অসমের চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিকপঞ্জি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে বিতর্কের শেষ নেই। কার্গিল যুদ্ধের সৈনিক থেকে শুরু করে নাসা ও ইসরোর বিজ্ঞানী কিংবা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদের নাম বাদ পড়েছে। বাদ পড়েছে অসম বিধানসভার বিরোধী দলনেতা অনন্ত কুমার মালোর নামও। তাই গত ৩১ আগস্ট প্রকাশিত জাতীয় নাগরিকপঞ্জি চূড়ান্ত তালিকায় একদিকে যেমন বাদ পড়েছে বাঙালি মুসলিমের নাম তেমনি প্রচুর হিন্দু বাঙালির নামও বাদ পড়েছে। এর আগে যখন খসড়া এনআরসি প্রকাশিত হয়েছিল তখন দেখা গেছিল ৪০ লক্ষ বাঙালির নাম বাদ পড়েছে যাদের মধ্যে মুসলিম ও হিন্দু বাঙালিরাই ছিল। কিন্তু চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। যে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছে তাদের অর্ধেকেরও বেশি হচ্ছেন বাঙালি হিন্দু মহিলা ও পুরুষ।
জানা যাচ্ছে, ১১ লক্ষ বাঙালি হিন্দুর নাম বাদ পড়েছে। বাদ গেছে ৬ লক্ষ বাঙালি মুসলিমের নাম। এছাড়া বিহারি-নেপালী ২ লক্ষ মানুষের নাম ওঠেনি।
এনআরসি তালিকা প্রকাশের পর দেখা গেছে, নিম্ন অসমের বঙ্গাইগাঁওতে শালবাগান, পালাপাড়া নতুনপাড়া ছাড়াও নিউবঙ্গাইগাঁওর চুঙ্গাপোতা নিলীবাড়ি প্রচুর হিন্দু মহিলাদের নাম নেই। বঙ্গাইগাঁওতে থেকে উত্তরবঙ্গ কাছে থাকার জন্য অনেক পাত্র সেখানকার পাত্রী পছন্দ করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কোচবিহার আলিপুর দুয়ার, মাথাভাঙা,জলপাইগুড়ির অনেক পাত্রী বিবাহ হয়ছে বঙ্গাইগাঁওতে। তাদের নথিপত্র দিয়ে আবেদন করেছিল। কিন্তু নাম নেই চূড়ান্ত তালিকাতে। সারা অসম বাঙ্গালী ফেডারেশনের প্ৰাক্তন সভাপতি গৌতম দত্তের স্ত্রী র নাম ওঠেনি। গৌতম দত্তের স্ত্রী চম্পার বাপের বাড়ি কোচবিহার। ১৯৫৮ সালের জমি কেনার দলিল দাখিল করার পরও নাম ওঠেনি। একইভাবে উত্তর বঙ্গাইগাঁওএর বাসিন্দা সুজাতা চক্রবর্তী নাগরিকপঞ্জিতে নাম তোলার জন্য ঠিক সময় আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন। ১৯৫১সালে তার বাবার নিবারণ চক্রবর্তীর রেলের চাকরির প্রবেশের প্রমাণপত্র দিয়ে আবেদন করেছিলেন। তার নাম না থাকায় হতবাক তিনি। অসামজুড়ে প্রতিক্রিয়া .
উল্লেখ করা যেতে পারে প্রথমত নাগরিকপঞ্জি নবায়ন প্রক্রিয়া ১৯৮৫ সালের অসাংবিধানিক অসম চুক্তির সাথে জুড়ে দেয়াটা কতটুকু যুক্তিগ্রাহ্য। অসম চুক্তির কোথাও নাগরিকপঞ্জির উল্লেখ নেই। দ্বিতীয়ত, নাগরিকপঞ্জি নবায়ন একটা প্রদেশকেন্দ্রিক হল কি করে। আর কোনো প্রদেশে এখনো এন আর সি হয়নি।
ফলে নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর থেকে অসম জুড়ে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে বাঙালিদের মধ্যে। বৈধ নথি থাকা সত্বেও কি করে এমনটা হল সেই প্রশ্ন উঠেছে।
সারা অসম বাঙ্গালী ফেডারেশন-এর বঙ্গাইগাওঁ জেলার সভাপতি সম্রাট ভয়াল বলেন, অনেক মানুষের বৈধ নথি থাকার পারও নাগরিকপঞ্জি তে নাম নেই। হিন্দু বাঙালিদের সংখ্যা বেশি। এরকম একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হল অসমে। এই ব্যাপারটা নিয়ে কেন্দ্র সরকারর উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে তারা দেখা করতে আগামী ৭ তারিখ দিল্লি যাবেন তারা।
চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জিতে যাদের নাম রয়েছ তারাই কেবল অসমে থাকতে পারবে। আর যাদের নাম নেই অর্থাৎ ১৯ লক্ষ মানুষের ভাগ্য কোনদিকে তা নিয়ে যত সংশয়। যদিও তারা আগামী তিন মাস সময় পাবে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করার জন্য। তবু, যেভাবে মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে ক্ষোভের শেষ নেই।