খসে পড়েছে পলেস্তারা। যত্নে সাজানো ইটের গাঁথুনি থেকে উঁকি দিচ্ছে নবাবি ইতিহাস। যেন সে ফিসফিসিয়ে শোনাতে চাইছে নবাবি রাজত্বের ওঠাপড়ার অজানা কথা। অযত্নে অশীতিপর ইটের পাঁজরভাঙা সে সব কাহিনী শোনার মত কেউ নেই এই ব্যস্ত শহরে। এমনি করে মুর্শিদাবাদের নবাবি স্থাপত্য এখন চিরতরে ধ্বংসের জন্য দিন গুনছে।
তিনশো বছরের নবাবি শহর। যার সূচনা করেন নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ। তাঁর নামেই নবাবি শহরের নাম হয় মুর্শিদাবাদ। ১৭১৭ থেকে ১৭২৭ পর্যন্ত নবাবি রাজত্বে তাঁর সবচেয়ে বড় কীর্তি কাটরা মসজিদ। ১৭২৫ সালে মসজিদ জনসাধারনের নামাজ পড়ার জন্য খুলে দেওয়া হয়। মসজিদের দালানে ওঠার সিঁড়িতে তিনি শায়িত থাকবেন সে ইচ্ছা প্রকাশ করে যান। ১৭২৭ সালে মৃত্যুর পর নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর কবর হয় ওই সিঁড়ির নীচে।
সব ঠিক চলছিল। কিন্তু ১৮৯৭ সালে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হল। ভেঙে পড়ল মসজিদের তিন গম্বুজ। তখন থেকে পরবর্তী একশো বছর। কাটরা মসজিদের সংস্কারের কাজে হাতে দেয়নি কেউ। দীর্ঘ অবহেলায় মসজিদের আরও অনেকটা ক্ষতি হয়েছে। তবে, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় হেরিটেজ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেবার পর কাজ শুরু করেছে সংস্কারের। কিন্তু অপটু হাতের কাজে মসজিদের আরও বিকৃতি ঘটছে বলে দাবি করলেন, মুর্শিদাবাদ ইতিহাসচর্চা কেন্দ্রের প্রধান ড. সসীম কবীরাজ ঠাকুর ও নজরুল ইসলাম।
নবাবী শহরের ইট-কাঠ-পাথরের পাঁজরে চোখ রাখলে সর্বত্রই অবহেলার চিহ্ন চোখে পড়ে। শহরের অন্যতম স্থাপত্য ফুটি মসজিদ তাদের মধ্যে অন্যতম। ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে ফুটি মসজিদ স্থাপন করার কাজে হাত দিয়েছিলেন নবাব সরফরাজ খাঁ। মসজিদ তৈরি করার সময় অযোধ্যার নবাবের ডাকে ওই বছরেই তিনি যুদ্ধে চলে যান। সে যুদ্ধে সরফরাজের মৃত্যু হলে ফুটি মসজিদ আর পূর্ণতা পায়নি। ১৩৫ ফুট লম্বা ও ৩৮ ফুট চওড়া তিন গম্বুজের একটি গম্বুজ আর গড়ে ওঠেনি। নবাবী স্থাপত্যের প্রাচীন নজির ফুটি মসজিদ বর্তমানে ধ্বংসের জন্য দিন গুণছে।
এমনি নবাবি স্থাপত্যের অংশ নবাব মীরজাফরের বাড়ি, যে বাড়িতে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে হত্যা করা হয়েছিল, সিরাজের পারিবারিক কবরস্থান খোসবাগ, নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর কন্যা আজমতউন্নিসার কবরখানা ও মসজিদ প্রভৃতি নবাবি ঐতিহ্যস্থাপত্যগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ এখনই না নিলে সেগুলি চিরতরে হারিয়ে যাবার সম্ভাবনা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct