মালদাঃ সারা ভারতে অসহিষ্ণুতার বাতাবরণ তৈরি হলেও মানবতা যে হারিয়ে যায়নি তার দৃষ্টান্ত মিলল পুরাতন মালদায়।সম্প্রীতির এক নজির স্থাপন করল পুরাতন মালদার সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোর গ্রাম।এক হিন্দু ভাইয়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন করল মুসলিম ভাইয়েরা। পুরাতন মালদার মোড়গ্রাম চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল যতই ভেদাভেদ তৈরি করুক না কেন মানবতা এখনো শেষ হয়ে যায়নি।আজও যা কিছুটা হলেও অটুট রয়েছে। রামবিলাস চৌধুরী পুরাতন মালদার মোর গ্রামের বাসিন্দা। বয়স পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই দীর্ঘ। ৬ মাস থেকে কিডনি সমস্যা নিয়ে ভুগছিলেন।পেশায় টোটো চালক। স্ত্রী মিনা চৌধুরী। বছর দুয়েক আগে বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। এক মেয়ে ও এক ছেলে বর্তমান।পরিবারে নুন আনতে পানতা ফুরানোর অবস্থা। তার উপর চিকিৎসার খরচ সব মিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা চৌধুরী পরিবারের। সেই সময় থেকেই পুরাতন মালদার গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধাইপুর গ্রামের হাসান রাজা,রাজেশ আলী, ইমরান আলী,আওয়াল শেখ, সোনা সেখ,শাহরুখ খানের সেই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এমনকি দুর্গাপূজাতেও রাম বিলাসের পরিবারের হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দিয়েছিল হাসান রাজারা।এমনকি চিকিৎসার খরচও দিয়েছিল। শনিবার সকালে মালদা মেডিক্যাল কলেজে রামবিলাসে মৃত্যু হয়।মৃতদেহ গ্রামে নিয়ে যায় হাসান রাজা সহ জনাকয়েক মুসলিম যুবক। অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার জন্য বাঁশও কাটে।তারপর হাসান, ইমরান,আওয়ালরা সৌদল্লাপুর মহাশ্মশানে নিয়ে যায়। তাদের সাথে ছিল পরমেশ্বর,স্বপন,সৌতস সহ এলাকার মানুষজন। হাসান দের এমন মানবতায় আপ্লুত মোর গ্রাম বাসি।শ্মশান যাত্রীদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করেন এই সংখ্যালঘু মুসলিম যুবকেরা। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন রাম বলেন, হাসান,ইমরান,রাজেশ, সোনারা যেভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। আজকালকার যুগে এমন মানবতার নজির দেখাই যায় না। মৃত ব্যক্তির স্ত্রী মিনা চৌধুরী জানান,অসুস্থ হওয়ার পরও আমার স্বামীর পেছনে চিকিৎসার জন্য সাহায্য করেছেন তারা। শেষকৃত্য সম্পন্ন হল তাদের মাধ্যমে। ভগবান তাদের আশীর্বাদ করুক। পাশাপাশি মৃত রামবিলাসের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন মুসলিম মহিলারাও। মাইনুরা বিবি, জাইগুন বেওয়া,লালনুর বেওয়া,নুফরো বেওয়া তারা তাদের বাড়ি গিয়ে সমবেদনা জানান। বর্তমান যুগে এমন দৃশ্য সত্যিই অমিল। হাসান রাজা বলেন,রামবিলাস দার চিকিৎসার জন্য আমরা যতটুকু পেরেছি সাহায্য করেছি।শেষকৃত্য সম্পন্ন করলাম। হিন্দু হোক আর মুসলিম হোক মানুষ বিপদে পড়লে তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করি। তাই সংখ্যালঘু মুসলিম যুবকরা এই কাজ করেছি।শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানও আমরাই করব।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct