মালদা, ২২ অক্টোবর । জমি মাফিয়াদের অত্যাচারে ১৮ দিন ধরে ঘরছাড়া অসহায় বৃদ্ধ দম্পতি। তাঁরা ছেলে , পুত্রবধূ , নাতি-নাতনীদের নিয়ে সুবিচারের আশায় পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে ধর্নায় বসলেন। সোমবার দুপুরে এই ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে পড়ে যায় জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ওই বৃদ্ধ দম্পতি ও তার পরিবারের লোকেদের ধর্না থেকে উঠে যাওয়া এবং অভিযুক্ত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসবাণী শোনানো হয়। কিন্তু তাতেও টলানো যায়নি অসহায় ওই বৃদ্ধ দম্পতিকে। দীর্ঘক্ষণ পর পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়ার আশ্বাসেই নিজেদের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ান ওই বৃদ্ধ দম্পতি ও তার পরিবার । পুরো ঘটনাটি নিয়ে গাজোল থানার পুলিশকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে , বৃদ্ধ দম্পতির নাম সুবল চন্দ্র দাস (৭০), দিপালী দাস (৬৫)। তাদের তিন ছেলে লোকরঞ্জন দাস (৪৪), শ্যামসুন্দর দাস (৪২) এবং তড়িৎ দাস (৪০)। তাদের স্ত্রী এবং নাবালক-নাবালিকা সন্তানেরাও রয়েছে। সকলকে নিয়েই ওই বৃদ্ধ দম্পতি এদিন মালদার পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে রাস্তায় সুবিচারের আশায় ধরনায় বসে পড়েন।
বৃদ্ধ সুবল চন্দ্র দাস পেশায় ব্যবসায়ী। গাজোল থানার করলাভিটা এলাকার জাতীয় সড়কের ধারে প্রায় ১৫ কাঠা জায়গার উপর বহুতল বাড়ি রয়েছে। বাড়ির নিচে রয়েছে দুটি মেডিসিনের দোকান। সপরিবারে ছেলে, পুত্রবধূ ,নাতি , নাতনীদের নিয়ে ওই বাড়িতেই থাকেন বৃদ্ধ দম্পতি সুবল চন্দ্র দাস এবং দিপালীদেবী।
সুবলবাবুর অভিযোগ , দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় জমি মাফিয়া রঞ্জিত সরকার, বাপ্পা কুমার, আব্দুল হাকিম সহ তাদের দলবল আমাদের বাড়িটি জবরদখলের চেষ্টা করে। অল্প দামে সেই বাড়িটি কিনে নিতে চাই ওরা । কিন্তু আমরা বাড়ি বিক্রি করতে চাই নি। এরপরই শুরু হয় অত্যাচার। এমনকি বাড়ির জলের পাইপ লাইন ভেঙে দেওয়া হয় । বাড়ির সংলগ্ন দোকানের সামনে মাঝেমধ্যেই ভয় প্রদর্শন দেখাচ্ছিলো জমি মাফিয়ারা।
সুবলবাবুর আরও অভিযোগ, গত ৪ অক্টোবর ষষ্ঠী দিন অভিযুক্তরা দলবল নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা চালায়। ভাঙচুর করা হয় দোকানপাট । বাড়ি লুটপাট করা হয়। বন্দুক দেখিয়ে আমাদের প্রাণে মারার কথা বলা হয় । ভয়ে ওই দিনই বাড়ি ছেড়ে পাশের গ্রামে এক আত্মীয়র বাড়িতে সপরিবারে আশ্রয় নিই। ৫ অক্টোবর এব্যাপারে গাজোল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিশ প্রথমে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে । পরে মালদা একটি মানবাধিকার সংগঠনের মাধ্যমে আদালতের দ্বারস্থ হতেই পুলিশ চাপে পড়ে অভিযোগ নেই। কিন্তু গাজোল থানার পুলিশ প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থাই নেয় নি । সেই থেকে আজ পর্যন্ত লোকের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে রয়েছি। নিজেদের বাড়িতে জমি মাফিয়াদের ভয় ফিরে যেতে পারছি না।
বৃদ্ধ দম্পতির বড় ছেলে লোকরঞ্জনবাবু বলেন, রঞ্জিত সরকারের নেতৃত্বে আমাদের বাড়ি দখল করে নেওয়া হয়েছে। ওরা আমাদের বাড়ি দখল করে নিয়েছে। গাজোল থানার পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সুবিচার না পেলে আমাদের আগামীতেও এইভাবে রাস্তায় বসে আন্দোলন চলবে।
গণতান্ত্রিক আইন অধিকার রক্ষা কমিটির মালদার সম্পাদক জিষ্ণু রায়চৌধুরী বলেন, সম্ভ্রান্ত ওই পরিবারটি এখন অসহায় । আত্মীয়-পরিজনদের বাড়িতে ১৮ দিন ধরে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে। একটি পরিবার আর দুষ্কৃতীরা ওদের বাড়ি দখল করে তাণ্ডব চালাচ্ছে। পুলিশ ঘুমিয়ে আছে। এর থেকে দুঃখের আর কি হতে পারে। পুলিশ সুপারের সাথে এদিন দেখা করেছি সমস্ত ঘটনার কথা জানিয়েছি। পুলিশ সুপার আশ্বাস দিয়েছেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার । যদি না হয় তাহলে সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্দোলনে নামা হবে।
যদিও পুরো ঘটনাটি নিয়ে রীতিমতো অসন্তুষ্ট পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। কেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি ও তার পরিবার বাড়িছাড়া হয়ে রয়েছেন সেই বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন গাজোল থানার পুলিশকে অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
ছবি ------ পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে বাড়িছাড়া বৃদ্ধ দম্পতি ও তার পরিবার সুবিচারের আশায় ধরনায় বসেছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct