একাধিক মনের মানুষের মনে ঠাঁই পেলেই সামাজের চোখ রাঙানি, হাজারো জবাবদিহিতা, চরিত্র নিয়ে কাটাছেঁড়া। সত্যিই কি এটা অন্যায়? একসাথে দুজনকে মনে কি ঠাঁই দেওয়া যায়? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই নিজের অজান্তেই চলে আসে। নানা সমীক্ষা বলছে, বেশির ভাগ মানুষের মনেই ঘাপটি মেরে থাকে অন্য আর একজনের প্রতি টান। সেই টানে কেউ কেউ সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ান, কেউ বা সমাজের ভয়ে ঢোঁক গেলেন ওখানেই। কিন্তু কেন এমন হয়? মনোবিজ্ঞানের মতে, প্রত্যেকটি মানুষই বিভিন্ন পৃথক বৈশিষ্ট্যযুক্ত হন। এক জন মানুষের মধ্যে সবটুকু পছন্দের বৈশিষ্ট্য যে মিলবেই, এমন নয়। তাই ভাল লাগার কোনও গুণ বা স্বভাব থেকে প্রেম বা ভালবাসার অনুভূতি দু’জনের প্রতিই জন্মাতে পারে। পিটুইটারি গ্রন্থি ও ফিল গুড হরমোনরাই এর জন্য দায়ী। জন্মের শুরু থেকেই এক সঙ্গে দু’জনকে অর্থাৎ মা-বাবাকে ভালবাসে মানুষ। কাজেই একসঙ্গে দু’জনকে ভালবাসার ক্ষমতা তার জন্মগত। কিন্তু যখনই সম্পর্ক বা দাম্পত্যের কথা আসে, তখনই আমরা সতর্ক হয়ে যাই। আসলে সমাজ এই সব সম্পর্ককে বাঁধে সামাজিক ও আর্থিক সুবিধা বুঝে। এই সব জটিলতা এড়াতেই সে নিজস্ব কিছু নিয়ম চালু করে ও সেখানে যৌনতাকেও জুড়ে দেয়। তবে মনে রাখা দরকার, সম্পর্ক কিন্তু মোটেও শরীরসর্বস্ব নয়। শরীরে এক জনের হয়ে মনে মনে দু’জনের হয়ে থাকাও যা, মন ও শরীর উভয়েই দু’জনের হয়ে থাকায় কোনও ফারাক নেই।’ এই জটিলতার অন্যতম কারণ আমাদের সমাজ এখনও ভালবাসা ও যৌনতাকে পৃথক ভাবার মতো সাবলীল হতে পারেনি। তাই দু’জনকে ভালবাসার কথায় আঁতকে ওঠে। প্রতিটি ভালবাসাতেই যে যৌনতা থাকবে, তার কোনও মানে নেই। আবার ভালবাসাহীন যৌনতার সম্পর্কও হতে পারে। আবার স্রেফ যৌন ইচ্ছে পূরণের জন্য ভালবাসা তৈরি করতে গিয়েই সমস্যার সুত্রপাত করেন অনেকে। যদিও ভালোবাসার ক্ষেত্রে কোনওটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, কোনওটা কিছুদূর হেঁটেই পথ বদলায়। তাই বুঝে নেওয়া দরকার, কোনটা ক্ষণিকের ভালো লাগা আর কোনটা টিকে থাকার মতো অনুভূতি। তবে দুই সঙ্গীকেই দু’টি সম্পর্কে থাকার কথা জানানোর বুকের পাটা পান না অশান্তি আর সমাজের ভয়েই। তাই বেছে নিতে হয় একজনকে। তৈরি হয় জটিলতা। অতএব মনোবিদদের মতে, সঙ্গী থাকা সত্ত্বেও অন্য একজনকে মনে ঠাঁই দিলে আত্মদংশনে ভোগার কারণ নেই। কোনও সম্পর্কে কোনও প্রতিযোগিতা থাকে না। দায়-দায়িত্বে অবহেলা না করে, নিজের অবস্থান ও সাহস বুঝে তবেই এগিয়ে যান। অন্তত সমাজ ও নিজের অনুভব, এই অসম লড়াই লড়তে পারার মতো শক্তি আছে কি না ভেবেই আগানো উচিত।