অযোধ্যা: উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ মামলার সূচনাকারী প্রবীণতম বাদী হাসিম আনসারি (৯৬) আজ মারা গেছেন। (ইনালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।) বুধবার সকাল ৫ টা ৩০ নাগাদ তিনি নিজ বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মরহুম হাসিম আনসারির ছেলে ইকবাল আনসারি বলেন, আজ সকালে তিনি ফজরের নামাজ পড়তে উঠতে পারেনি। এরপরেই পরিবারের লোকজন বুঝতে পারেন তিনি মারা গেছেন। সন্ধ্যায় তার দাফন সম্পন্ন হবে। হাসিম আনসারির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই আজ সকাল থেকে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মানুষের ঢল নামে। অনেকদিন ধরে তিনি অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তার মৃত্যুতে হনুমানগড়ির মহন্ত জ্ঞানদাসসহ অযোধ্যার অন্য সাধুরা শোক প্রকাশ করেছেন। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার জাফর ইয়াব জিলানি বলেন, আনসারীর মৃত্যুর পর এবার তার ছেলেকে এই মামলার বাদী করা হতে পারে। হাসিম আনসারি মারা যাওয়ায় মুসলিম পক্ষ এই মামলায় দুর্বল হতে পারে এমন কথা তিনি নাকচ করে দেন। প্রয়াত হাসিম আনসারি বহু বছর ধরে বাবরি মসজিদের মালিকানা অধিকারের জন্য আদালতে লড়াই চালিয়েছেন। গত বছর ডিসেম্বরে যখন বাবরি মসজিদ নিয়ে বিতর্কিত জায়গায় শিলা পুজো করে মন্দির নির্মাণের তৎপরতা শুরু হয়, সেসময় তিনি তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন। তিনি সেসময় বলেন, ‘এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা রয়েছে, সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে তা মানা হবে।’তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিলাপুজো বন্ধ রাখার দাবি করেছিলেন। চলতি বছরের মে মাসেই সাধু-সন্তরা আগামী ৯ নভেম্বর থেকে রাম মন্দির নির্মাণ হবে বলে ঘোষণা দেয়ায় তাদের উপরে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে হাসিম আনসারি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ‘কেউ যেন আইনকে বিদ্রূপ না করে, তাহলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।’ হাসিম আনসারী বলেন, ‘মসজিদকে তো ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এবার যদি মন্দির তৈরি করার চেষ্টা করা হয় তাহলে মন্দিরও তৈরি হয়ে যাবে। কিন্তু দেশ বিধ্বস্ত এবং ধ্বংস হয়ে যাবে। ’ গত ৬০ বছর ধরে তিনি বাবরি মসজিদ মামলার প্রধান বাদী ছিলেন এবং এই মামলার দেখভাল করেছেন।১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে বাবরি মসজিদের মধ্যে রামের মূর্তি দেখা গেলে তিনিই মসজিদের পক্ষে ফৈজাবাদ আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য তিনি কংগ্রেসের প্রয়াত নেতা এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওকে দায়ী করে বলেন, নরসিমা রাও-ই বাবরি মসজিদ ধ্বংস হতে দিয়েছিলেন। হাসিম আনসারি বলেন, ‘উনি (নরসিমা রাও) প্রথম থেকেই এই বিষয়টি জানা সত্ত্বেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এজন্য আমি মনে করি এই বিষয়ে তার প্রধান ভূমিকা ছিল। যদিও বাবরী মসজিদ ধ্বংস মামলায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়নি।’ হাসিম আনসারি বলেন, ‘ওই ঘটনার পরে নরসিমা রাও পুনরায় মসজিদ নির্মাণ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মসজিদ তৈরি না করে মুসলমানদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’ বাবরী মসজিদ মামলার নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতার জেরে হাসিম আনসারি একসময় খানিকটা হতাশ হয়ে বলেছিলেন, হয়তো আমাদের মৃত্যুর পর এই মামলার সমাধান হবে। এই মামলার অন্যতম প্রধান দুই বিবাদী নির্মোহী আখড়ার রাম কেবল দাস এবং দিগম্বর আখড়ার রামচন্দ্র পরমহংসের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। আদালতে এ নিয়ে মামলা চললেও তাদের মধ্যে পারস্পারিক সুসম্পর্ক অক্ষুণ্ন ছিল। রামচন্দ্র পরমহংস এবং হাসিম আনসারি আদালতে প্রায়ই এক রিকশায় অথবা গাড়িতে যাতায়াত করতেন। ১৯৭৫ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হলে তাকে সেসময় ৮ মাস ধরে কারাগারে থাকতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন: