কোন বোমার কারখানা হতে দেব না। আর্মস রিকভারি করতে হবে। দিল্লী থেকে লোক এসে উসকে দেবে। আর গায়ের জোড়ে তরোয়াল ঘুরিয়ে অশান্তি করবে তা হতে দেব না। স্পষ্ট করে লাভপুর বা নানুরের নাম না করলেও, জেলায় বোমাবাজি রুখতে পুলিশের ভূমিকায় নিজের অপ্রসন্নতা প্রকট করলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, জেলায় বিজেপির অস্ত্র মিছিলের জেরে অশান্তি হলে পুলিশ পার পাবে না তা ঠারে ঠারে বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার বোলপুরের গীতাঞ্জলী প্রেক্ষাগৃহে গোটা পশ্চিমবঙ্গ সরকার তুলে নিয়ে এসছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, এবং সমস্ত বিভাগের সচিব এবং অতিরিক্ত সচিবেরা। উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক, সভাধিপতি, জেলা পুলিশ সুপার সহ পুলিশের বড় কর্তারা।
কেতুগ্রাম বিধায়ক শেখ শাহনাওয়াজকে ধমক দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কাজল গ্রামেই আছে, আমি জানি। শাহনাওয়াজ ভাইকে বলে দাও, ওকে পুলিশ খুঁজছে। সমস্যা করলে হবে না। জানি, ও গ্রামেই আছে। শুরুতেই সিউড়ি হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রী আড়িকে কড়া ধমক দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, মুরারই এবং রামপুরহাট হাসপাতালে রোগী মৃত্যু নিয়ে অভিযোগ তাঁর কানে আসে, বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। তাঁর উত্তরে হিমাদ্রীবাবু, জানান, যে শিশুগুলি এসেছিল, তাদের অবস্থা ভাল ছিল না। আর তারা প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকে আসা। যদিও গোটা ব্যাপারটা সামজিক দায়িত্ব থেকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি, প্রতিবেশী রাজ্যের রোগীদের নাম ও ঠিকানা আলাদাভাবে লিখে রাখার কথা বলে, ক্যাম্প করে পুলিশকেও আরো কড়াভাবে হাসপাতাল ভাঙচুর রোখার নির্দেশ দেন তিনি। বাইরের রোগীর পরিবার এসে পরিষেবা নেবে, আর দামি দামি যন্ত্র ভাঙবে, তা মেনে নেব না। যদিও, মুরারই হাসপাতাল এবং রামপুরহাট হাসপাতালের ক্ষেত্রে একই যুক্তি দেন হিমাদ্রীবাবু। সাঁইথিয়া গ্রামীন হাসপাতাল ওভার লোডেড হওয়ার জন্য তাকে একশ বেডের স্টেট জেনারেল হাসপাতাল করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অন লাইনে হেলথ রেগ্যুলেটারি কমিশনে অভিযোগ জানানো কথা বলেন স্বাস্থ্য সচিব। বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী প্রয়োজনে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে নজর রাখার কথা বলেন। জেলার ৫০০ একর ক্যানেল কেন বুজে গেল তার কৈফিয়ত চান জেলার সেচ দপ্তরকে? কি করেন ? ২০১৫ সালে আপনি এসেছেন, এতদিন কি করছিলেন? আমতা আমতা করে কেন্দ্রের ঘারে দোষ চাপাতে গেলে, মুখ্যমন্ত্রী বলেন ওটা আমি জানি। আপনি কি করেছেন? কি করে হবে , আমি জানি না। আপনাকে ওটা করতে হবে। বন্যা হলে কি হবে ভেবেছেন? চেক ড্যাম গুলো ঠিক রাখতে হবে। খাদ্যসাথী, কন্যাশ্রী-১ এবং ২এর প্রশংসা করলেও, একশ দিনের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। সিউড়িতে ১৭, রামপুরহাট- ১৮, দুবরাজপুরে-১৮, মুহাম্মদবাজারে-১৯, নানুরে ১৮, সাইঁইথিয়ায় ১৮.৫ এবং নলহাটিতে ২০ দিবস কাজের হিসেব পেয়ে অসন্তুষ্ট হন তিনি। এই দিবসকে ৫০ থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত বাড়ানোর নির্দেশ বিডিওদের দেন তিনি। একইভাবে খ্য়রাসোল,ময়ুরেশ্বর, লাভপুর বিডিওদের নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি, ২৪ হাজার পুকুর কাটা হলেও, মাত্র ২,৭০০ পুকুরে কেন মাছ চাষ হয়েছে তার কৈফিয়ত চান তিনি। লোভোল্টেজের জন্য নলহাটি-১, ২, মুহাম্মদবাজার, নানুর, মুরারইয়ে বাসিন্দাদের কষ্ট লাঘবের জন্য বিভাগীয় দপ্তরকে নির্দেশ দেন তিনি। এপর্যন্ত সাড়ে ছলাখ সাইকেল বিলি হয়েছে জেনে খুসি হলেও, টার্গেট পূর্ন করার জন্য সাইকেল প্রস্তুত আছেন কিনা খোঁজ নেন তিনি। প্রতিটি কিষান মাণ্ডিতে ইনফরমেশন ফিড ব্যাক সেন্টার গড়ে চারজন করে কর্মী নিয়োগের নির্দেশ দেন তিনি। অজয় নদীর উপর ইলামবাজারে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে তিন লেন সেতু তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে বলে বলে বিভাগীয় দপ্তর সূত্রে জানানো হয়। পাশাপাশি, ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভেদিয়া-তালিত সেতু, জাতীয় সড়ক ৬০ এর উপর বোলপুর- বর্ধমান রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়। জেলা পরিষদের অধীন ১৫০ কিমি রাস্তা তৈরী করবে পূর্ত দপ্তর। তারাপীঠ- রামপুরহাট পর্ষদের সৌন্দ্যর্যায়নের কাজ কতটা হয়েছে জানতে চান তিনি। জেলার পর্যটনকেন্দ্র নিয়ে সার্কিট ট্যুরিজমের কাজ কতটা এগোল জানতে চান মন্ত্রী। সিয়ান হাসপাতালের সামনে রাঙা বিতানের মডেলে ১৬১ একর জায়গার উপর বাউল বিতান গড়ে ২০-২২টি কটেজ তৈরীর নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি, জেলাশাসককে নোডাল অফিসার করে ইলামবাজারের ফরেস্টে একইভাবে ২০-২২টি কটেজ গড়ার নির্দেস দেন তিনি। স্থানীয় বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি, পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সমস্যার কথা শোনেন তিনি। জেলার রাইস মিলের সংখ্যা মোটের উপর আরো ১০টি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয় এদিন। বোলপুরের কাছে আইটি কমপ্লেক্সের সামনে ১০ একর জায়গায় বাসটার্মিনাসের কাজ কতদূর এগিয়েছে তাঁর খোঁজ নেন তিনি। খ্য়রাসোলে ৮ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জল প্রকল্পের পাশাপাশি, ১৮০ কোটি ব্যয়ে জেলায় মোট ১৭ টি প্রজেক্টের কাজ এগোচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রীকে জানান বিভাগীয় সচিব। পাশাপাশি, খরাপ্রবনএলাকা হিসেবে মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার সাথে খয়রাসোল, রাজনগর এবং রামপুরহাট -১কে জুড়ে পাইলট প্রজেক্টের নির্দেশ দেন তিনি। এদিন পাইকর-মুরারই-২ ব্লকের মুসলিম অধ্যুষিত কাশিম নগরে একটি বিদ্যালয় এবং তারাপীঠের সাহাপুরে একটি বালিকা বিদ্যালয়, ময়ূরেশ্বরের লোক পাড়ায় একটি বালিকা বিদ্যালয় গড়ার নির্দেশ দেন শিক্ষা সচিবকে। সব শেষে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন সহ মোট ৫৬ টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct