হুমকি দেওয়া হয়, তরুণীর সন্ধান পাওয়া না গেলে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে থানা। চাপের মুখে পড়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। প্রথমে অনিতার বাড়ির ল্যান্ডলাইনের কললিস্ট পরীক্ষা করা হয়।দেখা গেল, গভীর রাতে তিনি একটি বিশেষ নাম্বারে ফোন করে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতেন। সেই নম্বর ছিল এক তরুণীর। দেখা গেল তিনিও নিখোঁজ। সেই নিখোঁজ তরুণীদের ফোনের সূত্র ধরে সন্ধান পাওয়া গেল কিছু নম্বরের। যেগুলো প্রতিটা কোনও না কোনও তরুণীর নামে। কিন্তু তারা সবাই দীর্ঘ দিন ধরে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ। আরও একটি যোগসূত্র প্রকাশিত হলো। প্রতিটা নম্বর কোনও না কোনও সময় সক্রিয় ছিল মেঙ্গালুরুর ডেরালাকাট্টে গ্রামে। সেই নম্বরগুলো ধরে আরও অনুসন্ধান চালিয়ে খোঁজ পাওয়া গেল ধনুষ নামে এক কিশোরের। তার কাছে একটি ফোন পাওয়া গেল, যা কোনও এক সময়ে ছিল কাবেরী নামে এক তরুণীর। ধনুষ পুলিশকে জানালো তাকে ফোনটা দিয়েছে তার কাকা মোহন কুমার। এবার তদন্তকারীরা নিশ্চিত হলেন খুনি হয় নারী পাচারকারী, নয়তো সিরিয়াল কিলার। প্রতিবার খুনের পরে নিহত তরুণীর ফোন ব্যবহার করে কথা বলেছে পরের শিকার-এর সঙ্গে। তদন্ত শুরু হতে অবশেষে পুলিশের পাতা ফাঁদে পা দিল মোহনকুমার। পুলিশের দাবি, জেরায় মোহন কুমার জানিয়েছে, তার শিকারের সংখ্যা ৩২। ২০ মাথায় ধরা পড়া গেলেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct