ভারত ১৫ ই আগস্ট, ১৯৪৭ স্বাধীন হয়। ভারত এই সময়ে একটি স্থায়ী সংবিধান ছিল না। খসড়া কমিটি ১৯৪৭ সালের ৪ নভেম্বর জাতীয় সংসদে জাতীয় সংবিধানের প্রথম খসড়াটি উপস্থাপন করে। জাতীয় পরিষদ ২৪ জানুয়ারি, ১৯৫০ সালে সংবিধানের চূড়ান্ত ইংরেজী ও হিন্দি ভাষা সংস্করণের স্বাক্ষর করে।ভারতের সংবিধানটি গণপ্রজাতন্ত্রী ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫০ সালে কার্যকর হয়ে ওঠে। এই তারিখটি নির্বাচিত হয়েছিল ২৬ শে জানুয়ারি, ১৯৩০ সালে। পরে ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হলে প্রতি বছর এই দিন পালন করা হয় ভারতের গণতন্ত্র দিবস হিসাবে।
সাধারণ তন্ত্র বা প্রজাতন্ত্র
এই শব্দযুগল প্রত্যেক ভারতবাসীর নিঃশ্বাস, প্রশ্বাস বা বলা যায় রক্তের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রজাতন্ত্র অথবা সাধারণতন্ত্র এই শব্দ দুটি নিজেরাই ব্যখ্যা করছে “লোকের জন্য এবং লোকের দ্বারা” । কিন্তু যদি আমরা একটু গভীর ভাবে ভাবি তাহলে সত্যি কি তাই ! একটু খেয়াল করলেই লক্ষ্য করা যাবে যে কোথাও একটা “রাজা” জড়িয়ে আছে প্রজায়; মানে যেখানে শাসন ক্ষমতা একজনের কাছে আর বাকিরা তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কিংবা শোষিত ! এর কারণ আমরা নিজেরাই । আমরাই তো গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে তার হাতে আমাদের শাসনভার তুলে দিচ্ছি ব্রিটিশ রাজতন্ত্র-এর অনুকরণে । কারণ সেখানে রাজা বা রানী আছে, প্রধানমন্ত্রী আছে কিন্তু আসল ক্ষমতা থাকে রাজা বা রানীর কাছে ।
রাজপ্রাসাদ থেকেই সমস্ত নিয়ম ঠিক করে দেয়া হয় আর প্রধানমন্ত্রী শুধু তা সাধারণ জনগণকে জ্ঞাত করেন। পার্থক্য শুধু একটাই, আমাদের এখানে কোনো রাজা নেই, তার জায়গায় রয়েছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আর প্রধানমন্ত্রীর জায়গায় রয়েছেন রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল ।
তাহলে কি প্রজাতন্ত্র আর সাধারণতন্ত্র অথবা গণতন্ত্র সমার্থক ? গণতন্ত্র শব্দটিতেই এর অর্থ নিহিত রয়েছে । “গণ” যার অর্থ সাধারণ অর্থাৎ আপামর ভারতবাসী যাদের জন্যই গণতন্ত্র দিবস । গণতন্ত্র মানে তাই জনসাধারণের জন্য আর জনসাধারণের দ্বারা । প্রজাতন্ত্র অনেকটা গণতন্ত্রের মতো কিন্তু শেষে একটা রাজা বা শাসক থাকে, যেমন ইংল্যান্ডের শাসন ব্যবস্থা হলো প্রজাতান্ত্রিক আর আমেরিকার শাসন ব্যবস্থা হলো গণতান্ত্রিক ।
তাই এটা হয়তো বলা যেতে পারে যে শুনতে একরকম হলেও গণতন্ত্র আর প্রজাতন্ত্র সমার্থক নয় ।
প্রজাতন্ত্র দিবস সম্বন্ধে অনেক ব্যাখ্যা হলো, এবার ইতিহাস নিয়ে একটু চর্চা করা দরকার যে কিভাবে প্রজাতন্ত্র দিবসের ভাবনা এলো । প্রাপ্ত তথ্য থেকে যতদূর জানা যায় ১৯৪৭ সালের ৪ঠা নভেম্বর থেকে খসড়া কমিটি ১৬৬ বার সংসদের অধিবেশনে মিলিত হয় যেখানে সাধারণ মানুষও অংশগ্রহন করেছিল এবং যা প্রায় ২ বছর ১১ মাস ১৮ দিন ধরে চলেছিল সংবিধান প্রস্তুত করার জন্য । ১৯৪৬ সালের ৯ই ডিসেম্বর প্রথমবার গণপরিষদ সংসদের সংসদীয় কক্ষে মিলিত হয়েছিল যাতে স্বাধীন ভারতের প্রথম গণতান্ত্রিক সরকারের ভিত শক্তপোক্ত ভাবে তৈরি হয় ।
ব্রিটিশ সরকারের তৈরি ক্যাবিনেট মিশন ভারতে আসে ১৯৪৬ সালে, শান্তিপূর্ণ এবং সরলভাবে দেশ পরিচালনার ক্ষমতা ভারতীয় নেতৃবৃন্দর হাতে হস্তান্তরিত করার জন্য । ক্যাবিনেট মিশন কর্তৃক নির্দেশিত নির্দেশনামা অনুযায়ী ২৯২ জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে স্বাধীন ভারতের প্রথম গণপরিষদ গঠন করবেন । প্রথম নির্বাচিত গণপরিষদের কিছু বর্ণময় ব্যাক্তিত্ব হলেন সর্দার বল্লবভাই প্যাটেল, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, সরোজিনী নাইডু এবং পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু যাঁদের উপর গুরুদায়িত্ব ছিল ভারতের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, আর্থসামাজিক সমতা, ন্যায়বিচার এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা ।
১৯৪৯ সালের ৯ই ডিসেম্বর খসড়া সংবিধান অনুমোদন পায় এবং এর ঠিক এক মাস পরে ১৯৫০ সালের ২৬ই জানুয়ারী সংবিধান আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমতায় আসে যার মাধ্যমে নতুন দেশ গণতান্ত্রিক ভারতের জন্ম হয়।
বছরে ৩৬৫ দিন থাকলেও কেন শুধু ২৬ ই জানুয়ারী প্রজাতন্ত্র দিবস পালিত হয় সেটাও একটু জানা দরকার । ১৯২৯ সালের ৩১ সে ডিসেম্বর নেহরুজী লাহোরে প্রথমবার তিরঙ্গা উত্তোলন করেন এবং ১৯৩০ সালের ২৬ সে জানুয়ারী স্বাধীনতা দিবস হিসাবে ধার্য করেন । ওই দিনটাকে তারপর থেকে পরবর্তী ১৭ বছর ধরে “পূর্ণ স্বরাজ ” দিবস হিসাবে পালন করা হয়. কিন্তু স্বাধীনতা আসে ১৫ ই অগাস্ট, তাই ২৬ জানুয়ারী দিবসটিকে পালন করা হয় পরাধীন ভারতবর্ষ থেকে আধুনিক গণতন্ত্রে রূপান্তরিত হওয়ার দিন অর্থাৎ প্রজাতন্ত্র দিবস হিসাবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct