দিল্লী থেকে বর্ধমান দুরত্ব কয়েকশো কিলোমিটার। তাতে কি? রাষ্ট্রপতি হিসাবে রামনাথ কোবিন্দ শপথ নিতেই চোখের জল ঝড়ে পড়ল গঙ্গা কলির। চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন, ‘প্রায় দেড় দশক আগে আত্মীয়তার সূত্রে এই জীর্ণবাড়িটিতে এসে উঠেছিলেন রামনাথ কোবিন্দ। পাশের চিকিৎসকের বাড়ি দেখিয়ে বললেন, ওই বাড়িতে তিনি রাত কাটিয়েছেন।’
বর্ধমানের বিসিরোডের ওপর রয়েছে সেই জীর্ণ বাড়িটি। এই বাড়িটিই নাকি রাষ্ট্রপতির শ্যালক ওমপ্রকাশ কলির। ওমপ্রকাশ বাবু অবশ্য বেশ কয়েকবছর আগে মারা গিয়েছেন। বর্তমানে সেখানে থাকেন ওমপ্রকাশবাবুর স্ত্রী গঙ্গা কলি এবং তাঁর দুই ছেলে তরুণ ও বরুণ। এদিন সকালে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেলে টিভির পর্দায় চোখ রেখেছেন বাড়ির সকলেই। কখন শপথ নেবেন তাঁর বাড়ির জামাই এই অপেক্ষায় ছিলেন সকলে। শপথ অনুষ্ঠান শেষ হতেই আনন্দে মেতে উঠে পুরো কলি পরিবার।
বাড়িতে বসে গঙ্গা দেবী জানান, রাষ্ট্রপতি হিসাবে মনোনীত হওয়ার পর কোবিন্দকে ফোন করেছিলাম। উনিই ধরেছিলেন। আমাকে বলেন বউদি কেমন আছো? আমাকে বাংলাতেই সম্বোধন করেন বরাবর। খুব ভালো লাগছে।’
ওমপ্রকাশবাবুর খুব কাছের মানুষ ব্যবসায়ী প্রদীপ সাউ। তিনি জানান, সাতের দশকে দিল্লি থেকে ওমপ্রকাশ বাবু বর্ধমানে চলে আসেন। বড়বাজারে শুরু করেন ব্যবসা। থাকতেন দিঘিরপুলের ভাড়াবাড়িতে। তারপর বিভিন্ন জায়গাতে ভাড়া থাকার পরে বড়বাজার মসজিদের উল্টোদিকের গলিতে এই বাড়িটিতে এসে উঠেন।’
পরিবার সূত্রে জানাগেছে, ওমপ্রকাশবাবুরা তিনভাই ও পাঁচবোন। সেজ বোন সবিতার স্বামী বর্তমান রাষ্ট্রপতি। ১৯৯৬ সালে মারা যান ওমপ্রকাশবাবু। তখন পাঁচবোনের মধ্যে চারবোনই বর্ধমানে আসেন। যদিও রামনাথ কোবিন্দ তখন আসতে পারেননি।
২০০১ সালে কোন এক সময় বর্ধমানে এসে দুই দিন ছিলেন কোবিন্দ সাহেব। আর্থিক সাহায্য করেন ওমপ্রকাশের ছেলেদের। তা দিয়েই নতুন করে দোকান করে দাঁড়াতে পেরেছেন গঙ্গাদেবীরা। প্রদীপ সাউ জ্যোতিষচর্চা করেন। তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে এখনও কোবিন্দ সাহেবের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।’
রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার পরও অভিনন্দন জানিয়ে মেসেজ করেছিলেন প্রদীপবাবু। তার উত্তরও দিয়েছেন তিনি। শেষবার বর্ধমানে এসে কোবিন্দ রাত কাটান ওমপ্রকাশবাবুর পাশের বাড়ি চিকিৎসক পূর্ণেন্দু রায়ের বাড়িতে। বছর ছয়েক আগে অবশ্য তিনি মারা গিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী তপতীদেবী ও ছেলে শুভজ্যোতিদের কাছে সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। তপতীদেববী জানান, কোবিন্দ তাঁর ছেলের বিয়েতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তখন যেতে পারেননি। এখনও দেখা করতে ইচ্ছা করছে।’
শুভজ্যোতি বলেন, আমাদের ভিজিটং কার্ড দিয়েছিলেন। আজও তা রেখেছি আমরা।
(সূত্র: কলম)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct