মহাকাশের রহস্য নিয়ে রকেট মোটরের সহায়তায় শব্দের চেয়েও চারগুণ দ্রতগতিতে একটি যান নিক্ষেপ করেছিল নাসা। যানটি ১ লাখ ২০ হাজার ফুট উপরে পৌঁছাতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় নিয়েছিল বলেই জানিয়েছে নাসা। শনিবার ১৫ কোটি মার্কিন ডলারের এই পরীক্ষাটি চালানো হয়। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের কাওয়াইয়ের একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে যানটি ওড়ার পর নেমে আসার সময় প্যারাসুটে জট পাকিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে আছড়ে পড়ে।
নাসা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হচ্ছে সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহের অদ্ভুত সুন্দর নানা রূপ। কিন্তু যখন দেখা যায় এই গৃহ উল্টো আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, তখন ভয় পেতে হয় বৈকি। এই বিশাল গ্রহের ১০ হাজার মাইল ব্যাসের 'চোখ'-এর ওপর গ্যানিমিডের ছায়া পড়ে সেই চোখের তারা তৈরি করেছে।দীর্ঘসময় মহাকাশযানে অবস্থানের অভিজ্ঞতাটি কেমন? এ সময়ে মহাকাশের তেজস্ক্রিয়তায় নভোচারীর কি কোনো ক্ষতি হবে? এত সময় ওজনশূন্য পরিবেশে তাদের অবস্থা কেমন হবে? আর একা একা থাকার অনুভূতিটিই বা কেমন?
সম্প্রতি দেখা গেছে, বৃহস্পতি চোখ রাখছে পৃথিবীর ওপর। অন্তত বৃহস্পতির এক সাম্প্রতিক ছবি দেখে তাই মনে হচ্ছে। এপ্রিলের ২১ তারিখে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের তোলা এই ছবিতে মনে হচ্ছে বৃহস্পতির পৃষ্ঠে এক অতিকায় চোখ আর তা নজর রাখছে পৃথিবীর দিকেই। এই 'চোখ' আসলে বৃহস্পতির পৃষ্ঠে চলমান বিশাল এক সাইক্লোন। নাসার মতে, জুপিটারের চাঁদ গ্যানিমিডের ছায়া পড়েছে ঠিক এই সাইক্লোনের মাঝখানে, যার ফলে একে দেখাচ্ছে চোখের মতো।
এসবের উত্তর জানার জন্যই শুরু হচ্ছে নাসার ওয়ান ইয়ার মিশন। আমেরিকান নভোচারী স্কট কেলি এবং রাশিয়ান নভোচারী মিখাইল কর্নিয়েঙ্কো বাইকোনুর কসমোড্রোম থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের দিকে যাত্রা শুরু করবেন। এর চেয়েও বেশি সময় পৃথিবীর বাইরে কাটানোর কৃতিত্ব রয়েছে রাশিয়ান নভোচারী ভ্যালেরি পোলিয়াকভের। তিনি ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি থেকে ১৯৯৫ সালের মার্চ পর্যন্ত টানা প্রায় ৪৩৮ দিন কাটান কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। তবে নাসার সাধারণ ওঝঝ মিশনে নভোচারীরা চার থেকে ছয় মাস পৃথিবীর বাইরে কাটান। এ ক্ষেত্রে বছরখানেকের মতো সময় বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। গবেষকরা দেখেন, বেশি সময় মহাশূন্যে কাটালে দৃষ্টিশক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় পরিবর্তন আসে। শুধু তাই নয়- এতটা সময় ওজনশূন্য পরিবেশে মাসল অ্যাট্রফি এবং বোন লসের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
পরিবর্তনগুলো ঠিকভাবে বোঝার জন্য স্কট কেলির যমজ মার্ক কেলি থাকবেন পৃথিবীতে। তাদের দুজনের স্বাস্থ্যের অবস্থা তুলনা করা হবে রক্ত পরীক্ষা এবং অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক পরীক্ষার সাহায্যে।
মঙ্গলগ্রহের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ বহুদিন থেকেই আর মঙ্গলে নাসার সাম্প্রতিক অভিযান সেই আগ্রহের আগুনে ঘি ঢেলেছে কারণ সেই আগ্রহের কারণেই এবার নাসা পরীক্ষা চালিয়েছে 'ফ্লাইং সসার'-এর প্রতিবেশী এই গ্রহের ভূ প্রকৃতি কেমন, গ্রহটি আদৌ মানুষের বসবাসের উপযোগী কিনা তা নিয়ে বহুদিন থেকেই চলছে জল্পনা-কল্পনা।আর এবার সেই জল্পনার জট খুলতেই সাহায্য করবে নাসার নতুন এই প্রযুক্তি যার সাহায্যে মঙ্গলে সহজে ও নিরাপদে নভোচারীরা অবতরণ করতে পারবেন। নাসার দাবি, তারা এই পরীক্ষা থেকে যে তথ্য পেয়েছেন তা তাদের সামনের দশকেই মঙ্গলে আরো ভারী জিনিস পাঠাতে সাহায্য করবে। নাসার এই পরীক্ষা যানের নাম দেয়া হয়েছিল 'লো ডেনসিটি সুপারসনিক ডিসেলারেটর'।
রকেট মোটরের সহায়তায় শব্দের চেয়েও চারগুণ দ্রম্নতগতিতে যানটি নিক্ষেপ করা হয়েছিল এবং যানটি ১ লাখ ২০ হাজার ফুট ওপরে পৌঁছাতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় নিয়েছিল বলেই জানিয়েছে নাসা। শনিবার ১৫ কোটি মার্কিন ডলারের এই পরীক্ষাটি চালানো হয়। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের কাওয়াইয়ের একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে যানটি ওড়ার পর নেমে আসার সময় প্যারাসুটে জট পাকিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে আছড়ে পড়ে। তবে এটাকে ব্যর্থতা হিসেবে না দেখে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন প্রকৌশলীরা। ভবিষ্যতের পরীক্ষাগুলোয় এটা অনেক সাহায্য করবে বলে মনে করছেন তারা। যানটির 'বস্ন্যাকবক্স' খুঁজতে এরই মধ্যে একটি জাহাজ রওনা হয়েছে। বস্ন্যাকবক্সে এমন কিছু তথ্য আছে, যা বিশ্লেষণ করে দেখতে চান বিজ্ঞানীরা। তাদের ধারণা, এর থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া সম্ভব।
ঠিক কতটা সময় পৃথিবীর বাইরে, মহাকাশে নিরাপদ থাকতে পারেন একজন নভোচারী? এ ব্যাপারটি পরীক্ষা করে দেখতে ৩৫০ দিন অর্থাৎ প্রায় এক বছরের জন্য দুজন নভোচারী মহাকাশে অবস্থান করতে যাচ্ছেন।
আগামী বছর হাওয়াই থেকেই আরো দুটি পরীক্ষামূলক ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার।
প্রায় আট বছর লম্ব্বা ভ্রমণের পর বামনগ্রহ সেরেসে পৌঁছে গেছে নাসার একটি মহাকাশযান। এই প্রথম সেরেসে মহাকাশযান পাঠানো সম্ভব হলো।
এই রোবট মহাকাশযানের নাম হলো ডন। মোটামুটি বছরখানেক ধরে সে সেরেসকে প্রদক্ষিণ করবে, এর পৃষ্ঠ পর্যবেক্ষণ করবে এবং এর রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করবে। নাসার গবেষকরা বলেন, পুরোপুরি পরিকল্পনামতো একেবারে নির্বিঘ্নে সেরেসকে ঘিরে কক্ষপথে ঘুরপাক খাচ্ছে ডন মহাকাশযানটি।
২০০৭ সালে অ্যাস্টেরয়েড বেল্টের উদ্দেশে উৎক্ষেপণ করা হয় একে। এর আগে সে এক বছর কাটায় ভেস্তা গ্রহাণু পর্যবেক্ষণ করে। সেরেস হলো এর দ্বিতীয় এবং শেষ গন্তব্যস্থল। পরবর্তী ১৬ মাস ধরে সে সেরেসের বরফে ঢাকা পৃষ্ঠের ছবি তুলে পাঠাতে থাকবে।
সেরেসে পৌঁছাতে ডন মহাকাশযানকে ৩ বিলিয়ন মাইল পথ পাড়ি দিতে হয়েছে আর তা সম্ভব হয়েছে এর আয়ন প্রোপালশন ইঞ্জিনের দক্ষতার কারণে। এই ইঞ্জিন প্রচলিত থ্রাস্টারের চেয়ে অনেক কার্যকর।
সেরেসের কাছাকাছি পৌঁছাতেই এর পৃষ্ঠের ছবি পাঠাতে শুরু করে দিয়েছে ডন। কিছু বিভ্রান্তিকর ছবি পাওয়া গেছে ইতোমধ্যে। একটি ছবিতে দেখা যায়, বড় একটি গর্তের ভেতরে সাদাটে কিছু ছোপ, যা হতে পারে লবণ অথবা বরফে তৈরি। সেরেসের আরো কাছে গেলে এসব এলাকা আরো স্পষ্ট করে দেখা যাবে। শুধু তাই নয়- অতীতে সেরেসের পৃষ্ঠে পানির ফোয়ারা দেখা গিয়েছিল। এই ঘটনা কী এখনো দেখা যায় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করবে ডন।
বর্তমানে সেরেসের ছায়ায় অবস্থান করছে ডন। এপ্রিলে এর ছায়া থেকে বের হওয়ার পরেই সে নতুন করে ছবি পাঠানো শুরু করবে।
১৮০১ সালে আবিষ্কৃত হওয়া সেরেসের ব্যাস ৬০০ মাইল এবং এর কেন্দ্রটি পাথুরে। রোমান কৃষিকার্যের দেবীর নামে এর নামকরণ করা হয়। প্রথমে একে গ্রহ বলে ধারণা করা হলেও পরে গ্রহাণু হিসেবে একে ধরা হয়। পরবর্তীতে একে বামনগ্রহ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গ্রহদের মতো এর শরীরটাও গোলাকার, তবে এর আশপাশে কাছাকাছি আকৃতির আরো অনেক জ্যোতিষ্ক থাকতে পারে।
ডন মহাকাশযানের সোলার উইং ছড়িয়ে রাখা অবস্থায় এর দৈর্ঘ্য ৬৫ ফিট। এতে রয়েছে ইনফ্রারেড স্পেক্ট্রোমিটার এবং একটি গামা রে ও নিউট্রন ডিটেক্টর যা দিয়ে সে কক্ষপথে থেকে সেরেসকে পর্যবেক্ষণ করবে। প্রদক্ষিণের শুরুতে ডন ছিল সেরেস থেকে ৩৮ হাজার মাইল দূরে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সে এই কক্ষপথ ছোট করতে করতে সেরেসের ২৩৫ মাইলের মাঝে পৌঁছে যাবে এবং মিশন শেষ হওয়ার পরেও সেখানেই থেকে যাবে।
সৌরজগতে যত গ্রহ আছে, সবগুলোর প্রতিই আগ্রহ রয়েছে বিজ্ঞানীদের এবং কোন গ্রহে কী হচ্ছে না হচ্ছে, তা জানার জন্য তারা সবসময়েই উন্মুখ। কিন্তু ভাবুন তো, এবার অন্য কোনো চোখ রাখছে পৃথিবীর ওপরে, তবে কেমন হবে?
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct