জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আরো ২১ দিন লকডাউন ঘোষণা করেছেন। এর আগে তিনি যে জনতা কারফিউ জারি করেছিলেন তাতে মানুষের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। এবার ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৩ সপ্তাহ ধরে দেশ লকডাউনে থাকবে বলে ঘোষণা করেছেন মোদি।তাতে সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে চলেছে খেটে খাওয়া মানুষজন। যারা দিন এনে দিন খায় তারা কাজ পাচ্ছে না। খাবার কওনার তাই ক্ষমতা নেই। সরকার থেকেও কোনো খাবারের ব্যবস্থা নেই। এই পরিস্থিতিতে অনেককে না খেয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিবিসির সাংবাদিক বিকাশ পাণ্ডে রাজধানী দিল্লির শহরতলী অঞ্চল নয়ডার লেবার চক অঞ্চল ঘুরে দেখে তার সরেজমিন রিপোর্ট তুলে ধরেছেন। নয়ডার ওই এলাকা সব সময় পরিপূর্ণ থাকে কাজের খোঁজে থাকা নির্মাণ শ্রমিকে। প্রমোটাররা এই জায়গায় এসে শ্রমিক ভাড়া করে নিয়ে যান। তবে জনতা কারফিউ চলাকালে রবিবার সকালে বিবিসির সাংবাদিক বিকাশ যখন ওই এলাকায় যান, তখন এলাকাটি ফাঁকা, পুরোপুরি শান্ত, চুপচাপ। যাদেরকে তিনি দেখতে পেয়েছেন তাদেরকে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করেন, তারা জনতা কারফিউ মেনে চলছে কিনা। সেখানে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বানডা জেলা থেকে কাজের খোঁজে আসা রমেশ কুমার জানান, তারা শ্রমিকের কাজ পাওয়ার আশায় এসেছেন। ঘরে যে খাবার আছে কয়েকদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। করোনা ভাইরাসের ভয় আমারও আছে, কিন্তু আমরা সন্তানরা না খেয়ে আছে, এটি সহ্য করব কিভাবে।
দিনমজুরদের এই একই অবস্থা। তিন সপ্তাহ লকডাউন চলার সময় তাদের আয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এ রকম অনেক পরিবারের মজুদ খাবার শেষ হয়ে যেতে পারে।
এলাহাবাদ শহরের রিকশাচলাক কিশান লাল এদের মতো একজন। আগের চারদিন তিনি কোনো কামাই করতে পারেননি বলে জানান। “আমার পরিবারকে খাওয়ানোর জন্য উপার্জন করা দরকার। আমি শুনেছি সরকার আমাদের টাকা দেবে। কিন্তু কখন কীভাবে দিবে তা জানি না,” বলেন তিনি।
কিশানের বন্ধু আলী হাসান একটি দোকানে ক্লিনারের কাজ করেন, খাবার কেনার মতো কোনও টাকা নেই বলে জানান তিনি। “দু দিন আগে দোকান বন্ধ হয়ে গেছে কিন্তু আমার টাকা পাই নি। কখন দোকান খুলবে তাও জানি না। আমি খুব ভয়ে আছি। আমার পরিবার আছে, তাদের খাওয়াবো কীভাবে?” প্রশ্ন তার। তার কাছে আর খাবার কেনার কোনো পয়সা নেই।
উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত ভারতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৫০০ জনেরও বেশি এবং মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১০ জনের।