জন্মের ছয় মাসের মাথায় মা-বাবার বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। অভাবি সংসারের ঘানি টানতে মধুপুর শহরের হাটবাজারে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ নেয় মা জমেলা।
হাটের অপরিচ্ছন্ন রাস্তার ধারে অনাদরে বসিয়ে রাখতেন শিশুকে। ক্ষুধা আর তৃষ্ণার কান্না শুনলে হাতের কাজ ফেলে পান করাতেন বুকের দুধ।
ক’দিন পর খেয়াল করলেন অনাদরের বেড়ে ওঠা শিশুটি বেজায় ভাব বেওয়ারিশ কুকুরের সঙ্গে। তখন থেকে ওই শিশুর মায়ের বুকের দুধ পানের আগ্রহ কমতে থাকে। দুশ্চিন্তায় পড়ে যান মা জমেলা। এক দিন ছেলের কাণ্ড দেখে হতবাক হয়ে যান জমেলা। হাটের আবর্জনার স্তূপের আড়ালে কুকুরের দুই ছানার সঙ্গে মা কুকুরের স্তন চুষে খাচ্ছে তার ছেলে।
জোর করে সরিয়ে নেন শিশুকে। এরপর কাজের সময়েও কড়া নজরে রাখতেন রাস্তার ওপর বসিয়ে রাখা শিশুটির দিকে। কিন্তু সুযোগ পেলেই দলবেঁধে নেড়ি কুকুর ছুটে আসত ওই শিশুটির কাছে। আর সেও নির্ভয়ে পান করত কুকুরের স্তন। দেখতে দেখতে ১৬-এর কোঠায় পা রেখেছে সে।
স্থানীয়দের কাছে ফখরা নামে বেশ পরিচিত। যদিও ছেলেটির পুরো নাম ফখরউদ্দিন। যদিও সে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে একটি মাত্র কারণের জন্য। আর সেটি হল তার রাস্তার কুকুরের সঙ্গে বড় হয়ে ওঠার গল্প। জন্মের ছয় মাস বয়স থেকেই কুকুরের সঙ্গে ওঠা-বসা। শুধু উঠা বসাই নয় কুকুরের স্তন পান করে ফখরার বড় হওয়া।
অনাদরে থাকা ফখরা অনেকটা কুকুরের মাতৃস্নেহেই বেড়ে উঠছে। মানুষ নয়, কুকুর তার আপনজন। ওদের ভাষা বুঝে সে। আকার-ইঙ্গিতে ভাব বিনিময় করে। এখন সে কুকুরের সংসারে মানব সন্তান হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পেয়েছে। একটি বা দুটি নয়, ৮ থেকে ১০টি কুকুরের নেতৃত্ব দেয় ফখরউদ্দিন।
ঢাকার মধুপুর উপজেলার পৌর শহর ছাড়াও গাঙ্গাইর, রক্তিপাড়া, আশ্রা, মোটের বাজার, গারোবাজারসহ উপজেলার হাটবাজার ও গঞ্জ চষে বেড়ায়। দূরের রাস্তা কুকুরের পিঠে চড়ে পাড়ি দেয় যেন ঘোড়সওয়ার। বন্ধুর মতো গড়াগড়ি, গলাগলি, কামড়া-কামড়ি ও কসরত দর্শকদের মুগ্ধ করে। ৫ থেকে ১০ টাকা বকশিশ মেলে। তাতে কলা-পাউরুটি কিনে ভাগাভাগি করে খায়। এভাবেই কলা আর পাউরুটিতে দিন কাটে কুকুর বালক ফখরার। কুকুর বান্ধব ফখরার বাড়ি টাঙ্গাইলের মধুপুর পৌরসভার কাজীপাড়ায়। ফখরার কুকুর প্রীতি কোনো গল্প-কাহিনি নয়, বাস্তব ঘটনা।