মুসলিমদের ধর্মস্থান মসজিদ থেকে এবার করোনা ভাইরাস থেকে নিনেদের বাঁচানোর আর্জি জানানো হয় এ রাজ্যে। এ ব্যাপারে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি তৎপরতা দেখা গেছে মুর্শিদাবাদে। করোনা ভাইরাস থেকে নিজেদের বাঁচাতে ভোর রাতে ফজরের আযান দেওয়ার পর ইমামের ঘোষণা হচ্ছে, মুর্শিদাবাদ জেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষ নানা পেশার কারণে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করে থাকেন। গোটাদেশে এই মহামারী ঘোষণা হওয়ার পর অনেকেই ভিন রাজ্য থেকে মুর্শিদাবাদে নিজ বাসভূমে ফিরে আসছেন। সেই সমস্ত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে, আগে নিজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান, তারপর পরিবারের কাছে যান। আপনার ভুলের জন্য অন্যর ক্ষতি করবেন না। কাজেই নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে বাড়িতে পরিবারের কাছে যান। হ্যাঁ, এই রকমই বার্তা এখন মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রামে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশ, রাজ্যে সব থেকে পিছিয়ে পড়া জেলা মুর্শিদাবাদ আর এখান থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করেন। বিশেষ করে মহারাষ্ট্র ,কেরালা, চেন্নাই, দিল্লি ,হরিয়ানা, ঝারখান্ড সহ অন্যান্য রাজ্যে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সমস্ত ইমামকে কাজে লাগানো হয়েছে। আর তারা প্রচারের জন্য বেছে নিচ্ছেন ফজরের আযানের পরের সময় কে। গ্রামের ইমামদের তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে পেরে জেলার প্রশাসন করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এতে সাফল্য পেয়েছে ব্যাপক।
গ্রামের ইমামরা ফজরের আযানের পর সময়কে কেন বেছে নিচ্ছেন, এ প্রসঙ্গে, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এর বক্তব্য, গ্রামের মানুষ সারাদিন কোন না কোন কাজে ব্যস্ত থাকেন। গ্রাম বাংলার মানুষ তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন। অধিকাংশ মানুষই ফজরের নামাজের জন্য উঠে পড়েন।আযান শোনার পর তারা আর বিছানায় শুয়ে থাকেন না। কাজেই এই সময় যদি ঘোষণা দেয়া হয় সেটি সবথেকে বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। মানুষ আযান শোনার পর আর সকালে কাজে বের হবেন না। আর তাদের কোনো সদস্য যদি বাইরে থেকে দেশে ফিরে আসেন তাহলে তার স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। যার কারণে ফজরের সময় কি বেছে নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন জেলা প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় থানা থেকে তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সচেতনতার কাজ করার জন্য। গ্রামের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে মানুষকে সচেতনতার বার্তা দিচ্ছেন।
মুর্শিদাবাদ জেলা ইমাম নিজাম উদ্দিন বিশ্বাস বলেন জেলা প্রশাসনের নির্দেশ এর ফলে জেলার বিভিন্ন ব্লকে এই কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় কি কি গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া যায় সেগুলো সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের এক নির্দেশে তাদের দেয়া হয়েছে সেই নির্দেশের ফলে মসজিদে মসজিদে প্রচারের কাজ চালানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেন ছোট ছোট জামাত করে নামাজ পড়া হচ্ছে।মসজিদেও খুব বেশি মুসল্লির আনাগোনা যাতে না হয় সেজন্য বাড়িতে অন্তত সুন্নত নামাজ আদায় করা হচ্ছে। তিনি বলেন ,করোনা ভাইরাস অত্যন্ত ভয়াবহ আগে দেশ বাঁচাতে হবে।আর দেশ বাঁচলে আমরা বাঁচবো তাই মানুষকে এই সচেতনতা বার্তা দেয়া হচ্ছে।
জেলা ইমাম সংগঠনের নেতা মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জেলা ইমামদের করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কাজে লাগানো হয়েছে তারা সতর্কতামূলক বার্তা দিচ্ছেন সাধারণ মানুষের। গ্রামের মসজিদ গুলিকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মসজিদে গামছা ঝুলিয়ে রাখা থাকে। মুসল্লীরা ওযুর পর হাত এবং মুখ মুছে নেন।সেই সমস্ত গামছা সরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নিজ নিজ বাড়ি থেকে অজু সেরে মসজিদে আসার কথা বলা হয়েছে। প্রত্যেকে যাতে মাক্স ব্যবহার করেন সে কথাও বলা হচ্ছে। সাবান দিয়ে ভালো করে হাত-মুখ যাতে বারবার ধোয়া হয় সে কথা বলা হচ্ছে। তিনি বলেন প্রত্যেক মসজিদ থেকেই করোনা প্রতিরোধের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় থানা এবং ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতা কাজে ইমামদের লাগানো হয়েছে। তারা সেই সমস্ত কাজ করে যাচ্ছেন। মাওলানা আব্দুল রহমান বলেন বহু মানুষ বাইরে থেকে ফিরে আসছেন। তাদেরকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরীক্ষা করেই তবে বাড়িতে আসার পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি বলেন মুর্শিদাবাদ জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা অত্যধিক । তাই প্রশাসন এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে । তিনি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct