বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনে নানা রাজনৈতিক দল নানা পরিকল্পনা নিয়ে থাকে। সেই পরিকল্পনা নির্ধানের ক্ষেত্রে এখন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দলকে। সে গুজরাত কিংবা উত্তরপ্রদেশ অথবা বিহার যেখানেই হোক। সেই স্ট্রাটেজি মেকার হিসেবে সবার আগে যে নামটা উঠে এসেছে তিনি হলেন প্রশান্ত কিশোর। নরেন্দ্র মোদি থেকে বিহারের নীতিশ কুমার সবাই সাফল্য পেয়েছেন প্রশান্ত কিশোরের। দলের ভরাডুবি থেকে বাঁচাতে রাজনৈতিক দলের কাছে প্রশান্ত কিশোর এখন ভোটগুরু হয়ে উঠেছেন। তাই ডাক পড়ছে তার। এবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থানের মোকাবিলা করতে তৃণমূল প্রশান্ত কিশোরের শরণাপন্ন হল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে শুক্রবার তৃণমূলের এক সাংগঠনিক সভায় মিলিত হন প্রশান্ত কিশোর।
সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিপর্যস্ত তৃণমূলকে কিভাবে জয়ের রথে আনা যায় মূলত সেটাই ছিল এদিনের বৈঠকের প্রধান বিষয়।
জেলা স্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের কাঠামো মজবুত করতে তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে শুক্রবার সাংগঠনিক বৈঠক করেছেন প্রশান্ত কিশোর।কালীঘাটে অভিষেকের অফিসে আড়াই ঘণ্টা স্থায়ী এই বৈঠকে দলের দুই শীর্ষ নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতিরা। সেখানে প্রশান্ত কিশোর কি বললেন তা নিয়েই জাত জল্পনা। জানা গেছে, প্রশান্ত কিশোর ধীরে চলো নীতি নিতে বলেছেন তৃণমূলকে। মমতার জননীতি যেহেতু মানুষের মন জয় করে তাই যে সমর্থন আছে তাকে ঢাল করার পরামর্শ দেন তিনি। তিনি বলেন, বিজেপির সব ক্ষেত্রে ক্ষমতা নেই সাংগঠনিকভাবে। শুধু নেতারা বিজেপিতে গেলেই বিজেপির পক্ষে জেতা সম্ভব নয়, সাংগঠনিক ক্ষমতা দরকার। সে দিক থেকে তৃণমূলের যা সাংগঠনিক ক্ষমতা আছে সেটাকে ব্যবহার করলেই ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে আটকানো যাবে না। এ ব্যাপারে প্রশান্ত কিশোর নাকি বলেছেন, সাধারণ মানুষের কিছু ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূলের প্রতি ঠিকই কিন্তু মানুষ চান মমতা রাশ হাতে নিন। শায়েস্তা করুন নেতাদের। তাহলে মানুষের আস্থা অটুট থাকবে। আরো বলেছেন, তৃণমূল নেতারা যদি ঘন ঘন মানুষের দোরে গিয়ে তাদের অভাব অভিযোগ শোনেন তাহলে তাদের ক্ষোভ কমবে। সর্বোপরি দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গড়ার যে ভাবমূর্তি রয়েছে মমতার সেটাকেই কাজে লাগাতে হবে। এর জন্য এখন নিরপেক্ষ ভাবে প্রশাসন যাতে চলে তা দেখার পরামর্শ দিয়েছেন মমতাকে। কারণ, মানুষ যদি বুঝতে পারে নেতা ছাড়াই সাধারণ মানুষের অভিযোগ প্রশাসন শুনছে তাহলে তারা আর পরিবর্তন চাইবেন না। সম্প্রতি মমতা যেভাবে প্রশাসনকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে পরিচ্ছন্নভাবে সিগালার নির্দেশ দিয়েছেন তা প্রশান্ত কিশোরেরই। অনেকে বলছেন যে জন্যই কাঁচড়াপাড়ায় বিজেপিতে যাওয়া নেতারা ফিরছেন তৃণমূলে। প্রশ্ন কিশোর নাকি আরো বলেছেন, এলাকার মানুষদের কাছে তৃণমূল যদি তাদের ভুল স্বীকার করে কাজ করার অঙ্গীকার করে তাহলে এখানকার মানুষ তৃণমূলকেই ফের রাজ্যে ক্ষমতায় আনবে। তৃণমূলের উপর ক্ষোভ থাকলেই বিজেপির উপর মানুষের পুরোপুরি আস্থা এখনো তৈরি হয়নি বলে প্রশান্ত কিশোরের ধারণা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct