বারাসতে পশ্চিম ইছাপুর নবপল্লির মসজিদটাই ধ্যানজ্ঞান বোসবাড়ির ছেলের। ওই এলাকায় ২০-২৫ বিঘা জমি রয়েছে বসুপরিবারের। কর্তা দীপক বসু এই ৬৭ বছরেও রোজ সকাল-বিকেল মসজিদে হাজির হওয়া চাই। সকাল সাতটায় নিজের হাতে মসজিদের মেঝে ঝাড়পোঁছ করলে, তবেই শান্তি। এই বয়সে নিজে রোজা রাখতে পারেন না। কিন্তু তাঁর পুত্র পার্থ ওরফে ‘বাপ্পা’র ফাঁকির জো নেই। রমজানে আজও নিয়মিত রোজা রাখেন ভারতের বারাসতের অদূরে দাঙ্গার শিকার এক হিন্দু পরিবার। মাথায় রুমাল বেঁধে মসজিদের ছাদটায় রোজাদারদের কাতারে ইফতারে বসলেন পার্থ। চল্লিশের যুবাকে ঠাট্টা করতে ছাড়ে না বন্ধুরা। মজা করে ডাকে, ‘মহম্মদ’ পার্থসারথি বসু। তাতে তাঁর বয়ে গিয়েছে। দিনভর উপবাস শেষে আল্লাহকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে আজান আওয়াজ শুনে খেজুরটা-কলাটা মুখে দিয়ে ইফতার করেন তিনি।মুসলিম বন্ধু-বান্ধব, পরিজনরা কীভাবে সারা দিন জলস্পর্শ না-করে আছে? আর আমি কী করে খাই? এই ভাবনা থেকে কয়েক বছর হল পার্থও রোজা রাখতে শুরু করেছেন। স্বামীর ভাবনাকে মর্যাদা দিতে ভোরের সেহেরির আগে চা-রুটি করে দিতে রাত দুটোয় ঘুম থেকে উঠছেন পার্থর স্ত্রী পাপিয়া। মসজিদের পাশ থেকে যেতে যেতে অনেক অমুসলিমরা কপালে হাত ঠেকান। অনেকে বাদাম গাছটার বাঁধানো বেদিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিয়ে যান। ইফতারের আগে রাস্তার কল থেকে জল ভরে দেওয়াতেও হাত লাগান কেউ কেউ। পাশেই আবার ঠাকুর গড়ছেন পটুয়া নিশি পাল। পড়ে থাকা কাঠামোয় খড় লেপে আর কিছু দিন বাদেই শুরু হবে মা-দুগ্গা গড়ার কাজ। নিত্যকার জুম্মার জমায়েত, মসজিদের ছাদের ইফতার, রমজানের তারাবির নামাজ বা কোরান-পাঠে তাতে কখনও সমস্যা হয়নি তাদের।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct