হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োটেকনোলজি পড়ার সময় নিধি এবং শিখর সিংহের পরিচয়। সেখানেই প্রেম। নিধির বরাবরই ইচ্ছা ছিল মার্কেটিংয়ের চাকরি করার। পড়াশোনা শেষ করে নিধি একটি মার্কিন সংস্থায় মার্কেটিং এবং বিজনেস ডেভেলপমেন্টের চাকরি পান। বায়োটেকনোলজি নিয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ করতে শিখর যান হায়দরাবাদ। সেখানেই প্রথম উপলব্ধি করেন, ন্যায্য মূল্যে স্বাস্থ্যকর খাবার কোথাও নেই, মানুষের ভরসা তাই স্ট্রিট ফুড। আর তখনই সিঙ্গাড়া কিয়স্ক খোলার ইচ্ছার কথা নিধিকে জানান তিনি। কিন্তু তখন ব্যবসা শুরুর প্রয়োজনীয় টাকা ছিল না। ২০০৯ সালে শিখর বায়োকন কোম্পানিতে যোগ দেন। এর দুবছর পর বিয়ে করেন নিধি-শিখর। সংসার, চাকরি— সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু শিখরের মনের কোণে সেই সিঙ্গাড়া কিয়স্ক রয়ে গিয়েছিল। ২০১৫ সালে শেষ পর্যন্ত দুজনে ব্যবসাটা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। শিখর তার পরদিনই চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। নিধিও কোম্পানিতে কথা বলে ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর ব্যবস্থা করে ফেলেন। প্রথমে বেঙ্গালুরুতে ফ্ল্যাটের কাছেই ছোট একটা ঘর ভাড়া নিয়ে সিঙ্গাড়া বিক্রি শুরু করেন তারা। রাঁধুনিও রেখেছিলেন। কিয়স্কের নাম হয় ‘সামোসা সিং'।২০ টাকায় দুটো আলু সিঙ্গাড়া আর ৫৫ টাকায় দুটো অর্থাৎ এক প্লেট চিকেন মাখানি সিঙ্গাড়া। এছাড়া, চকোলেট সিঙ্গাড়াও বিক্রি শুরু করেন তারা। পাশাপাশি হোম ডেলিভারিও চলছিল। প্রতিদিন প্রায় ৫০০টা করে সিঙ্গাড়া বিক্রি হচ্ছিল।
এবার আরও বড় কিছু করার সময় এসে গিয়েছিল। নিধি এবং শিখর করপোরেট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। জার্মানির ইঞ্জিনিয়ারিং জায়ান্ট ‘দ্য কোম্পানি' তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। ৮ হাজার সিঙ্গাড়ার অর্ডার দেয়। ব্যবসাটাকে বড় জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সেটাই ছিল সেরা সুযোগ। কিন্তু সমস্যা ছিল অর্থের। নিধি এবং শিখর তাদের ফ্ল্যাট বিক্রি করে দেন। সেই টাকা ব্যবসায় নিয়োগ করেন। একটা বড় রান্নাঘর কিনে তৈরি করেন তারা। এরপর আইনক্স, পিভিআর, ক্যাফে কফি ডে, টিসিএস সমস্ত জায়গায় ক্রমে তাদের নিজের আউটলেট খোলা হয়। বেঙ্গালুরুতে তাদের ৭টা আউটলেট রয়েছে বর্তমানে। ব্যবসা আরও বাড়ানোর জন্য নিধি সিঙ্গাড়া উৎসবের আয়োজন করেন। বিভিন্ন করপোট কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানান। উৎসবে সিঙ্গাড়া খেয়ে অনেকেরই ভাল লেগে যায়। তারা তাদের সংস্থায় ‘সামোসা সিংহ'-এর আউটলেটের ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে দিনে ১০ হাজার সিঙ্গাড়া তৈরি করে ‘সামোসা সিং'। সমস্ত আউটলেটে ফ্রোজেন সিঙ্গাড়া চলে যায় রান্নাঘর থেকে। গ্রাহককে সরাসরি গরম গরম ভেজে দেওয়া হয়। বর্তমানে ‘সামোসা সিং'-এর ব্যবসার পরিমাণ ৫ কোটি টাকা।