এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না মুক্তা বিশ্বাস। ১৮ বছর ধরে বাম জমানার চক্রান্ত ভেদ করে অবশেষে চালু হল শিক্ষক স্বামীর পেনশন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে অবশেষে মুক্তা দেবীর পেনশন ও স্বামীর বকেয়া পেনশন পাওয়ার নির্দেশ এসে পৌঁছেছে অশোকনগরের বিশ্বাস বাড়িতে। স্বামীর জন্ম দিনেই এই নির্দেশ এসে পৌঁছানোয় স্বভাবতই খুশীর হাওয়া বাড়িতে। এজন্য মুখ্যমন্ত্রী এবং স্থানীয় বিধায়কের প্রতি কৃতঞ্জতা প্রকাশ করেছেন মুক্তা দেবী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে অশোকনগরের বাসিন্দা মুক্তা বিশ্বাসের স্বামী অচ্যুতানন্দ বিশ্বাস অশোকনগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সারাজীবন তিনি কোন অন্যায়ের সাথে আপস করেন নি। ঘোর বাম জমানেতেও তিনি দাপটের সঙ্গে কংগ্রেস দল করেছেন। আর সেটাই হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার কাল। ১৯৯৩ সালের ঘটনা। সেসময় অশোকনগর হাই স্কুলে পরিচালন সমিতির ক্ষমতায় আসে সিপিএম। অচ্যুতানন্দ বাবুকে দিয়ে সিপিএমের টপ লিডাররা অনেক অন্যায় কাজ করানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। কিন্তু সিপিএমের সেই কথা শোনেনি তিনি। এরপর চক্রান্ত করে নানা অপবাদ দিয়ে স্কুল থেকে তাকে বহিষ্কার করে স্কুলের পরিচালন সমিতি সহ তখনকার দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতারা। কিন্তু তাতে অবশ্য দমে যাননি অচ্যুতানন্দ বাবু। বরং আদালতের শরণাপন্ন হন ওই প্রধান শিক্ষক। উচ্চ আদালত অচ্যুতানন্দ বাবুর পক্ষে রায় দিয়ে তার পদে বহাল করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের সেই নির্দেশ মানেনি সেই সময়কার সিপিএম পরিচালিত পরিচালন সমিতি। এরপর সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হন অচ্যুতানন্দ বাবু। সুপ্রিম কোর্টও একই রায় দিয়ে অচ্যুতানন্দ বাবুর সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার কথা বলে। ইতিমধ্যে ১৯৯৯ সালে অবসর নেন অচ্যুতানন্দ বাবু। কিন্তু অবসরের পর কিছুতেই তার প্রাপ্য পেনশন চালু করতে দেননি সিপিএমের তৎকালীন নেতারা। এরমধ্যে ২০১৪ সালে অসুস্থ হয়ে মারা যান অচ্যুতানন্দ বাবু। এরপর অচ্যুতানন্দ বাবুর স্ত্রী মুক্তা বিশ্বাস স্থানীয় বিধায়ক ধিমান রায়ের শরণাপন্ন হন। মূলত তারই উদ্যোগে এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে অবসরের আঠারো বছর পরে চলতি মাসের দুই তারিখে অচ্যুতানন্দ বাবুর বকেয়া পেনশন এবং স্ত্রী হিসাবে মুক্তা দেবীর পেনশন দেওয়ার নির্দেশ এসে পৌঁছল অশোকনগরের বিশ্বাস বাড়িতে। ঘটনাচক্রে সেদিনই ছিল প্রয়াত ওই শিক্ষকের জন্ম দিন। আর তার জন্ম দিনে এমন একটা খবর আসায় তাই স্বভাবতই খুশীর হাওয়া প্রয়াত শিক্ষকের বাড়িতে। তবে এজন্য অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও স্থানীয় বিধায়ক ধিমান রায়ের প্রতি কৃতঞ্জতা প্রকাশ করেছেন মুক্তা দেবী। মুখ্যমন্ত্রী এবং বিধায়ক ধিমান রায়কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। ভাবতেই পারিনি যে স্বামীর পেনশনের টাকাটা পাব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ধিমান রায়ের জন্যই সেটা সম্ভব হয়েছে।(সূত্র: কলম)