মক্কার মসজিদুল হারাম বা বায়তুল্লাহ ও মদীনার মসজিদে নববীর পর মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হচ্ছে বায়তুল মুকাদ্দাস বা মসজিদুল আকসা। রাসূলুল্লাহ (সা.) যে তিনটি মসজিদের উদ্দেশে সফরকে বিশেষভাবে সওয়াবের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এর অন্যতম হচ্ছে মসজিদ আল-আকসা। ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নগরীতে অবস্থিত বায়তুল মুকাদ্দাস হচ্ছে মুসলমানদের প্রথম কিবলা। ইসলামের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। অসংখ্য নবী-রাসূলের পদধূলিতে ধন্য এ নগরী। এখানে রয়েছে অসংখ্য নবী-রাসূলের ঐতিহ্যবাহী মাজার। এ নামটি শুধু একটি স্থানের সঙ্গে জড়িত নয় বরং এটি মুসলমানদের ঈমান-আকীদা ও সভ্যতা-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এ পবিত্র নগরীর প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসা বিশ্বের প্রতিটি মুমিন মুসলমানের হূদয়ের গভীরে প্রোথিত।
মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.) কাবাঘর পুনঃনির্মাণের ৪০ বছর পর হযরত ইয়াকুব (আ.) জেরুজালেমে আল-আকসা মসজিদ নির্মাণ করেন। হযরত দাউদ (আ.) বায়তুল মোকাদ্দাসে তার আমলের রাজধানী স্থাপন করেন এবং একটি বিশাল ইবাদতখানা নির্মাণে হাত দেন যা হযরত সুলায়মান (আ.) কর্তৃক জি্বনদের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়। অতঃপর হযরত দাউদ (আ.)-এর পুত্র নবী হযরত সুলায়মান (আ.) জেরুজালেম নগরী পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন এবং মহান আল্লাহর মহিমা তুলে ধরতে সেখানে পুনঃনির্মাণ করে গড়ে তোলেন মসজিদ আল-আকসা। এভাবে বায়তুল মুকাদ্দাসের পবিত্রতার মর্যাদা বাস্তবরূপ লাভ করে। এরপর হযরত ঈসা (আ.)-এর সময় থেকে তার অনুসারীদের এবং মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে মুসলমানদের দ্বারা বায়তুল মুকাদ্দাস পবিত্রতম স্থান রূপে গণ্য হতে থাকে। কোরআন মজিদে বায়তুল মুকাদ্দাসকে পবিত্র ভূমি বলে উল্লেখ করে বলা হয়েছে স্মরণ করো মূসা তার সমপ্রদায়কে বলেছিল) হে আমার সমপ্রদায়! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করেছেন তাতে তোমরা প্রবেশ করো এবং পশ্চাদপসরণ করো না তাহলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। (সূরা আল-মায়িদা আয়াত : ২১)
মুসলমানদের প্রথম কিবলা ও মিরাজের ঘটনা
মহানবী (সা.)-এর মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পর মুসলমানদের প্রথম কিবলা ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মিরাজের ঘটনার অলৌকিক স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদ এবং তার আশেপাশের এলাকা। আল্লাহ তাআলা তার কুদরতি নিদর্শনাবলীর ব্যাপকতর প্রদর্শনীর লক্ষ্যে নবী করিম (সা.)-কে মিরাজ তথা ঊর্ধ্বলোকে পরিভ্রমণ করিয়েছিলেন। এ নৈশভ্রমণের প্রথম পর্ব সংঘটিত হয়েছিল মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্ব ছিল মসজিদুল আকসা থেকে ঊর্ধ্বলোক। নিঃসন্দেহে মানবজাতির পরিপূর্ণতা ও মর্যাদার চরমতম নিদর্শন এ পরিভ্রমণে বায়তুল মুকাদ্দাসকে মাধ্যম রূপে মর্যাদা প্রদান এর পবিত্রতার স্বাক্ষর বহন করে। পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে এ ভূখ-কে দিকনির্দেশ করে এর পবিত্রতা বা বিশেষ মর্যাদা সম্পর্র্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন পবিত্র ও মহিমময় তিনি যিনি তার বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্সায় যার চতুষ্পার্শ্ব আমি বরকতময় করেছিলাম তাকে আমার নিদর্শন পরিদর্শন করার জন্য নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা। (সূরা বনী ইসরাইল আয়াত: ১)
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.)-এর খিলাফতকালে ৬৩৬ খ্রিস্টাব্দের ২০ আগস্ট ঐতিহাসিক ইয়ারমুকের যুদ্ধের মাধ্যমে খ্রিস্টানদের হাত থেকে মুসলমানেরা এ পবিত্র নগরীর কর্তৃত্ব গ্রহণ করে। এরপর থেকে ফিলিস্তিন মুসলমানদেরই দখলে থাকে।
ফিলিস্তিনের ভৌগোলিক অবস্থান ও কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাত
ফিলিস্তিন আয়তনগত দিক থেকে তেমন বড় রাষ্ট্র নয়। এর মোট আয়তন মাত্র ২৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার। অথচ ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে এর গুরুত্ব অপরিসীম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যাযাবর জাতি ইহুদিদের একটি স্থানে জড়ো করার দাবি তোলে একটি গোষ্ঠী। পাশ্চাত্যের পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট ব্রিটেন এ ব্যাপারে জোরালো অপতৎপরতা চালায়। মুসলমানদেরকে নিগৃহীত করার হীন উদ্দেশ্যে মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের পুনর্বাসন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সে লক্ষ্যে তারা নিজেদের প্রত্যক্ষ মদদে মধ্যপ্রাচ্যের পূণ্যভূমি ফিলিস্তিনে ইহুদিদের এনে জড়ো করে। একটি স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের সব ব্যবস্থা নেয়া হয়। জাতিসংঘও এতে সহযোগিতা যোগায়। তখন বলা হয়েছিল এখানে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রও গঠন করা হবে।
কিন্তু এরপর থেকে ফিলিস্তিনের সমস্যা দিন দিন ঘনীভূত হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের অধিকারের ওপর পাশ্চাত্যের আধিপত্যের কারণে ফিলিস্তিনে প্রতিদিনই অকারণে নিষ্পাপ শিশু অসহায় নারী-পুরুষের রক্ত ঝরছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বুলেটের আঘাতে অসংখ্য মুসলিমের বুক ঝাঁঝরা হচ্ছে। তাদের ঘর-বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
সালিম ইবনু আবদুল্লাহ তার পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ঘরের মালিক জীব জন্তু পাহারা বা শিকারের কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর পালন করবে প্রতিদিন তার 'আমাল থেকে দু’কীরাত করে কমতে থাকবে