মায়ানমারের সহিংস ঘটনায় মুসলমানদের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরাও বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। গত দুই দিনে প্রায় পাঁচ শতাধিক হিন্দু পরিবার পালিয়ে এসেছে। এসব পরিবার কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিমে হিন্দুপাড়ায় আশ্রয় নিয়েছে।
উখিয়ার কুতুপালং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বাবুল শর্মা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত দুই দিনে ১৬৫টি হিন্দু পরিবারের ৫১২ জন নারী, পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে। তারা কুতুপালংয়ের একটি মুরগির খামারে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে আরও কিছু হিন্দু পরিবার বাংলাদেশে এসেছে।
আশ্রয় নেওয়া হিন্দু পরিবারের লোকজনের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংস ঘটনার পর মুসলমানদের পাশাপাশি হিন্দু পরিবারের ওপরও নির্যাতন চালানো হচ্ছে। মুখোশ পরা কিছু লোক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাদের বাড়িতে ঢুকে লুটপাট চালাচ্ছে এবং নানাভাবে নির্যাতন করছে। এ কারণে তারাও নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের রেজু আতমলি সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে।’
গত ২৪ আগস্ট মায়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যের রাথেটং শহরে নতুন করে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করে। ওই এলাকায় রাখাইন ও রোহিঙ্গা দুই সম্প্রদায়েরই বসবাস। ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ এর কারণে সেখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা বাহিনী ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে মায়ানমার সরকারের দাবি অনুযায়ী ১০৬ জন নিহত হয়েছে। তারমধ্যে ১২ জন সে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। তবে রোহিঙ্গাদের দাবি গত পাচঁ দিনের সহিংসতায় ২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। তবে এর সঠিক কোনও পরিসংখ্যান এখনো পাওয়া যায়নি।
এই সহিংসতার জের ধরে মায়ানমারে সেনা, বিজিবি ও রাখাইন সন্ত্রাসীদের মধ্যে জ্বালাও-পুড়াও, হত্যা, গুম ও নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে সীমান্তের জিরো পয়েন্ট অবস্থান নিয়েছে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। বিবিজি’র কড়া নিরাপত্তার কারণে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অভ্যান্তরে সহজে অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। কিন্তু গত দুই দিনের প্রচণ্ড বৃষ্টির ফলে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু এক সঙ্গে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ চেষ্টা করে। আর্ন্তজাতির অভিভাসন সংস্থার (আইওএম) রির্পোট অনুযায়ী গত দুই দিনে ১৮ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। তবে রোহিঙ্গাদের দেওয়া তথ্য মতে ৩০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা উখিয়ার কুতপালং ও বালুখালীতে অবস্থায় নিয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশাপাশি গত বুধবার মায়ানমার থেকে চলে এসেছে পাঁচ শতাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক।
উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের হিন্দু পল্লীতে অবস্থানকারী মিয়ানমারের মংডু চিয়নছড়ির বাসিন্দা মৃত- শরৎ এর ছেলে কালু (৮০) জানান, জন্মগতভাবে তারা মায়ানমারের বাসিন্দা। অতীতে কখনো তাদের দেশ ছাড়তে হয়নি। কিন্তু গত কয় দিনের সহিংসতায় তারা জিম্মি হয়ে গেছেন। বাড়ি ঘর থেকে ৫ দিন ধরে বের হতে পারেননি। এ কারণে স্ত্রী মালতিসহ (৭০) পাঁচ সন্তান ও তাদের স্ত্রী, নাতিদের নিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct