চিনের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের কথা কারো অজানা নয়। কমিউনিস্ট শাসিত চিন সরকারের সিদ্ধান্তই শেষ কথা। কারো অমান্য করার উপায় নেই। এবার চিন সরকারের নানা নির্যাতনের কথা ফের সামনে আস্তে শুরু করেছে। সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত উইঘুর প্রদেশে মেয়েদেরকে জোর করে বন্ধ্যা করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রথমে মেয়েদেরকে বন্দি শিবিরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তারপর তাদেরকে ইনজেকশন দিয়ে বন্ধ্যা করে দেওয়া হচ্ছে। উইঘুর থেকে পালিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া এক মহিলা এই অভিনগ প্রকাশ্যে অন্যায় শোরগোল পড়ে গেছে। এ নিয়ে খবর প্রকাশিত বয়েছে প্রখ্যাত দৈনিক 'দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট'এ।
৩০ বছর বয়সী মেহরিগুল তুরসুন। তাকে প্রায় এক বছরের বেশি সময় যাবত চিনের সেই বন্দিশিবিরে থাকতে হয়েছে। সদ্য মুক্তি পাওয়া এই নারী বলেন, ‘মুক্তি পাওয়ার পর থেকে আমি যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছি। আটককেন্দ্রে থাকার সময় আমাদের অজ্ঞাত ড্রাগ ও ইনজেকশন দেওয়া হতো।’
মেহরিগুল তুরসুন আরও বলেন, ‘তখন প্রায় এক সপ্তাহের বেশি সময় যাবত ক্লান্ত বোধ করেছিলাম, স্মৃতিশক্তি হারিয়েছিলাম এবং হতাশাগ্রস্ত বোধ করেছিলাম। আমার মনে হয়, সে সময়ই তারা আমাকে বন্ধ্যা বানিয়ে দিয়েছে। যদিও এর প্রায় ৪ মাস পর আমি মানসিকভাবে অসুস্থ বলে ধরা পড়ায় তারা আমাকে মুক্তি দিয়ে দেয়।’
তিনি জানান, এরপর যুক্তরাষ্ট্রে চলে এলে সেখানকার চিকিৎসকেরা জানান, তাকে কোনো এক সময় বন্ধ্যা করে দেওয়া হয়েছে।
ওই পত্রিকায় গুলবাহার জলিলভা নামে এক নারী যাকে গত এক বছরের বেশি সময় যাবত চিনের সেই বন্দিশিবিরে আটক অবস্থায় রাখা হয়েছিল তিনি চিনের নির্মমতার কথা জানান। তিনি জানান,, ‘আটককেন্দ্রের লোকজন আমাদের বিভিন্ন সময়ে ইনজেকশন দিত। আর এর মাধ্যমে তারা আমাদের বন্ধ্যা বানিয়ে দিয়েছে।’
৫৪ বছর বয়সী এই নারী আরও বলেন, ‘আটককেন্দ্রে কর্মরত লোকজন সেখানকার দরজার ছোট একটু জায়গা দিয়ে আমাদের হাত আটকিয়েছে। ইনজেকশন দেওয়ার পর আমরা দ্রুতই অনুধাবন করতে পারি; যে আমাদের আর কখনো পিরিয়ড হবে না।’
ফরাসি গণমাধ্যম ‘ফ্রান্স-২৪’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ছোট একটি সেলে ৫০ জনের বেশি নারীর সঙ্গে আমাকে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাতে হতো। তাদের নির্যাতনে আমাদের তখন মনে হতো আমরা কেবল এক টুকরো মাংস মাত্র; আর কিছুই নয়।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে চিনের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রায় ২০ লাখেরও বেশি লোককে এক সঙ্গে টর্চার সেল খ্যাত বন্দিশিবিরে আটকে রেখেছে সে দেশের সরকার। যার অংশ হিসেবে গত কয়েক বছর যাবত দেশটি মুসলিমদের ওপর নানা অত্যাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মিডিয়া ও পশ্চিমা বেশিরভাগ দেশ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct