পুরাতত্ব বিভাগের সতর্কতা নোটিশ আছে। কেন্দ্র সরকারের রক্ষাকর্মীও আছেন। সে সব নির্দেশীকা ও রক্ষীর নজরদারি সত্বেও দ্বাদশ শতকের পৌড়-পাণ্ডুয়ার সুলতানী সাম্রাজ্যের স্থাপত্য চুরি যাচ্ছে প্রতিদিন। অভিযোগ করেছেন গৌড়ের স্থানীয় মানুষ। অনেকের দাবি, গৌড়ে ভেঙেপড়া সৌধের ইঁট ব্যবহার করে ব্যক্তিগত ইমারত গড়ে তুলছে মানুষ। গুরুতর এই অভিযোগ স্বীকার করেছেন, মহদিপুর সীমান্ত চেকপোস্টের রক্ষীরাও।
মালদা শহর থেকে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক ধরে শুস্তানী মোড়। ওখান পনেরো কিলোমিটার দূরত্বে মহদিপুর চেকপোস্ট। প্রতিবেশি বাংলাদেশ যাওয়ার অন্যতম পথ। প্রায় কুড়ি কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সুলতানী আমলের একাধিক স্থাপত্য। যার অনেকটা ওপার বাংলায় রয়েছে। এপারে রয়েছে একলাখী সমাধি, চাঁদশাহ মাজার, গুণবন্ত মসজিদ, চিকা মসজিদ, ফিরোজ মিনার, সালামী দরওয়াজা, দাখিল দরওয়াজা, ছোট সোনা মসজিদ, ফতে খাঁ'র সমাধি, কদম রসুল মসজিদ সহ অসংখ্য স্থাপত্য।
পাশাপাশি রয়েছে সেন রাজাদের বাইশগজি প্রাচীর। রাজধানী গৌড়ের সীমানা প্রাচীর। যার বয়স পাঁচ শতকেরও বেশি। ১২১৩ খ্রীস্টাব্দে এই অভেদ্য প্রাচীরের সদর দরওয়াজার সামনে এসে দাঁড়িয়েলেন বীর বক্তিয়ার খিলজি। সতেরো ঘোড় সওয়ারী নিয়ে ইক্তিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বিন বক্তিয়ার খলজির আগমন দেখে রাজা লক্ষণ সেন পালিয়ে যান পেছনের দরজা দিয়ে। যে গেটটি এখন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত প্রবেশ পথ হিসেবে ব্যবহার হয়। গেটের সামনে এসে দাঁড়ালে কেন্দ্রিয় পুরাতত্ব বিভাগের বিজয় ফলকটি চোখে পড়বে। তাতেই লেখা রয়েছে ১২১৩ খ্রীস্টাব্দে বক্তিয়ার খলজির গৌড় বিজয়ের কথা। লেখা রয়েছে ১২১৪ সালে তার হঠাৎ মৃত্যুর কথাও।
একাধিক স্থাপথ্যের মধ্যে ক্রমে ভেঙে পড়া দাখিল দরওয়াজার অবস্থা সবথেকে করুণ। দেওয়াল থেকে খসে পড়েছে অসংখ্য ইঁট। যার সন্ধান কেউ দিতে পারছে না। কেউ বলছেন মাটি চাপা পড়ে আছে কেউ বলছেন চুরি গেছে সমস্ত ইঁট। কোথায় যে গেছে তা পাড়ার চা দোকান, আড্ডাস্থলে কান পাতলে শোনা যায়। ফতে খাঁর সমাধির পাশে চা দোকানে আড্ডাঢ কথা প্রসঙ্গে বেরিয়ে এলো নতুন এক তথ্য। স্থানীয় মদন রুইদাস জানালেন, স্থাপত্যের আশেপাশে কোনো মুসলিমের অস্তিত্ব পাবেন না। সমস্ত জমি জবরদখল করেছে ওপার থেকে আসা উদ্বাস্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। তারাই ভেঙে পড়া স্থাপত্যের ইঁট নিয়ে ঘর করেছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে স্থানীয় সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরির জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, বিষয়টি তাঁরও কানে এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের রক্ষি থাকা সত্ত্বেও কেন এমন চুরি চলছে তা খতিয়ে দেখবেন বললেন। মালদা জেলা পরিষদের পর্যটন বিভাগকে বিষয়টি জানানো হলে বিভাগীয় প্রধান অভিযোগ সরেজমিনে ঘুরে দেখার প্রতিশ্রুতি দেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct