অভিভাবক ও স্কুলের শিক্ষকমণ্ডলীর সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন, যেন শিশুর কাঁধ থেকে বইয়ের বোঝা সরে এবং শিশুরা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে বেড়ে ওঠে। আমরা যদি শিশুদের বইয়ের ভার কমানোর চেষ্টা না করি তাহলে তার উপর যে মানসিক চাপ পড়বে তা বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। ইতিমধ্যে মনোবিদরা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হোম টাস্কের জোর আর বেইয়ের ভার দুটোই শিশুদের কাছে অসহ্য হয়ে উঠলে তাদের ভবিষ্যৎ কিন্তু অনিশ্চিতের দিকে এগিয়ে যাবে। এই বাস্তব সত্যটা আমার না বুঝলে তা হবে সামগ্রিকভাবে সমাজেরই ক্ষতি। শুধু আমাদেরকে ভাবলে চলবে না, ভাবতে হবে সমাজবিদ থেকে শুরু করে সরকারকেও। এ নিয়ে লিখেছেন তোফাজ্জল বিন আমীন।
সকালে বের হলেই সচরাচর শিশুর কাঁধে বইয়ের বোঝার দৃশ্য চোখে পড়ে। শিশুরা বইয়ের ভারে মাথা নুয়ে হাঁটছে, বাবা-মা আঙুল ধরে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বইয়ের ব্যাগ শিশুর কাঁধ থেকে সরছে না। অল্প বয়সেই তারা পিঠের ব্যথায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছে। অথচ বইয়ের বোঝা তাদের শারীরিক ও মানসিক গঠনকে দুর্বল করে দিচ্ছে। সরকারি স্কুলগুলোতে বাড়তি বইয়ের বোঝা না থাকলেও কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে বাড়তি বইয়ের চাপে শিশুরা দিশেহারা।অভিযোেউঠছে, প্রতিষ্ঠানে বইয়ের বোঝার অসুস্থ প্রতিযোগিতার বলি হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। ভারী ব্যাগ কাঁধে নিয়ে যাওয়া-আসায় শিশুরা মেরুদণ্ডের সমস্যায় ভুগছে। শিশুর সাফল্যের কথা বিবেচনা করে অভিভাবক কিংবা শিক্ষকমণ্ডলী হয়তো বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন না। অথচ এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের ভাষ্য হচ্ছে- শিশুদের শরীরের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি ভার বহন করলে তাদের পিঠ ও পায়ে ব্যথা হতে পারে, তারা বামন বা খর্বাকৃতির হয়ে যেতে পারে, হতে পারে আর্থ্রাইটিস ও অস্টিওপোরোসিসের মতো জটিল রোগ। সুতরাং এসব সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে হলে শিশুর ব্যাগের বোঝা কমাতে হবে।শিক্ষার উদ্দেশ্য বাণিজ্য কিংবা অর্থ উপার্জন নয়; বরং একটি জ্ঞানসমৃদ্ধ জাতি গঠন করা। কিন্তু আমরা সে জাতি গঠনে ব্যর্থ হচ্ছি। ফলে আগামী দিনের জাতি গড়ার কারিগরদের কাঁধ থেকে বইয়ের বোঝা কমেনি; বরং বেড়েই চলেছে। বইয়ের ভারে তাদের মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
যিদিও শিশুদের কাঁধে বইয়ের বোঝা কমানোর উদ্যোগ চলছে। শ্রেণী অনুসারে বইয়ের সংখ্যা নির্ধারণ ও শ্রেণিকক্ষ বইহীন করার জন্য পরীক্ষামূলক প্রকল্প চালু হচ্ছে। ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং আ এননিইআরটি এক সুপারিশে বলেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশুদের কাঁধে স্কুলব্যাগে মাত্র দু’টি পাঠ্যবই দেয়া যাবে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিশুদের স্কুলব্যাগে তিনটি বই দেওয়া যাবে। শিশুদের স্কুলব্যাগে এর চেয়ে বেশি বই দেয়া হলে স্কুল ও অভিভাবক দু’পক্ষকেই জরিমানা এবং নোটিশ পাঠানোর বিধান রাখা হচ্ছে। স্কুলগুলোতে সভ্যতার ফুল ফোটানোর কথা; কিন্তু সভ্যতার ফুল ফোটানোর আগেই আমাদের শিশুরা বইয়ের ভারে অঙ্কুরে বিনাশ হয়ে যাচ্ছে। স্কুলগুলোতে বই আর খাতার প্রতিযোগিতা চলে। কে কত বেশি বই সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। বই, খাতা, কলম, জলের বোতল, খাবারসহ প্রত্যেক শিশুকে একটি বিশাল ব্যাগ বহন করতে হয়। একেকটি ব্যাগের ওজন প্রায় শিশুর ওজনের কাছাকাছি। তাই আমাদের সন্তানদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য বই-খাতার চাপ কমানো জরুরি। শিশুর কাঁধে বইয়ের বোঝা কমানোর জন্য সরকার, অভিভাবক ও স্কুলের শিক্ষকমণ্ডলীর সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন, যেন শিশুর কাঁধ থেকে বইয়ের বোঝা সরে এবং শিশুরা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে বেড়ে ওঠে। আমরা যদি শিশুদের বইয়ের ভার কমানোর চেষ্টা না করি তাহলে তার উপর যে মানসিক চাপ পড়বে তা বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। ইতিমধ্যে মনোবিদরা এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হোম টাস্কের জের আর বইয়ের ভার দুটোই শিশুদের কাছে অসহ্য হয়ে উঠলে তাদের ভবিষ্যৎ কিন্তু অনিশ্চিতের দিকে এগিয়ে যাবে। এই বাস্তব সত্যটা আমার না বুঝলে তা হবে সামগ্রিকভাবে সমাজেরই ক্ষতি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct