শারিরীক নিগ্রহের পাশাপাশি অশ্লীল গালিগালাজ করে চরম হেনস্থা করা হল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ অধ্যাপক তথা সাহিত্যিক সৌরেন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বৃহস্পতিবার বিকালের দিকে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরেই এই হামলার ঘটনা নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। শারিরীক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অধ্যাপক বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পুলিসের কাছে তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বলেও জানিয়েছেন ওই প্রবীণ অধ্যাপকের সহকর্মীরা। অধ্যাপক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর এই আক্রমণকে সরাসরি শিক্ষকদের উপরে আঘাত বলেই দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
উল্লেখ্য, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনার পাশাপাশি জাতীয় সেবা প্রকল্পের বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের দায়িত্বেও রয়েছেন সৌরেনবাবু। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় সেবা প্রকল্পের কাজকর্মের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন।
হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে সৌরেনবাবু বলেন, এদিন বিকাল সাড়ে চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে কয়েকজন ছাত্র আচমকাই আমাকে এসে ঘিরে ধরে। তাঁরা দাবি করতে থাকে যেভাবেই হোক অখনই তাঁদের জাতীয় সেবা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আমি তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করি নিয়ম মেনে তাঁরা ভর্তি হতে পারেন। তবে পদ্ধতি মেনেই তা করতে হবে। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁরা আমাকে হেনস্থা করা শুরু করে। আমার ধারণা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়েই তাঁরা আমার কাছে এসেছিল। জাতীয় সেবা প্রকল্পে ভর্তি হওয়ার দাবিটা একটা অজুহাত মাত্র।
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই বিক্ষোভকারীরা মারমুখী হয়ে ওঠেন বলে আহত অধ্যাপকের দাবি। তাঁকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়াও হয়। কনুই ও ঘাড়ে আঘাত পেয়ে লুটিয়ে পড়েন ওই প্রবীণ অধ্যাপক। পরিস্থিতি বুঝে হামলাকারীরা সরে পড়ে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে।
সৌরেনবাবু বলেন, ঘটনার অভিঘাত সামলে কোনও মতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বিপ্লব গিরির দফতরে গিয়ে দেখি সেখানে আগে থেকেই বসে রয়েছেন ওই বিক্ষোভকারীদের অনেকেই। আহত ওই অধ্যাপকের দাবি, এই হামলার সামনে ছিলেন যাঁর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ভর্তি হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তেমনই এক ছাত্র। ওই ছাত্র সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে তিনি পুলিসের কাছে অভিযোগ করেছেন বলেও জানিয়েছেন সৌরেনবাবু।
এদিকে অধ্যাপকের উপর হামলার ঘটনার চরম নিন্দা করেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রসূন রায় বলেন, এই ঘটনায় ধিক্কার জানানোর কোনও ভাষা নেই। আমরা অভিযুক্ত হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারি দাবি করছি। অবিলম্বে গ্রেপ্তার না হলে আমরা আন্দোলনের পথে হাঁটতে বাধ্য হব। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ঘটনায় কী ভূমিকা পালন করছে সেদিকেও নজর রাখছি আমরা।
সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সম্পাদক শুভায়ু দাসও এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার দাবি তুলেছেন।
এদিন সন্ধ্যায় আহত অধ্যাপককে দেখতে ছুটে যান তাঁর সহকর্মী থেকে ছাত্রছাত্রীরা।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অবশ্য কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন, আহত অধ্যাপকের বক্তব্য। তাঁর দাবি, জাতীয় সেবা প্রকল্পে ভর্তি্র আবেদনকারীদের ওই অধ্যাপকই কিছু পড়ুয়াদের দিয়ে হেনস্থা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই অধ্যাপকের শর্করা কমে যাওয়াতেই সম্ভবত তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে শুনতে পাচ্ছি। তবে পদত্যাগী উপাচার্যের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের বক্তব্যকে অবশ্য মনগড়া ও বিভ্রান্তিমূলক বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক মহলই।