হরিশ্চন্দ্রপুর,৬ জানুয়ারি: ভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু হল এক আদিবাসী কিশোরের। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে সারা গ্রাম জুড়ে কান্নার শব্দ। চারিদিকে শোকের ছায়া।কারন নতুন বছরের পঞ্চম দিনেই বাড়ি ফিরলো আদিবাসী মুকেশ মুশরের নিথর দেহ। ভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে গর্তে মাটিচাপা পরে গিয়ে অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু হয়েছে ঐ তরুণ কিশোরের।
মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানার কুশডাঙি গ্রামের বাসিন্দা মুকেশ(১৬)। প্রায় দুই মাস আগে স্থানীয় এক ঠিকাদার জাকির হোসেন স্মার্ট মোবাইল ও টাকার প্রলোভন দেখিয়ে দাদনে অগ্রিম কিছু টাকা দিয়ে পাইপলাইন ও ড্রেনের কাজ করার জন্য আসাম গোয়াহাটির নাইপার এলাকায় কাজ করতে পাঠান। শনিবার আসাম গোয়াহাটির নাইপার থেকে শ্রমিকেরা তাদের বাড়িতে ফোন করে জানান যে মুকেশ প্রায় ছয় ফিট গর্তে ইট বসানোর সময় মাটি ধসে তার উপরে পড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলে মারা যায়। ক্রেন দিয়ে মাটি তুলে মৃতদেহটিকে উদ্ধার করে নাইপার থানার পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠান। ছেলের মৃত্যু দেহের অপেক্ষায় বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসীরা অপেক্ষায় রয়েছে। এরপর থেকে এলাকায় যথেষ্ট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
মৃত মুকেশের মা লীলা মুশর জানান, বাড়ির কাউকে না বলেই ছেলেকে মোবাইল কিনে দিয়ে ও টাকার লোভ দেখিয়ে এলাকার স্থানীয় শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করতে পাঠিয়ে দেন। এদিন মা ও ছেলে দুজনেই মাঠে ধান কাটছিলাম। স্থানীয় ঠিকাদার জাকির হোসেনের পরামর্শে ছেলে আগেই বাড়ি চলে আসে। তারপর বাড়িতে এসে দেখি ছেলে নেই। খোঁজাখুঁজির পরের দিন জানতে পারি তার ছেলেকে ভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে পাঠিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
তার মা আরো জানান, তারা দিন আনে দিন খায়। স্বামী অসুস্থ কাজ করতে পারে না। স্বামী-স্ত্রী ওচার ছেলেকে নিয়ে তার অভাবের সংসার। মুকেশ মিশর কনিষ্ঠ ছেলে। অসুস্থ বাবার সঙ্গেই সবসময় থাকতো। ছেলেকে হারিয়ে বাবা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মৃত্যুর খবর ঠিকাদারের কাছে জানতে চাইলে সে পুরোপুরি মিথ্যা বলে যে তার ছেলে সামান্য আঘাত পেয়েছে এবং হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। গতকাল বিকেল চারটার সময় জানতে পারে তার ছেলে গর্তে মাটি চাপা পড়ে মারা গেছে। থানায় অভিযোগ করতে গেলে ঠিকাদারের বাবা মান্নান হাজী তাদের বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে যায়, যে পুলিশ কে বলেও তার কিছু ক্ষতি করতে পারবে না বলে জানান।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার কুশডাঙি গ্রামের প্রায় ৪০ জন কিশোর এই এলাকায় কাজ করে। এরা সকলেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের। সমাস নিজ এলাকায় থাকে ছমাস ভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এর আগেও দুমাস আগে (৮.১১.২০১৯)এই এলাকার আরেক কিশোর শহিত মুশর এই ধরনের কাজ করতে গিয়ে মারা যায়।
মৃত সহিত মুশরের দাদা সিপি মুশর, জানান তার কনিষ্ঠ ভাইকে জাকির হোসেন ভিন রাজ্যে কাজ করতে পাঠালে দুমাসের মধ্যেই সেও গর্তে মাটি চাপা পরে মারা যায়। কোম্পানির পক্ষ থেকে ৩ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিলেও তারা এখনো পর্যন্ত টাকা পায়নি বলে অভিযোগ।
দুই পরিবারের অভিভাবকেরা হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় ঠিকাদারের নামে অভিযোগ দায়ের করেছে। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ মৃত্যুর রহস্য তদন্ত শুরু করেছে। ঠিকাদার মৃতুর খবর পেতেই বাড়ি থেকে উধাও। তার খোঁজ হরিশচন্দ্রপুর থানার পুলিশ শুরু করেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct