পাকিস্তানের রাজনীতিতে ছক্কা হাঁকালেন ইমরান খান। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে অভিষেক হওয়াটা এখন কেবল সময়ের ব্যপার মাত্র। যার পুরো নাম ইমরান খান নিয়াজি। বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই অলরান্ডার খেলোয়াড়ি জীবনের মতো রাজনীতির ময়দানেও সফল। ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে যৌথভাবে আয়োজন করা বিশ্বকাপের শেষ তারই হাতে উঠে এসেছিল বিশ্বজয়ের কাপ। সেদিন পাকিস্তানের মানুষকে ক্রিকেটে বিশ্বজয়ের আনন্দ তিনিই দিতে পেরেছিলেন। এবার কি পাকিস্তানের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনন্দ দিতে পারবেন।
বুধবার অনুষ্ঠিত ভোটের ফলাফল এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে ঘোষণা করা হয়নি। তবে সর্বশেষ প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায়, ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) ১১৬টি আসনে জয় য়েছে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (এন) পেয়েছে ৫৯ আসন। আর বিলওয়াল ভুট্টো জারদারির পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৩৭টি আসন। যান্ত্রীক ক্রুটির কারণে ফলাফল ঘোষণা আপাতত স্থগিত রয়েছে। তবে ইমরান খানই যে পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী সে ব্যাপারে সংশয় নেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
রাজনৈতিক দিক থেকে গোলযোগে ভরা দেশটিতে রাজনীতির আঙিনায় ইমরানের দল পিটিআই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছিল সঙ্ঘত কারনেই। ভোটে জয় পাওয়ার পর এখন দেখার বিষয়, ক্রিকেটের মূলধনকে রাজনীতির মূলধনে রূপান্তর করতে কতটা সক্ষম হবেন অক্সফোর্ডের এই সাবেক শিক্ষার্থী।
১৯৫২ সালের ৫ অক্টোবর লাহোরে জন্ম। এক সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ইক্রামূল্লা খান নিয়াজি এবং শৌকত খানুমের ছেলে তিন। লাজুক এই ছেলেটি বড় হতে থাকে তার চার বোনের সাথে। লাহোরের এচিসন কলেজ পড়াশুনা৷ পরে অক্সফোর্ডে থেকে স্নাতক হন ১৯৭৫ সালে। ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে টেস্ট ক্রিকেট অভিষেক। তার তিন বছর বাদে অবশ্য একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নেওয়া। ১৯৮২ সালে পাকিস্তানের ক্যাপ্টেন হন। ৮৮টি টেস্ট খেলে তার ঝুলিতে রয়েছে ৩৬২টি ইউকেট ৩৮০৭ রান। অন্যদিকে ১৭৫টি একদিনের ম্যাচ খেলে তিনি রান ৩৭০২ রান করেন এবং ১৮২টি উইকেট পান। তার ক্যাপ্টেন্সিতে ৪৮টি টেস্টে পাকিস্তান ১৪টি জেতে এবং ৮টিতে পরাজিত হয়েছিল।
১৯৯৬ সালে ইমরান খান গঠন করেন তার রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফ। ১৯৯৭ সালে তিনি নির্বাচনে দুটি কেন্দ্র থেকে দাঁড়ালেও দুটিতেই হেরেছিলেন। তবে ১৯৯৯ সালের তিনি পারভেজ মোশারফের সামরিক অভুত্থানকে সমর্থন করেন এই আশায় যে দেশ থেকে দুর্নীতির অবসান ঘটবে। ২০০২সালে নির্বাচনে তিনি জেতেন। এদিকে ২০০৭ সালে ২ অক্টোবর তিনি আরও ৮৫জন পার্লামেন্ট সদস্যদের সাথে পদত্যাগ করেন আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিরোধিতা করে কারণ সেবার সেনা প্রধান পদ থেকে পদত্যাগ না করেই নির্বাচনে লড়ছিলেন মোশারফ। এরপর প্রেসিডেন্ট হয়ে মোশারফ জরুরি অবস্থা জারি করে ইমরানকে গৃহবন্দী করেন। ওইসময় কিছুদিন তাকে হাজতবাসও করার পর মুক্তি পান।
২০১৩ সালে পকিস্তানে নির্বাচনে তার দল দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আসন জেতে। ২০১৮তে ফের ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে নেমে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে যান। যদিও তার এই জয়ের পেছনে সেনাবাহিনীর হাত রয়েছে বলে বিরোধী মহল থেকে অভিযোগ রয়েছে।
তবে ইমরান ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মাঝে মাঝেই বিতর্ক উঠেছে। তার প্লে-বয় ইমেজ নিয়ে নানা রটনা। ১৯৯৫ সালে তার সাথে জেমিমা গোল্ডস্মিথেব বিয়ে হলেও ২০০৪ সালে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর ফের ২০১৫ সালে ব্রিটিশ- পাকিস্তানী সাংবাদিক রেহাম খানের সাথে পরিণয় হলেও সে বিয়েও টেকেনি বেশি দিন ওই বছরেই ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপরে আবার ইমরানের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং বিয়ে হয় তার আধ্যাত্মিক উপদেষ্টা বুশা মানিকার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct