অসমে চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর স্থানীয় কম্পিউটারের দোকানে ভীড় জমিয়েছিলেন বহু মানুষ। তাদের মধ্যে রমাকান্ত বিশ্বাস নামের এক ব্যাক্তি, যিনি ২০১৮ সালের তিন বছর ধরে মামলা চালানোর পর ভাই ক্ষিতীশ ও মা বাসন্তী তিনজনেই বিদেশি ট্রাইবুনালে নিজেদের নামের পাশ থেকে ডি ভোটার চিহ্ন সরাতে সক্ষম হয়েছেন, তিনিও সেই ভীড়ে সামিল হন। নাগরিকত্বের নথিতে সে পরিবারের এবার ঠাঁই পাওয়ার কথা, সে সার্টিফিকেটের দৌলতে তারা ভারতের আইনি বাসিন্দা হবেন। কিন্তু তা হলো না। রমাকান্তের নিজের নাম নেই সে তালিকায়। নেই ভাই ক্ষিতীশের নাম, এমনকি তার ছোট ভাই লক্ষ্মীকান্তের নামও নেই। শুধু তাঁর মা বাসন্তী এবং অন্য এক ভাই কলিকান্তের নাম উঠেছে এনআরসি তালিকায়। এক প্রতিক্রিয়ায় রমাকান্ত বলেন, 'আমরা ভেবেছিলাম ভারত নিরাপদ। এ কিসের নিরাপত্তা?'
৫০ বছরের বিধান শংকর, তার স্ত্রী ও মা, কারোর নাম নেই। 'আমরা জানি অসমে অভিবাসন সমস্যা রয়েছে, তাই বলে আমরা কেন এ ঝামেলায় পড়ব? আমরা তো হিন্দু।' রমাকান্ত ও তার ভাইয়েরা সবাই ছোটদুধপাতিলেই জন্মেছেন। তাদের বাবা ১৯৫৬ সালে বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) থেকে ভারতে এসেছিলেন। রমাকান্তদের মা বাসন্তী এ পারে এসেছিলেন তারও আগে। বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্বাস পরিবারের বহু সদস্য পিসি, কাকা, খুড়তুতো ভাইয়েরা এ পারে আসতে থাকেন, বাংলাদেশের ভংয়কর সব ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে। কেউ পেরেছিলেন, কেউ পারেননি। রমাকান্ত বলছেন, তাদের পরিবার বাংলাদেশের সিলেট জেলার জগন্নাথপুরে ছড়িয়ে রয়েছে, সে পরিবারের কাউকে কখনো চোখেও দেখেননি তিনি। কাছাড় জেলার ছোটদুধপাতিল সংলগ্ন এলাকায় দেশভাগের সময় জুড়ে বহু মানুষ এপারে এসে বসতি জমিয়েছেন দক্ষিণ অসমের বরাক উপত্যকায়। বরাকের মধ্যে পড়ে কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি। উপল পাল নামক এক দোকানদার বলেন, 'বহু ঘটনা আছে যেখানে ছেলেমেয়েরা বাবা মা-কে ফেলে এসেছে, ভাইয়েরা বোনেদের ছেড়ে এসেছে। আমরা সবাই ১৯৭১-এর আগে ভারতে এসেছি সুরক্ষার আশায়। তা সত্ত্বেও এখানকার প্রায় অর্ধেক পরিবার এনআরসি-র বাইরে। এ কী করে হল! বিজেপির কি আমাদের বাঁচানো উচিত ছিল না?'
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct