সংযুক্ত আরব আমিরাত নতুন এক আইন করেছে, কেউ যদি রমজান মাসে বাড়ির বাইরে কিছু খায় , বা পান করে, তাকে প্রচুর টাকা জরিমানা দিতে হবে এবং এক মাস জেল খাটতে হবে। এ বিষয়ে বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন নিজের মতামত প্রকাশ করে বলেন, 'রোজাদারদের অনেকে মনে করেন, কেউ তাদের সামনে কিছু খেলে বা পান করলে তাদের অসম্মান করা হয়। আমি তো আমার রোজাদার মা’র সামনে পেট পুরে খেতাম, খেয়ে স্বস্তি হয়েছে বলে মা’র ভালো লাগতো। আমাকে কত দিন মুখে তুলে খাইয়ে দিয়েছেন মা। মা’র তো কখনও মনে হয়নি, আমি মা’কে অসম্মান করছি! আমারও তো কখনও মনে হয়নি, আমি রোজা রাখিনি বলে মা আমাকে কিছু কম ভালোবাসছেন। মা রোজা রাখার এবং না- রাখার স্বাধীনতাকে মূল্য দিতেন। আজকালকার ধার্মিকদের মধ্যে এই গুণটির প্রচণ্ড অভাব। অসহিষ্ণুতা আর অরাজকতাকে তারা ধর্মের জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করছে। হাশরের ময়দানে রোজাদাররা আল্লাহর সুনজরে পড়বেন। এ কি যথেষ্ট নয়? রোজাদাররা কেন অরোজাদার এবং অমুসলমানদের কাছ থেকে সম্মান পেতে চান? আর অরোজাদারদের দিকটাই বা দেখি না কেন, নিজেদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে হলেও কেন সম্মান দেখাতে হবে রোজাদারদের? সম্মান তো, যতদূর জানি, পারস্পরিক। তুমি আমাকে সম্মান দিলে আমি তোমাকে সম্মান দেবো। তাই নয় কি? সম্মান কি এতই ঠুনকো, যে, কাউকে খেতে দেখলে বা পান করতে দেখলে ভেঙ্গে যায়? মা বলতেন, কেউ সামনে খাচ্ছে বা পান করছে, দেখেও যদি তুমি নিজের খাওয়া বা পান করার ইচ্ছে সংবরণ করতে পারো, তাহলে তোমার রোজা আরও পোক্ত হবে। এভাবে কি আজকাল কেউ আর ভাবে না? যারা রোজা রাখতে চায় তাদের অধিকার আছে রোজা রাখার। যারা রোজা রাখতে চায় না, তাদেরও অধিকার থাকা উচিত রোজা না রাখার। প্রতিটি মানুষেরই অধিকার আছে ধার্মিক হওয়ার, অধিকার আছে ধার্মিক না হওয়ার। সারা পৃথিবীতেই দেখি ধর্মকর্ম করার সব রকম অধিকার মানুষের আছে। শুধু তাই নয়, ধর্মে যাদের অবিশ্বাস, তাদের নিন্দে করার অধিকারও ধার্মিকদের আছে। কিন্তু অবিশ্বাসীদের কোনও অধিকার নেই ধর্মবিশ্বাসীদের নিন্দে করার। নিন্দে করলে অপদস্থ হতে হয়, মামলায় ফাঁসতে হয়, জেল খাটতে হয়, নির্বাসনে যেতে হয়, খুন হয়ে যেতে হয়।ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। যার ধর্ম পালন করতে ইচ্ছে করে, সে করবে পালন। যার পালন করার ইচ্ছে নেই, সে করবে না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct