জয় থেকে ৭৭ রান দূরে রাজস্থান রয়্যালস। ১৩তম ওভারের শেষ বল করতে যাচ্ছিলেন দল নায়ক রবিচন্দ্রন অশ্বিন। বল করতে গিয়ে দেখলেন, উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে রয়েছেন প্রতিপক্ষ দলের নন স্ট্রাইকে থাকা ব্যাটসম্যান জশ বাটলার। বল না করে অশ্বিন স্টাম্প ভেঙে দিলেন। হতভম্ব বাটলারের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে আম্পায়ার–তৃতীয় আম্পায়ারের সহযোগিতা চাইলেন। আউট! আর এতেই জমে উঠল বিতর্ক। ‘মানকাড়’ আউট ইদানীং আর খুব একটা বিরল দৃশ্য নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনূর্ধ্ব-১৯ দল ২০১৬ বিশ্বকাপেই এমন কাণ্ড করেছিল। সেবার যে কারণে আলোচনা হয়েছিল, এবারও সে কারণেই আলোচনা। সাধারণত, এভাবে কাউকে আউট করার আগে ব্যাটসম্যানকে সতর্ক করে দেওয়ার ভদ্রতা দেখানো হয়। কিন্তু অশ্বিন প্রথমবারেই এ কাজ করেছেন। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, বাটলার যে রান নেওয়ার জন্য উইকেট ছেড়ে বেরিয়েছিলেন, তা–ও নয়। মানকাড় আউটের ক্ষেত্রে যে যুক্তি ব্যবহার করা হয়, সেটা হলো ব্যাটসম্যান আগে বের হয়ে রান নেওয়ার ক্ষেত্রে অবৈধ সুবিধা নেন। কিন্তু অশ্বিন বল ছোড়ার ভঙ্গি করার সময়ও বাটলার ক্রিজে ছিলেন। অশ্বিন হঠাৎ করে থেমে যান, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর স্টাম্প ভেঙেছেন। সেদিকে বাটলারের নজর দেওয়া সম্ভব হয়নি। বাটলার এ ক্ষেত্রে স্বভাবজাত ভঙ্গিতে বোলারের ফলোথ্রু অনুসরণ করছিলেন। ফলে, অবচেতনভাবে দাগ থেকে বের হয়ে গিয়েছিল তাঁর ব্যাট। এক্ষেত্রে আম্পায়ারের করার কিছু থাকে না। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থে ও ভদ্রতার খেলা বলে ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে আনলে আলাদা কথা। কিন্তু অশ্বিন নিজেই যে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের অধিনায়ক। ক্ষুব্ধ বাটলার প্রশ্ন ছুড়ে দিলেও অশ্বিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভদ্রতা কিংবা ক্রিকেটীয় চেতনা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই তাঁর। ফ্র্যাঞ্চাইজি তাঁকে অধিনায়ক বানিয়েছে দল জেতানোর জন্য। জস বাটলারকে অন্য কোনো উপায়ে হয়তো আউট করতে পারত না পাঞ্জাব। প্রথম ইনিংসে ক্রিস গেইলের ৪৭ বলের ৭৯ রানের ঝড়ও যে ভুলিয়ে দিচ্ছিলেন বাটলার। গেইল ও সরফরাজ খানের (৪৬) সুবাদে ১৮৪ রান তোলা পাঞ্জাব তখন পরাজয়ের ক্ষণ গুনছিল। কারণ, অজিঙ্কা রাহানেকে (২৭) নিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ৭৮ রান এনে দিয়েছেন বাটলার, সেটাও মাত্র ৮ ওভারেই। ম্যাচটা বাটলার নিজেই শেষ করে আসার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু অশ্বিনের ওই কাণ্ডে তা আর হলো না। ৪৩ বলে ৬৯ রানে ফিরতে হলো বাটলারকে। শেষ পযন্ত পাঞ্জাব ম্যাচটি জিতল, তবে অশ্বিনের এমন কাণ্ডে ক্রিকেটের মুখ পুড়লো, তা বলা যেতেই পারে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct