শুধু মুখ বাদে পুরো শরীরে ব্যান্ডেজে মোড়ানো। নয়া দিল্লির একটি হাসপাতালে এভাবেই শুয়ে আছেন সুনীতা নামের একটি মেয়ে। তার শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে গিয়েছে। কোনোমতে বেঁচে আছেন তিনি। মৃদুকণ্ঠে হাসপাতালের বিছানা থেকে তিনি বললেন, ' আমি মরতে চেয়েছিলাম। এই যন্ত্রণা কেউ সহ্য করতে পারবে না। এখন আমার সারা শরীর পোড়া। তাই ন্যূনতম কেউ আমাকে আর ধর্ষণ করতে চাইবে না এখন।' বলতে বলতে সুনীতার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের কষ্ট তাকে আত্মহত্যায় প্রলুব্ধ করেছিল। তাই ২৮ এপ্রিল উত্তর প্রদেশে এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে তিনি নিজের গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। কিন্তু মারা যায় নি সুনীতা। আগুনে পোড়ার পর নয়া দিল্লির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
সুনীতা শোনান তার বেদনার কাব্য। বলেন, 'আমার বাবা ও এক ‘আন্ট’ মিলে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিল। যার কাছে বিক্রি করে দেোয়া হয়, সে ও অন্য কয়েকজনে মিলে ধর্ষণ করে আমাকে।' এ অভিযোগ নিয়ে তিনি উত্তর প্রদেশ পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। ২৩ বছর বয়সী সুনীতার জীবনে দুর্দশা নেমে আছে জীবনের প্রথম দিকেই। তিনি মৃদুকণ্ঠে বলেন, 'আমার বয়স যখন মাত্র ১৪ বছর তখন ২০০৯ সালে বাবা আমাকে বিয়ে দেন। আমার স্বামীর বয়স আমার চেয়ে অনেক বেশি। তিনি কয়েক মাসের মধ্যে আমাকে ফেলে চলে যান।' সুনীতার স্বামী তাকে ফেলে যাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তাকে বিক্রি করে দেয় তার পিতা। যাতে তিনি তার স্ত্রীর জন্য জিনিসপত্র কিনতে পারেন। যার কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়, বলা হয়, সে সুনীতার দ্বিতীয় স্বামী। এ সম্পর্কে সুনীতা কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, 'আমার দ্বিতীয় স্বামী ছিল একটা শয়তান। সে ও তার বন্ধুরা মিলে আমাকে বার বার ধর্ষণ করেছে। তারা মনে করেছে আমি বিপদগ্রস্ত। আমার কোনো যাওয়ার জায়গা নেই। কমপক্ষে ২০ জন আমাকে ধর্ষণ করেছে। তারা আমাকে এসিড মারার হুমকিও দিয়েছে।'
ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য তিনি কি পরিমাণ কঠোর চেষ্টা করেছেন। তা ব্যাখা দিয়ে সুনীতা বলেন, 'আমার পিতার কাছ থেকেও না, পুলিশের কাছ থেকেও না, কারোর কাছেই ন্যায়বিচার পাই নি। আমি আলাদা আলাদা অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু সব সময়ই আমাকে বিমুখ করা হয়। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত আমি ঘুরেছি। কোনো এফআইআর নিবন্ধন করা হয় নি। তাই আমি নিরুপায় হয়ে পড়ি এবং আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিই। ' সুনীতার দ্বিতীয় স্বামী তার পিতার বন্ধু। তার সম্পর্কে সুনীতা বলেন, 'সে আমাকে প্রতিদিন নিষ্পিষ্ট করতো। ধর্ষণ করতো। তার বন্ধুদের বাড়ির গৃহকর্ম করে দিতে বাধ্য করাতো। এতটুকু বলতে বলতে সুনীতি কথা হারিয়ে ফেলেন। হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct